৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০৯:৫৮

ভালবাসা দিবসে প্রকাশ্য চুমুর ইভেন্ট নিয়ে বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভালবাসা দিবসে প্রকাশ্য চুমুর ইভেন্ট নিয়ে বিতর্ক

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি 'প্রকাশ্য চুমু' খাওয়ার সমর্থনে ফেসবুকে খোলা একটি ইভেন্ট নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। জার্মানিতে অবস্থানরত ওই দুই প্রবাসী 'ব্লগার' সম্প্রতি 'ভালোবাসা দিবসে পুলিশি পাহারায় প্রকাশ্যে চুমু খাব' নামে ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খুলেছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিষয়টিকে কেউ কেউ স্বাধীনতা বলে সমর্থন জানিয়েছেন, কেউ আবার অপসংস্কৃতির এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন। কেউ আবার মন্তব্য করেছেন, 'কিছুদিন পর স্বাধীনতার কথা বলে রাস্তা-ঘাটে সেক্স করার দাবি তোলা হবে।'

এদিকে প্রিয়জনকে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার জন্য এদিন পুলিশি নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন ওই ইভেন্টের হোস্ট অনন্য আজাদ এবং শাম্মী হক। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।

অনন্য আজাদ এবং শাম্মী হকের আহ্বান করা ওই ইভেন্টটিতে লেখা হয়, ''ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে নাকি কড়া পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভারতে নাকি প্রকাশ্যে চুমু খেলে পুলিশ গ্রেফতারও করবে। প্রতিবছরই এই দিনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পুলিশ বিভিন্ন রকম হয়রানি করে। ধানমণ্ডি লেকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাত ধরে হাঁটাও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। এর প্রতিবাদে সকল জুটিকে স্ব স্ব প্রেমিক প্রেমিকাকে প্রকাশ্যে চুমু খাবার আহ্বান জানানো হচ্ছে।''

এই আহ্বানের কারণে শাম্মী হককে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে বিদেশি এক সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, তার ওই ইভেন্ট নিয়ে ফেসবুকে শুরু হয়েছে বিতর্কযুদ্ধ।

সরকার মোহাম্মদ জারিফ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ''প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার আন্দোলনে আমি নাই। প্রতিবাদের ভাষার আগে চুমুকে মাংস পেরিয়ে প্রেমের ভাষা হতে হয়। সেটা আমাদের এখানে হয় নাই। এটা তাই একটা হুজুর ক্ষেপানো সুডোবিপ্লবী কাজ হবে শুধু।''

তিনি বলেন, ''প্রেমিক জুটিদের শারীরিক চাহিদার বয়ান বিদেশি কালচার মুখস্থ করা... প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার মতো পরিস্থিতি আসতে আরো অনেকগুলা ধাপ মাঝখানে বাকি রয়ে গেছে। ...এই ধরণের মুখস্থ লিবারেল জাম্প দিয়ে খুব বেশি এগোনো যাবে না।''

হাসান এম জয় লিখেছেন, ''পুলিশ রা কারে চুম্মা দিবো? শাম্মি তো দেশে নাই!''

জান্নাতুন নাঈম প্রীতি নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ''আমার একান্ত একটা শখ আছে, খুব কাছের মানুষ ছাড়া কেউ জানে না। সেটা হলো চুমুর ছবি সংগ্রহ করা। ব্যক্তিগত একটা অ্যালবাম আছে, যেটার নাম কিস। সেখানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তের ছবি হলো এটা! কেননা এখানে শুধু ভালোবাসা নয়, প্রতিবাদের ভাষাও চুমু!''

ইমাম হাসান নামে একজন পোস্ট করা ছবিতে লিখেছেন, সাবধান বোনেরা! ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবসে অতিরিক্ত ভালবাসা খেয়ে বদহজম হয়ে বমি বমি ভাব যেন না হয়।

মোহাম্মদ সুমন নামের একজন ওই ইভেন্টের ব্যাপারে সোমবার রাতে 'আপনি কি এই ইভেন্ট সমর্থন করেন?' লিখে ভোটাভুটির আয়োজন করেছেন ফেসবুকেই। সেখানে ৯ ঘন্টায় ভোট দিয়েছেন ২৭৩ জন। ২২৮ জন ইভেন্টটিকে সমর্থন করেননি। ৪৫ জন সমর্থন করেছেন।

ইকারাম উদ্দিন আবির নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই ইভেন্ট সম্পর্কে লিখেছেন, ''এক দল ইভেন্ট খুলে 'ভালোবাসা দিবসে প্রকাশ্যে চুমু খাব'... আরেক দল ইভেন্ট খুলে 'ভালোবাসা দিবসে চুম্মাচাট্টি করতে দেখলেই ধোলাই'... ব্যাপারটা মোটেই ফাইজলামি না! যারা ইভেন্ট খুলেছে তারা সবাই খুব সিরিয়াস! কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে এগুলার মানে কী? এ রকম ফালতু একটা বিষয় নিয়ে এতো মাতামাতি ক্যান? আজিব চিড়িয়া তো!"

স্বপ্ন বালিকা লিখেছেন, ''মানুষ স্বাধীনতা পাইলে বেশি অপরাধ করেনা বরং স্বাধীনতা না পাইলে বেশি অপরাধ করে।যেমন লিটন এর ফ্লাটে যেতে বাধ্য হয়।''

মো. ওয়ালিউল্লাহ কাওসার লিখেছেন, ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেহায়া দিবস বর্জন করুন। নিজ পরিবারকে রক্ষা করুন। নিজের বোনের ইজ্জ্বত রক্ষা করুন। কেউ নিজের বোন কে ১৪ই ফেব্রুয়ারি বাসা থেকে বাহির হতে দিবেন না। আল্লাহ আমাদের মা বোনদের ইজ্জ্বত ১৪ই ফেব্রুয়ারি থেকে হেফাজত করুন...আমীন।

মাসুদ রানা লিখেছেন, ''ভালোবাসা আসলে চুমুতে সীমাবদ্ধ নেই। কয়েকদিন আগে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে এক ভিনদেশি কাপলকে দেখলাম চুম্বনরত অবস্থায়, দেখে ভালোই লাগলো। শেষবার যখন ঢাকায় যাই বিকেলে বন্ধুসহ গেলাম ধানমণ্ডি লেকে, সেখানেও চুম্বনরত এক কাপলকে দেখলাম... প্রথম কাপলের মাঝে ভালোবাসা ছিল, আর পরে চুম্বনরত কাপলের মাঝে ভালোবাসা ছিল না, ছিল যৌনতা, ছিল দু'জনের চোখে শিকারের নেশা।''

তানভীর ওয়াহিদ ফেসবুকে লিখেছেন, ''আজকাল তো অনেক প্রেমিক-প্রেমিকাই প্রকাশ্যে চুমু খায়। চন্দ্রিমা উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন এমনকি চিড়িয়াখানাতেও হরহামেশা চুম্মাচুম্মি হচ্ছে। তাহলে প্রকাশ্যে চুমুর জন্য ইভেন্ট খুলতে হবে কেন? মেইন কথা হলো, যতই প্রতিবাদী বুলি চাবানো হোক, ইভেন্ট খোলার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, চুমু খাওয়ার একটা সামাজিক লাইসেন্স পাওয়া।''

তিনি আরো বলেন, ''যত যাই বলুন, প্রেমিক-প্রেমিকার ঠোঁটের ব্যারিকেড হচ্ছে, যৌন মিলনের প্রথম স্টেপ। আর মানুষের স্বভাবই হচ্ছে, বসতে দিলে শুতে চাওয়া। আজ যদি প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার সামাজিক লাইসেন্স দেওয়া হয়, কাল অবশ্যই প্রকাশ্যে যৌন মিলনের দাবি উঠবে।...''

এছাড়া ইভেন্টটির নিচে অনেকে পাল্টা ইভেন্ট খুলেছেন। ভোটাভুটির আয়োজন করেছেন। অশ্লীল-অশ্রাব্য ভাষায় তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন।

বিডি-প্রতিদিন/০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর