দুয়ারে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচন। ২৬ অক্টোবর ভোটযুদ্ধ। এরই মাধ্যমে নতুন কমিটির দেখা মিলবে। ফুটবলের নির্বাচনে ফুটবলার থাকবে না তা কী হয়? যখন নির্বাচন হতো না তখনো কমিটিতে জায়গা পেতেন ফুটবলাররা। এ ক্ষেত্রে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ব্যক্তিক্রম। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানের তারকা এ ফুটবলার আশির দশকে বাফুফের অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কয়েক বছর পর হাফিজ সভাপতি পদেও বসেন। হাফিজই একমাত্র ফুটবলার বাফুফের শীর্ষ বড় দুই পদে বসেছিলেন। কাজী সালাউদ্দিন বাফুফে যে নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তা অবৈধভাবে গঠন হওয়ায় ফিফা বাংলাদেশের ফুটবলকে নিষিদ্ধ করে। পরে আবার নির্বাচিত কমিটির সদস্যও হন। সুতরাং হুট করে তিনিও সভাপতি হননি।
সালাউদ্দিনকে অনেকে আওয়ামী লীগের ঘরোনা লোক বলেই চেনেন ও জানেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও আবাহনীতে দীর্ঘ সময় খেলায় তা অনেকে মনে করেন। অথচ সালাউদ্দিন ফুটবল ফেডারেশনের কমিটিতে আসেন বিএনপির চারদলীয় জোট সরকার আমলে। ওই সময়ে বিএনপির সংসদ সদস্য পরিচিত ক্রীড়া সংগঠন এস এ সুলতানের অনুরোধে সদস্য হন। ২০০৮ সালে প্রথমবার যখন সভাপতি পদে নির্বাচন করেন তখনো বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে প্রার্থী হন। এরপর অবশ্য আওয়ামী সমর্থিত প্যানেল থেকেই নির্বাচন করেন। চার মেয়াদ অর্থাৎ টানা ১৬ বছর বাফুফের সভাপতি। যা শেষ হবে ২৬ অক্টোবর। সালাউদ্দিন সভাপতি হওয়ার পর ফুটবল ঘিরে নতুন আশা জেগেছিল। তার মতো ফুটবল জ্ঞানী লোক মেধা খাটিয়ে দেশের ফুটবলে উন্নয়ন বা পরিবর্তন ঘটাবেন সে আশা অনেকেরই ছিল। অথচ ১৬ বছর দায়িত্বে থেকে নিরাশা ছাড়া কিছুই দিতে পারেননি। মান একেবারে তলানিতে। মহিলা ফুটবলে উন্নয়ন ঘটেছে। তবে একটা দেশের ফুটবল বলতে তো পুরুষ জাতীয় দলকে বোঝায়। সেই জাতীয় দলে কোনোভাবেই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।
ফুটবলের মান তো গেছেই সালাউদ্দিন সভাপতি হওয়ার পর ফুটবলে বিতর্কের ছড়াছড়ি। অর্থ কেলেঙ্কারী এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, ফিফা ফেডারেশনের বেতনভুক্ত সাধারণ সম্পাদককে নিষিদ্ধও করে। অর্থ কেলেঙ্কারীর কারণে সিনিয়র সভাপতিকে জরিমানা করা হয়। যা দেশের ফুটবলের জন্য বড় লজ্জা। সালাউদ্দিন দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে বাফুফের কমিটিতে পেয়েছিলেন সালাম মুর্শেদী, বাদল রায়, শেখ মো. আসলাম, খোরশেদ আলম বাবুল, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, আরিফ খান জয়, তাবিথ আউয়াল, সত্যজিত দাশ রুপুদের মতো তারকা ফুটবলারদের। যাদের ফুটবলার এক্সপার্ট বলা হয়। তারা কমিটিতে থেকেও ফুটবলে কোনো উন্নয়ন ঘটাতে পারেননি। অধিকাংশই ছিলেন বিতর্কে বন্দি। এমনও শোনা যায়, কোনো কমিটির দায়িত্ব পেয়ে সাবেক ফুটবলার কোটি টাকা লোপাট করেন। এভাবে ১৬ বছর দেশের ফুটবলে চরম অবনতি ঘটেছে। উন্নয়নের পরিকল্পনা দিতেই ব্যর্থ। যারা চেষ্টা করেছিলেন তাদের আবার কাজ করতে দেওয়া হয়নি এমন অভিযোগও আছে। ১৬ বছরে নতুন কোনো ফুটবলারের দেখা মেলেনি। ফুটবলারদের হাতে ফুটবল গিয়ে উন্নয়নের বদলে শনিরদশা নেমে এসেছে। নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভরিয়ে দিলেও চেয়ারে বসে সবই শূন্য। এসব কারণে দর্শকরাও ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তবে সালাউদ্দিনের চতুর্থ মেয়াদে পরিবর্তন কিছু লক্ষ্য করা গেছে। তা ফুটবলারদের মাধ্যমে নয়। নতুনভাবে কমিটিতে আসা সহসভাপতি ইমরুল হাসানের মেধা ও পরিশ্রমে ঘরোয়া আসরে স্বস্তি নামতে শুরু করেছে। যিনি কাজ জানেন তাকে আর শেখাতে হয় না। গুণ থাকতে হয়। অল্প দিন হলেও ইমরুল নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন তাকে তুলনা করা হয় ৬০, ৭০, ৮০ দশকের নিবেদিত সংগঠকদের সঙ্গে।
হাফিজ উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ফুটবলে যে উন্নতি ঘটেছিল তাও বলা যাবে না। তবে জনপ্রিয়তা ঠিকই তুঙ্গে ছিল। প্রখ্যাত ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, ছাইদ হাছান কাননও ফেডারেশনে ছিলেন। তাদের কর্মকাণ্ড চোখে পড়ার মতো ছিল না। ফুটবলাররা ফুটবল উন্নয়নে কেন কাজে লাগে না? এ ব্যাপারে সাবেক ফুটবলার ও বিশ্লেষক গোলাম সারোয়ার টিপু বলেন, ‘ফুটবলার ও সংগঠক এক নয়। তারপর ফুটবলারদের মাধ্যমেই ফুটবলে উন্নয়ন ঘটানো যায়। কিন্তু আমাদের ফেডারেশনে যারা বসেন তারা কাজের চেয়ে কথা বেশি বলেন বলেই হাহাকারটা বেশি।’ যাক অতীত অতীতই। আসছে বাফুফে নির্বাচন ২১ পদে ৫০ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে সভাপতি, সহসভাপতি ও সদস্য পদে বেশ কজন ফুটবলার আছেন। নতুন কমিটির মাধ্যমে নতুনত্ব আসে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।