বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন ফুটবলার তৈরির কাজটি কেউ কখনো করেনি। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে কিছু প্রতিভার সন্ধান মিলত এই যা। শেষ পর্যন্ত ফুটবলার তৈরির কাজে এগিয়ে এসেছে দেশের জনপ্রিয় করপোরেট ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। দলটির লক্ষ্য শুধু নিজেদের সাফল্য নয়, দেশের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করা। বিশ্বনন্দিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের আগমন যেমন বিকেএসপি থেকে ঘটেছিল, তেমন তারকা ফুটবলার হাসান আল মামুন, মাসুদ রানা, জাহিদ হোসেন, মামুনুল ইসলামদের পরিচয় বিকেএসপি থেকেই। একটা দেশে ফুটবল উন্নয়নে পাইপলাইন থাকতে হবে। তা না হলে নতুন খেলোয়াড়ের দেখা মিলবে না। ইউরোপের শুধু ফেডারেশন নয়, ক্লাবগুলোতেও নতুনদের সন্ধানে একাডেমি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, আয়াস্ক বা বায়ার্ন মিউনিখের নাম উল্লেখ করার মতো। বার্সেলোনা ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচি তো বিশ্বব্যাপী। লিওনেল মেসি ও এখনকার লামিন ইয়ামাল উঠে এসেছেন বার্সার একাডেমি থেকেই। ওয়েন রুনিও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ছোট ক্যাম্প থেকে তৈরি। বাংলাদেশের ফুটবলের যে জনপ্রিয়তা ছিল তাতে অনেক আগেই একাডেমি গড়া যেত। ঘুরেফিরে ১৯৭০, ’৮০ ও ’৯০-এর দশকের খেলোয়াড়দের নাম বলা হয়। আগে ফুটবলের মান যা-ই থাকুক না কেন, ছিল ফুটবলারের ছড়াছড়ি। পাইপলাইন না থাকায় ফুটবলার সংকট এখন চরমে। এতটা খারাপ অবস্থা যে, সামনে জাতীয় দলে ১১ জন খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে ফুটবলপ্রেমীরা শঙ্কিত। বসুন্ধরা কিংস পেশাদার লিগে অভিষেকের পরই কাজটি শুরু করেছিল। ভালোভাবেই প্রশিক্ষণ চলছিল কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তা থেমে যায়। যাক, বসুন্ধরা কিংস দমে যায়নি। আজই শুরু হচ্ছে নতুনদের সন্ধানে পথচলা। পেশাদার লিগের সব রেকর্ড তাদের দখলে। যারা দেশের ফুটবলের কিং তারা কি শুধু নিজেদের সাফল্য নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারে? তাদের চিন্তাভাবনা যে কীভাবে ফুটবলের উন্নয়ন ও হারানো জোয়ার ফেরানো যায়। ঘরোয়া ফুটবলে অধিকাংশ আসরে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
কিংস অ্যারিনা শুধু কিংসের ভেন্যু নয়, জাতীয় দলের আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোও এখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর প্রশিক্ষণ তো কিংস অ্যারিনা ছাড়া চলেই না।
ফুটবল উন্নয়নে চোখ ফেলে রেখেছে কিংস। আজই শুরু হচ্ছে ক্লাবটির নতুন ফুটবলার তৈরির কর্মসূচি। বিকাল সাড়ে ৩টায় কিংস অ্যারিনা প্রশিক্ষণ মাঠে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বাফুফের সহসভাপতি ও ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসান। প্রশিক্ষণের প্রধান সমন্বয়ক বায়েজিদ আলম জোবায়ের নিপু জানান, প্রথম দিন খেলোয়াড়দের পরিচিতি ও জার্সি প্রদান করা হবে। শনিবার শুরু হবে প্রশিক্ষণ। ৬-১১ (বালক-বালিকা), ১১-১৫, ১৫-১৮ বয়সভিত্তিক তিন গ্রুপে প্রশিক্ষণ দেবেন কিংসের পেশাদার কোচিং স্টাফরা।
এখানে সহযোগিতা করবেন কিংসের হেড কোচ রোমানিয়ার ভ্যালেরি তিতা। ইমরুল হাসান আগেই বলেছিলেন, ‘এখনই এটিকে পূর্ণাঙ্গ একাডেমি বলছি না অনাবাসিকভাবে শুরু করায়। ভবিষ্যতে ডরমেটরিও হবে। কিংসের ক্লাব ভবনের কাজ শেষ হওয়ার পর তা আবাসিক করার পাশাপাশি বাইরের কোনো একাডেমির সঙ্গে চুক্তি করে সেখানকার কোচদের আনার পরিকল্পনা রয়েছে।’