তিন বলের মধ্যে রোমাঞ্চের কত দোলাচলই না হয়ে গেল! চারিথ আসালাঙ্কার অফ স্পিনে চার মেরে স্কোর সমান করলেন শিভাম দুবে। পরের বলটা তার প্যাডে আঘাত করে কিপারকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল পেছনে। এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দিলেন না আম্পায়ার। দুই ব্যাটসম্যান প্রান্ত বদল করে ফেললেন, মোহাম্মদ সিরাজের মুখে ‘জয়ের’ হাসিও দেখা গেল। তবে শেষ নয় সেখানেই। শ্রীলঙ্কা নিল রিভিউ, পাল্টে গেল আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত।
পরের বল উড়িয়ে মারার চেষ্টায় পারলেন না শেষ ব্যাটসম্যান আর্শদিপ সিং, বল প্যাডে আঘাত করতেই এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার। উল্লাসে মেতে উঠলেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। আর্শদিপ রিভিউ নিলেও লাভ হলো না। হারের মুখ থেকে ম্যাচ ‘টাই’ করতে পারল শ্রীলঙ্কা। প্রথম ওয়ানডেতে শুক্রবার (০২ আগস্ট) কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার ২৩০ রানের জবাবে ভারত থামে ২৩০ রানেই, ৪৭.৫ ওভারে।।
প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটে ১০১ রানে ৫ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা লড়াইয়ের পুঁজি পায় দুনিথ ওয়েলালাগের ব্যাটে। বাঁহাতি এই স্পিনার সাত নম্বরে নেমে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে ৬৫ বলে খেলেন অপরাজিত ৬৭ রানের ইনিংস। যেখানে ৭টি চারের পাশে ছক্কা ২টি। তার আগে ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কার ব্যাট থেকে আসে ৭৫ বলে ৫৬ রান।
জবাবে অধিনায়ক রোহিত শর্মার ঝড়ো ফিফটিতে ভালো শুরুর পর একটা সময়ে ১৩২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। তবে ষষ্ঠ উইকেটে লোকেশ রাহুল ও আকসার প্যাটেলের পঞ্চাশোর্ধ জুটি আর দুবের শেষের নৈপুণ্যে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় ভারত। কিন্তু শেষের নাটকীয়তায় তাদের মুঠো থেকে বেরিয়ে গেল জয়। এই মাঠে ১৪৯ ওয়ানডেতে প্রথম ‘টাই’ ম্যাচ এটি। ওয়ানডে নেতৃত্বের অভিষেকে আসালাঙ্কা নেন ৩ উইকেট। লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার প্রাপ্তিও ৩টি। ব্যাট হাতে দারুণ ইনিংসের পর হাত ঘুরিয়ে ৩৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা অবশ্য ওয়েলালাগে।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই আভিশকা ফার্নান্দোকে হারায় শ্রীলঙ্কা। থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি কুসাল মেন্ডিস (৩১ বলে ১৪)। ভালো করতে পারেননি সাদিরা সামারাউইক্রামা ও অধিনায়ক আসালাঙ্কাও। এক প্রান্ত আগলে রেখে ৬৭ বলে ফিফটি করেন নিসাঙ্কা। এরপর বেশিদুর যেতে পারেননি তিনি। ১০১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকেই লড়াই শুরু ওয়েলালাগের। মিডল-লোয়ার অর্ডারে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন জানিথ লিয়ানাগে, হাসারাঙ্গা ও আকিলা দানাঞ্জয়া। লিয়ানাগের (২০) সঙ্গে ৪১, হাসারাঙ্গার (২৪) সঙ্গে ৩৬ ও দানাঞ্জয়ার (১৭) সঙ্গে ৪৬ রানের কার্যকর তিনটি জুটিতে দলের স্কোর দুইশ ছাড়িয়ে নিয়ে যান ওয়েলালাগে।
লক্ষ্য তাড়ায় রোহিতের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় ভারত। পাওয়ার প্লেতে ভারত করে বিনা উইকেটে ৭১ রান। রোহিত ফিফটি করেন ৩৩ বলে। ধুঁকতে থাকা শুবমান গিলের (৩৫ বলে ১৬) বিদায়ে ভাঙে ৭৫ রানের শুরুর জুটি। এরপর দ্রুতই আরও দুই উইকেট হারায় ভারত। ওয়েলালাগে পরপর দুই ওভারে গিল ও রোহিতকে ফেরানোর পর ওয়াশিংটনকে বিদায় করে দেন আরেক স্পিনার দানাঞ্জয়া। ৭ চার ও ৩ ছক্কায় গড়া রোহিতের ৪৭ বলে ৫৮ রানের ইনিংস।
চতুর্থ উইকেটে ৪৩ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ার। যদিও দুজনই বিদায় নেন পরপর দুই ওভারে। কোহলি ৩২ বলে ২৪, শ্রেয়াস ২৩ বলে করেন ২৩ রান। সেই ধাক্কা সামলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন রাহুল ও আকসার। এরপরই আবার জোড়া ধাক্কা। পরপর দুই ওভারে ফিরে যান দুই থিতু ব্যাটসম্যান। রাহুল করেন ৪৩ বলে ৩১, আকসার ৫৭ বলে ৩৩। ৩ উইকেট হাতে নিয়ে ভারতের দরকার তখন ৫৫ বলে ৩৪ রান। কুলদিপ ইয়াদাভকে বোল্ড করে শ্রীলঙ্কা শিবিরে ফের আশার সঞ্চার করেন হাসারাঙ্গা। তখনও ভারতের প্রয়োজন ৩৩ বলে ২০ রান।
সিরাজকে সঙ্গে নিয়ে দলকে প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিলেন দুবে। কিন্তু খুব কাছে গিয়েও পারলেন না তিনি। সেই ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল দুবের। সাড়ে চার বছরের বেশি সময় পর তিনি খেললেন এই সংস্করণে দ্বিতীয় ম্যাচ। তবে ২৪ বলে ২ ছক্কা ও এক চারে গড়া ২৫ রানের ইনিংসটি রইল আক্ষেপ হয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৩০/৮ (নিসাঙ্কা ৫৬, আভিশকা ১, মেন্ডিস ১৪, সামারাউইক্রামা ৮, আসালাঙ্কা ১৪, লিয়ানাগে ২০, ওয়েলালাগে ৬৭*, হাসারাঙ্গা ২৪, দানাঞ্জয়া ১৭, শিরাজ ১*; সিরাজ ৮-২-৩৬-১, আর্শদিপ ৮-০-৪৭-২, আকসার ১০-০-৩৩-২, দুবে ৪-০-১৯-১, কুলদিপ ১০-০-৩৩-১, ওয়াশিংটন ৯-১-৪৬-১, গিল ১-০-১৪-০)
ভারত: ৪৭.৫ ওভারে ২৩০ (রোহিত ৫৮, গিল ১৬, কোহলি ২৪, ওয়াশিংটন ৫, শ্রেয়াস ২৩, রাহুল ৩১, আকসার ৩৩, দুবে ২৫, কুলদিপ ২, সিরাজ ৫, আর্শদিপ ০; আসিথা ৬-১-৩৪-১, শিরাজ ৪-০-২৫-০, ওয়েলালাগে ৯-১-৩৯-২, দানাঞ্জয়া ১০-০-৪০-১, হাসারাঙ্গা ১০-০-৫৮-৩, আসালাঙ্কা ৮.৫-০-৩০-৩)
ফল: ম্যাচ টাই
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ০-০ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: দুনিথ ওয়েলালাগে
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ