রাজধানী দিল্লির মতোই ঐতিহাসিক শহর হায়দরাবাদ। দক্ষিণ ভারতের গোলকুন্ডা দুর্গ, চার মিনারের হায়দরাবাদকে নিজামের শহরও বলা হয়। এই শহরটির ঐতিহাসিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। আরেক নাম ফতেহ ময়দান। নামকরণ করা হয়েছিল মোগল সাম্রাজ্যের জন্য। শহরটির বিখ্যাত তিন ক্রিকেটার-নবাব মনসুর আলী খান পাতৌদি, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ও ভিভিএস লক্ষ্মণ। পাতৌদি, আজহারউদ্দিন ও লক্ষ্মণের শহরেই এখন ঘাঁটি গেড়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানরা। ঐতিহাসিক শহরটিতে অবস্থানের একটাই কারণ, ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। আজকের ম্যাচটি আবার বিশেষ কিছু সাবেক অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর। এই ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাচ্ছেন সাবেক অধিনায়ক। তাই ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইছেন মাহমুদুল্লাহ। মাহমুদুল্লাহর বিদায়ী ম্যাচটি জিতে দেশে ফিরতে চাইছে নাজমুল বাহিনী।
হায়দরাবাদ বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বিশেষ কিছু। পরিচিত শহরও। এখানে টাইগাররা ওয়ানডে খেলেছে এবং প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে টেস্টও খেলেছে। ১৯৮৬ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। ওয়াডেতে প্রথম জয় তারও এক যুগ বা ১২ বছর পর ১৯৯৮ সালে। ভারতের মাটিতে তিন জাতির টুর্নামেন্টে কেনিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটে। জয়ের নায়ক ছিলেন বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ রফিক। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ওপেনার হিসেবে খেলতে নেমেই বাজিমাত করেন রফিক। কেনিয়ার ২৩৬ রান টপকাতে ৪ উইকেট হারিয়েছিল টাইগাররা। রফিক-আতহার আলি ১৩৭ রানের জুটি গড়েছিলেন। আতহার ৪৭ রান করেন। রফিক ৭৭ রান করেছিলেন ৮৭ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায়। বোলিংয়েও ৩ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার। ওয়ানডে জিতেছিল লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে। ২০১৭ সালের টেস্ট খেলেছিল রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ভারতের কাছে টেস্ট হেরেছিল ২০৮ রানে। ওই টেস্টে খেলেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। প্রথম ইনিংসে সাবেক অধিনায়ক করেছিলেন ২৮ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে দলের সর্বোচ্চ ৬২ রান করেছিলেন তিনি। এই মাঠেই শেষ আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ খেলবেন আজ। পারবে কী রাঙাতে?
মাহমুদুল্লাহ ওয়ানডে খেলছেন। গত বছর নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপে টাইগারদের সেরা পারফরমার ছিলেন তিনি। মুম্বাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চরম বিপর্যয়ে ১১১ বলে ১১১ রান করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। এখনো ওয়ানডে খেলছেন ৩৮ বছর বয়সি মাহমুদুল্লাহ। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে ৮ জাতির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার ইচ্ছা রয়েছে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে। মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলে সাদা পোশাক ও লাল বলের পোশাককে বিদায় জানানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ক্যারিয়ারে ৫০ টেস্ট মাহমুদুল্লাহ সাদা পোশাক ও লাল বলকে বিদায় জানিয়েছেন ২০২১ সালের জুলাইয়ে। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫০ রানের হার না মানা ইনিংসটি খেলেছিলেন দলের চরম বিপর্যয়ে। টি-২০ ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন আগে থেকেই। কিন্তু টেস্টের অবসর কেউ জানত না। টেস্ট চলাকালীন হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। টেস্ট চলাকালীন হঠাৎ সকালে ব্যাটিংয়ে নামার সময়ে তাকে গার্ড অব অনার দেয় সতীর্থরা। এরপর পরিষ্কার হয়ে ওঠে তার টেস্টকে বিদায়ের বিষয়টি। আজ শেষ টি-২০ ম্যাচ। আজও কী তাকে কোনো রকম আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেবে বিসিবি? বোলিং কোচ নিক পোথাস এ প্রসঙ্গে মিডিয়াকে বলেন, ‘দুঃখিত, এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’ দিল্লিতে শেষ টি-২০ ম্যাচে ৩৯ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলে দলের মান রক্ষা করেন মাহমুদুল্লাহ।
গোয়ালিয়রে ৬ উইকেটে হারের পর দিল্লিতে ৮৬ রানে হার। আজ শেষ টি-২০ ম্যাচ হায়দরাবাদে। গতকাল বৃষ্টি হয়েছে হায়দরাবাদে। রাজীব গান্ধী ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পুরো মাঠ ঢাকা ছিল কাভারে। আজও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি? ফিল্ডিং কোচ বলেন, ‘আমরা ভারত সফরে এসে প্রতিনিয়ত শিখছি।’ শেখার কি শেষ হবে রাজীব গান্ধী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে?
বাংলাদেশ-ভারত শেষ টি-২০ ম্যাচ আজ (রিয়াদের টি-২০ ক্যারিয়ার)
টি-২০ রান গড় সর্বোচ্চ ১০০/৫০
১৪০ ২৪৩৬ ২৩.৬৫ ৬৪* ০/৮