বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে মাশরাফি বিন মর্তুজা, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালের নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ পাঁচ তারকাকে অনেকেই ‘পঞ্চপাণ্ডব’ নামে ডাকেন। একসময় বাংলাদেশের ক্রিকেট ধুঁকে ধুঁকে চলছিল। কালেভদ্রে জয়ের দেখা পেত। সে দলটাকে সেরাদের কাতারে তুলে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এ পঞ্চপাণ্ডব।
পাঁচ তারকার মধ্যে দুজন এরই মধ্যে ক্রিকেট মাঠ থেকে বেশ দূরে চলে গেছেন। মাশরাফি শেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০২০ সালে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, এটাই অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির শেষ ম্যাচ। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেটকে বিদায় জানানো হয়নি মাশরাফির। ২০০৯ সালের পর আর টেস্ট খেলেননি। টি-২০ খেলেননি ২০১৭ সালের পর। তামিম ইকবালও অনেকটা অজান্তেই অবসরে চলে গেলেন! একবার বিদায় বলেছিলেন। ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন আবার। তবে সেই ফিরে আসা আর হয়নি। গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর থেকেই মাঠের বাইরে তামিম ইকবাল। আবার মাঠে ফিরবেন, সে আশা ক্ষীণ। বিশেষ করে গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের দলে না থাকায় তামিম বেশ অভিমান করে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন। সেসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। সাকিব আল হাসানের বিদায়টাও নানা প্রশ্নে বিদ্ধ হয়ে থাকল। টি-২০ বিশ্বকাপটাই ছিল সংক্ষিপ্ত সংস্করণে তার শেষ। এবার টেস্টকেও বিদায় বলে দিয়েছেন। আগামী বছর পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলে ওয়ানডেকেও বিদায় জানাতে চান তিনি। টেস্টে খেলতে চেয়েছিলেন ঘরের মাঠে। বিসিবি নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় সাকিবের সে আশা সম্ভবত অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। পঞ্চপাণ্ডবের তিনজনের বিদায়টাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকল। বাকি রইলেন দুজন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। কী আছে তাদের ভাগ্যে!
মুশফিকুর রহিম টি-২০ ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ২০২২ সালে। সে বছর টি-২০ বিশ্বকাপের এক মাস আগে বিদায় বলে দেন মুশফিক। ২০০৬ সালে শুরু করা টি-২০ ক্যারিয়ার শেষ করেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। এখনো ওয়ানডে এবং টেস্ট ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের নাম অপরিহার্য। তবে কতদিন টিকে থাকবেন তিনি বলা কঠিন। তার বিদায়টাই বা কী রকম হবে তা-ও আগে থেকে আন্দাজ করা যায় না। পঞ্চপাণ্ডবের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাকে নিয়েও কম আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। অনেকেই বুড়ো বলে টিপ্পনী কাটেন। কিন্তু ব্যাট হাতে এখনো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ। খেলার মাঠে নিজেকে বারবারই প্রমাণ করেন। টেস্ট ক্রিকেট থেকে মাহমুদুল্লাহর বিদায়টা ভালোভাবেই হয়েছিল। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫০ রান করে দলকে জিতিয়েছিলেন তিনি। সে ম্যাচেই অবসরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মাহমুদুল্লাহ। সতীর্থদের কাছ থেকে ‘গার্ড অব অনারও’ পেয়েছিলেন। তবে টি-২০ আর ওয়ানডেকে এখনো তিনি বিদায় বলেননি। মাঝেমধ্যেই তাকে দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। দল থেকে বাদও পড়েছিলেন মাঝখানে। আবার ফিরেছেন পারফরম্যান্স দেখিয়ে। মাহমুদুল্লাহর বিদায়টাও কীভাবে হবে বলা মুশকিল। পঞ্চপাণ্ডব বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আলাদা এক স্থানে থাকবেন। তাদের বাদ দিয়ে এ দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অগ্রযাত্রার কথা কেউ লিখতে পারবেন না। তবে তাদের বিদায়টা একে একে বাজে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই হয়ে যাচ্ছে!