২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০৯:১৭

লঙ্কাবধ করে ফাইনাল নিশ্চিত করল বাংলাদেশ

মেজবাহ্-উল-হক

লঙ্কাবধ করে ফাইনাল নিশ্চিত করল বাংলাদেশ

প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে ঢুকে পড়েন চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। উইকেট পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন নিবিড়ভাবে। বোঝার চেষ্টা করেন রহস্য! কিছুদিন আগেও যে উইকেট তার কথা মতো আচরণ করত, সেই উইকেটই কিনা এখন তার বড় অচেনা!

সিরিজ শুরুর আগে কত কথাই না বাতাসে উড়ে বেড়াল- হাতুরা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দুর্বলতা সম্পর্কে জানেন। এখানকার উইকেটের আচরণ নাকি তার মুখস্থ! কিন্তু সেই হাতুরাই কিনা পর পর দুই ম্যাচে তাদের বোলারদের সঠিক নির্দেশনা দিতে পারেননি।

গতকাল হাতুরার শিষ্যদের পিটিয়ে রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচেও লঙ্কান বোলারদের পিটিয়েছেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জিম্বাবুয়ে করেছিল ২৯০ রান। আর টাইগাররা করেছে ৩২০। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড এটি বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের দলীয় পঞ্চম সর্বোচ্চ রানের স্কোর। আর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। গত বছর ডাম্বুলায় লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ৩২৪ রান করেছিল বাংলাদেশ। টাইগারদের সর্বোচ্চ রানের স্কোরটি ৩২৯ রানের, এই মিরপুরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। মাশরাফিদের ব্যাটিংয়ে শেষের ৫ ওভারে ৪ উইকেট না পড়লে হয়তো নতুন রেকর্ড হয়ে যেত কালই।

বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাতুরার সম্পর্কটা ভালো ছিল না মোটেও। গুঞ্জন আছে, পদত্যাগপত্রে নাকি সিনিয়রদের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছিলেন টাইগারদের সাবেক কোচ। তাই হাতুরার ওপর একটা ক্ষোভ ছিল সাকিব-মাশরাফিদের। সুযোগ পেয়ে কাল প্রথম দেখাতেই ঝাল মিটিয়ে নিলেন সিনিয়ররা।হাফ সেঞ্চুরি করলেন তিন সিনিয়র তামিম, সাকিব ও মুশফিক। মাহমুদুল্লাহও দাপটের সঙ্গে ব্যাটিং করেছেন। আর বল হাতে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন মাশরাফি। বলে যেমন দেখিয়েছেন কিপটেমি, তেমনি লঙ্কানদের টপ অর্ডার দুই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠিয়ে দলের জয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তবে নড়াইল এক্সপ্রেসের আসল ক্যারিশমা ছিল তার নেতৃত্বে। শুরুতেই নাসিরকে এনে উইকেট তুলে নিয়ে হাতুরার ব্যাটিং পরিকল্পনাকে ভেস্তে দিয়েছেন। বাংলাদেশ দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের আগুনেই পুড়ে ছাই হয়ে গেল হাতুরার শ্রীলঙ্কা।

বরাবরের মতো গতকালও তামিমের ব্যাটে ছিল রানের ফাল্গুধারা। ২০১৭ সালে যেখানে শেষ করেছিলেন নতুন বছরে শুরু করেছেন আরও ওপর থেকে। গত বছর ড্যাসিং ওপেনারের রানের গড় ছিল ৬৫। আর এ বছর দুই ম্যাচে তামিমের গড় ১৬৮! আগের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৮৪, কাল কাকতালীয়ভাবে সেই ৮৪-তেই আউট হয়েছেন। কালকের ম্যাচে অনেক বেশি সতর্ক হয়ে ব্যাটিং করেছেন তিনি। ব্যাটিং করেছেন উইকেটের মেজাজ বুঝে। শুরুতে উইকেট কম হারানোয় শেষের দকে দ্রুত রান তোলা সহজ হয়ে যায়। তামিমের ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ের কারণে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। দেশসেরা ওপেনার ১০২ বলে খেলেছেন ৮৪ রানের ইনিংস। স্ট্রাইকরেট ৮২.৩৫! তার ইনিংসে সাতটি বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল দুটি বিশাল ছক্কা। সাকিব শুরু থেকেই ছিলেন মারমুখী। যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন প্রতিপক্ষের বোলারদের খুব একটা ডট বল করার সুযোগ দেননি। দু-দুটি হাফ সেঞ্চুরি জুটিতে নেতৃত্ব নিয়েছেন তিনি। তামিমের সঙ্গে ৯৯ রানের জুটির পর মুশফিকের সঙ্গে করেছেন ৫৭ রান। গতকাল একটি মাইলফলক স্পর্শ করেছেন সাকিব। তামিমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরমেটে ১০ হাজার রান করেছেন। পর পর দুই ম্যাচে রান করে ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বর পজিশনে নিজের জায়গাটাও পাকা করে ফেললেন সাকিব। বল হাতেও স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। পর পর দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগও তৈরি করেছিলেন।

মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরিটি ছিল দেখার মতো। ৫২ বলে খেলেছেন ৬২ রানের ইনিংস। লঙ্কান পেসার থিসারা পেরেরার বলে লং অন দিয়ে হাঁকানো ছক্কাটি ছিল অসাধারণ। শেষ দিকে রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আউট হতে হয়েছে মুশফিককে।

এনামুল হক বিজয়ের ৩৫ রানের ইনিংসটিও প্রশংসার দাবিদার। ওপেনিংয়ে তামিমকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে রানের গতিও সচল রেখেছিলেন। তবে উইকেট সেট হয়ে যাওয়ার পরও বড় ইনিংস খেলতে না পারায় আক্ষেপ থাকতে পারে টাইগার ওপেনারের মনে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খেলেছেন ২৩ বলে ২৪ রানের ইনিংস। নুয়ান প্রদীপের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে ব্যাট চালিয়ে ছিলেন। বল অনেক ওপরে উঠে যায়, দুর্দান্ত ক্যাচ নেন পেরেরা। সাব্বির রহমানের ১২ বলে অপরাজিত ২৪ রানের সাইক্লোন ইনিংসটির কথা আলাদা করেই বলতে হবে। শেষ ওভারের শেষ তিন বল থেকেই নিয়েছেন ১৪ রান। চার-ছক্কা-চার-সাব্বির তার অগ্নিমূর্তি দেখিয়েছেন।

সিনিয়রদের সঙ্গে কাল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জুনিয়ররাও  দেখিয়েছেন দাপট। বল হাতে শুরুতেই নাসিরের ব্রেক থ্রু  এনে দেওয়া, তারপর রুবেল-মুস্তাফিজের দাপট। কাল সম্মিলিত প্রয়াসেই লঙ্কাবধ করেছে বাংলাদেশ।

টুর্নামেন্টের তিন ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের সর্বমোট পয়েন্ট দশ। এক ম্যাচ জিতে জিম্বাবুয়ের পয়েন্ট চার। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট ০।
প্রত্যেক দলের ম্যাচ বাকি দুটি। দুটি ম্যাচেই যদি বাংলাদেশ পরাজিত হয় তবে বাংলাদেশের পয়েন্ট থাকবে ১০। জিম্বাবুয়ে দুটি ম্যাচ বোনাস পয়েন্ট সহ জিতলে তাদের পয়েন্ট ১৪। বোনাস পয়েন্ট ছাড়া জিতলে ১২ এবং একটিতে বোনাস পয়েন্ট জিতলে ১৩ পয়েন্ট হবে জিম্বাবুয়ের। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে ফাইনাল খেলবে তারা। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা যদি দুই ম্যাচ বোনাস পয়েন্ট সহ জিতে তবে তাদের পয়েন্ট হবে ১০। বোনাস পয়েন্ট ছাড়া জিতলে ৮ এবং একটিতে বোনাস পয়েন্ট সহ জিতলে ৯। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের পয়েন্ট বাংলাদেশের বেশি হবে না। তাই দুই ম্যাচ বড় ব্যবধানে জিতে ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলল মাশরাফিরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর