অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পার হয়ে তিনে পড়ল। এই অল্প দিনে ক্রীড়াঙ্গনে কিছু পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন ক্রীড়ামন্ত্রীর দেখা মিলেছে। ক্রীড়া উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা ঘিরে তারা শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গেছেন। বাস্তবে আর দেখা মেলেনি। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ আমলে প্রথমবার প্রতিমন্ত্রীর বদলে ক্রীড়াঙ্গনের ফুল মিনিস্টার হন নাজমুল হাসান পাপন। পূর্ণ মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর তিনি বেশিদিন দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ক্রীড়ামন্ত্রী পাপনও গা ঢাকা দেন। পরে অবশ্য জানা যায় তিনি দেশের বাইরে চলে গেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ক্রীড়াঙ্গনে অনিয়ম বা লুটপাট নতুন কোনো ঘটনা নয়। বলা যায় স্বাধীনতার পর থেকেই তা বিরাজ করছে। গত ১৬ বছরে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার আমলে ক্রীড়াঙ্গন যেন লুটপাটের পাহাড়ে পরিণত হয়। বড় বা ছোট ফেডারেশন, অলিম্পিক সংস্থা এমনকি ক্রীড়া অভিভাবক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়। লুটপাটও স্বাভাবিক ঘটনা পরিণত হয়েছিল। নির্বাচনের মাধ্যমে ফেডারেশনগুলোর নির্বাহী কমিটি গঠন হলেও তাকে সিলেকশনই বলা যায়। সভাপতি থেকে শুরু করে সব পদই আগেই নির্ধারিত হয়ে যেত। ক্রীড়ার নির্বাচন অথচ এখানেও ভোট কিনতে কোটি কোটি টাকা উড়াতে দেখা গেছে প্রার্থীদের। অনিয়ম আর বিতর্কে ভরপুর ছিল সব ফেডারেশন নির্বাচন।
এত অনিয়ম আর দুর্নীতির ছড়াছড়ি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল একজন তরুণ ক্রীড়া উপদেষ্টার পক্ষে এগুলো চিহ্নিত বা স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে প্রাথমিক পর্যায়েও যে পদক্ষেপ দরকার আসিফ তা পারবেন কি না। সত্যি বলতে কি ক্রীড়াঙ্গনে দীর্ঘ সময় ধরে যে অনিয়মের আবর্জনা জমে আছে, তা মাত্র দুই মাসে পরিষ্কার করাটা অকল্পনীয় বলা যায়। আসিফ মাহমুদ এ স্বল্প সময়ে যে কাজ করেছেন তা অতীতে কোনো ক্রীড়া অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কখনো কী কোনো ক্রীড়ামন্ত্রী স্টেডিয়ামের দোকানে ছুটে জানতে চেয়েছেন ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা ভাড়ার নামে এখানে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন কি না? আসিফই প্রথম ছুটে যান এবং পরিদর্শন করে বুঝতে সক্ষম হন পুকুর নয় এখানে সমুদ্র চুরি হয়েছে।
আসিফের মতো অন্য মন্ত্রীরাও তো পদাধিকার বলে ক্রীড়া পরিষদের সভাপতি ছিলেন। তাদের কখনো সন্দেহ হয়নি এখানে নয়ছয় ঘটছে? জানতেন ঠিকই তবে নীরব থাকতেন। কেননা অভিযোগ আছে দোকান ঘিরে মন্ত্রীরাও পকেট ভারী করেছেন। ক্রীড়া উপদেষ্টা এসবে প্রমাণ পাওয়ায় ক্রীড়া পরিষদে রদবদলও ঘটিয়েছেন। তারপর আবার স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে আসিফ প্রথম ক্রীড়াঙ্গনে সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। যদিও এ কমিটি ঘিরে কোনো কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এসব শোনার পর ক্রীড়া উপদেষ্টা নিজেই শক্ত হাতে হাল ধরেছেন।
যে সংস্থা নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে বিতর্কের শেষ নেই। সেই সুবিধাবাদী সংগঠকদের সংগঠন জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কমিটি বিলুপ্ত ঘটিয়েছেন। একযোগে ৪২ সভাপতিকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ক্রিকেট বোর্ডে রদবদল ঘটান। বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন পদত্যাগ না করলেও ক্রীড়া উপদেষ্টার শক্ত মনোভাবের কারণে টানা ১৬ বছর বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর সালাউদ্দিন ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি আর নির্বাচন করবেন না। এমন স্বৈরাচারের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার ঘোষণা অবশ্যই বড় ঘটনা। দুই মাসে আসিফ বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন উদ্যোগ নিলে অবশ্যই ক্রীড়াঙ্গনে অনিয়মের কবর দেওয়া যায়। সামনে তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে ক্রীড়ামোদিরা।