নাজমুলদের এবার উৎসব করা হলো না ঐতিহাসিক দিল্লির অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। উৎসবমুখর পরিবেশে মাঠ ছাড়তে পারল না টাইগাররা। লাল দুর্গের শহর, কুতুব মিনারের শহর দিল্লিতে গত নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে আনন্দে মেতেছিলেন নাজমুলরা। পাঁচ বছর আগে এ মাঠে স্বাগতিক ভারতকে দেশটির মাটিতে প্রথমবারের মতো হারিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাস সমৃদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ। গতকাল এ দুটি সুখস্মৃতি নিয়ে নেমেছিল নাজমুল বাহিনী। কিন্তু টি-২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের কাছে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং-তিন বিভাগেই হেরেছে অসহায়ভাবে। হেরেছে ৮৬ রানের বড় ব্যবধানে। গোয়ালিয়রের পর দিল্লিতে হেরেছে। এক ম্যাচ হাতে রেখে তিন ম্যাচ টি-২০ সিরিজে হেরেছে টাইগাররা। ১২ অক্টোবর হায়দরাবাদে আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ খেলবেন নাজমুলরা। হারের পর টাইগার অধিনায়ক নাজমুল শান্ত বলেন, ‘দল বারবার একই ভুল করছে, আবারও একই ভুল করেছি। একটি দল হিসেবে যা ঠিক নয়। টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত ভালো ছিল। প্রথম ৬-৭ ওভার আমরা ভালো বোলিং করেছি। কিন্তু পরে আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারিনি। শুরুর পর আরও ১-২টি উইকেট নেওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু আমরা পারিনি। একজন ব্যাটারের আরও দায়িত্বশীল ব্যাটিং করা উচিত। দীর্ঘ সময়ের জন্য উইকেটে থাকাটা জরুরি।’
গোয়ালিয়রে ৬ উইকেটে হারের পর সিরিজে ফিরতে দিল্লিতে জয়ের বিকল্প ছিল না টাইগারদের। যদিও সিরিজে ফেরার ম্যাচে একাদশে কোনো পরিবর্তন আনেনি। অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে খেলেছে দুই দল। অরুণ জেটলির উইকেটে বল থেমে আসে-এ ধারণায় টস জিতে টাইগার অধিনায়ক কালবিলম্ব করেননি বোলারদের হাতে বল তুলে দিতে। ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে ৪১ রানের মধ্যে টাইগার পেসাররা তুলে নেন স্বাগতিকদের ৩ উইকেট। মনে হয়েছিল ম্যাচে কিছু একটা হতে পারে! হচ্ছিলও। যদি না নবম ওভারের পঞ্চম বলে রিভিউর পর আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যেতেন ম্যাচসেরা নীতীশ কুমার রেড্ডি। ৪১ রানে তৃতীয় উইকেটের পতনের পর নীতীশ জুটি গড়েন রিংকু সিংকে নিয়ে। জীবন পেয়ে নীতীশ চড়াও হন টাইগার বোলারদের ওপর। তিনি ও রিংকু চতুর্থ উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৪৮ বলে ১০৮ রান। দুজনের জোড়া হাফসেঞ্চুরিতে ২০ ওভারে ভারত সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ২২১ রান; যা বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের সর্বোচ্চ দলগত স্কোর। চলতি বছরের টি-২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নর্থ সাউন্ডে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৬ রান করেছিল ভারত। ম্যাচসেরা নীতীশ জীবন পেয়ে ৭৪ রানের ইনিংস খেলেন ৩৪ বলে ৪ চার ও ৭ ছক্কায়। রিংকু ৫৩ রান করেন ২৯ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায়। স্বাগতিক ব্যাটারের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়েও দুর্দান্ত বোলিং করেন তাসকিন আহমেদ। ২ স্পেলে বোলিং করেন ডান হাতি ফাস্ট বোলার। স্পেল ৪-০-১৬-২। চমক দেখান লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। শেষ ওভারে ১ ছক্কায় ৮ রানের খরচে নেন প্রতিপক্ষের ৩ উইকেট। যদিও হ্যাটট্রিক ছিল না। রিশাদের স্পেল ৪-০-৫৫-৩। ডান হাতি ফাস্ট বোলার তানজিদ সাকিব গতির ঝড় তুললেও খরুচে ছিলেন। তার স্পেল ৪-০-৫০-২। ওপেনার অভিষেক শর্মাকে বোল্ড করেন ১৪৭.২ কিলোমিটার গতিতে বল ছুড়ে। মুস্তাফিজুর রহমানের স্পেল ৪-০-৩৬-২। টাইগার বোলাররা সব মিলিয়ে ছক্কা খেয়েছেন ১৫টি এবং চার ১৭টি। ডট বল নিয়েছেন ৩৭টি।
টার্গেট ২২২ রান। আকাশছোঁয়া। ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন প্রথম ওভারে তুলে নেন ৩ চারে ১৪ রান। তখন মনে হয়েছিল জমাটি লড়াই হবে। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, ব্যাটারদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছে নাজমুল বাহিনী। স্বাগতিক বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়াই করতে পারেননি। বর্ষীয়ান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যা একটু লড়াই করেছেন। ৩৯ বলে ৩ ছক্কায় ৪১ রান করেন। এ ছাড়া ইমন ১৬, লিটন দাস ১ ছক্কায় ১৪, নাজমুল ১১ ও মেহেদি মিরাজ ১৬ রান করেন। সূর্যকুমার বাহিনী এতটাই নির্ভার বোলিং করে যে, দলের মূল স্ট্রাইক বোলার হার্দিক পান্ডিয়া বোলিংই করেননি। স্বাগতিকদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৫ রান।