১৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০৬:৫৮

'কৃত্রিম ধমনী' বানাতে সক্ষম হলেন বিজ্ঞানীরা

অনলাইন ডেস্ক

'কৃত্রিম ধমনী' বানাতে সক্ষম হলেন বিজ্ঞানীরা

অনেক সময়ই দেখা যায় রক্তের ধমণীজনিত সমস্যার কারণে একটা ছোট শিশুর শরীরের উপর বার বার ছুরি, কাঁচি চালাতে হচ্ছে। অস্ত্রোপচারের হাজারো ধারালো ‘অস্ত্রে’র নিচে নিজেকে সপে দিতে হচ্ছে তাকে। ধমনী দিয়ে রক্ত বয়ে যাওয়ার সময় বাধা পায় বলে অনেকেরই হার্ট অ্যাটাক হয়, যাদের এমন হয় তাদেরও বোধহয় দুশ্চিন্তার দিন শেষ হতে শুরু করেছে। কারণ আর দুই-তিন বছরের মধ্যেই হয়তো বাজারে আসতে চলেছে কৃত্রিম ধমনী। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা এর। 

আপনার বা আমার শরীরে কৃত্রিম ধমনীর মধ্যে দিয়ে কোনও বাধা-বিপত্তি ছাড়াই তরতরিয়ে বইতে পারবে রক্তস্রোত। আর যেটা আরও অবাক করে দেওয়ার মতো তথ্য তা হল, একটা ছোট্ট টিউবের মতো যে কৃত্রিম ধমনী শরীরে বসিয়ে দেওয়া হবে তা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের শরীরের ভেতরেই আয়তনে বাড়তে পারবে। আর সেটা একদম প্রাকৃতিক নিয়মেই। তার জন্য বাইরে থেকে ‘গায়ের জোর’ খাটাতে হবে না। নিতেও হবে না কোন কৃত্রিম উপায়। যার শরীরে বসানো হবে এই ছোট্ট টিউবের মতো ধমনী, তার শরীরের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোষ, কলাগুলি যখন, যতটা সময়ের সঙ্গে বাড়ে, সেই গতিতেই সেগুলি শরীরের ভেতরে বসানো কৃত্রিম ধমনীকে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারবে, দিতে পারবে তার পূর্ণাঙ্গ রূপ।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেওয়া এই আবিষ্কারটি করেছে আমেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অফ সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বায়োমেডিক্যাল ই়ঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট ট্রাঙ্কুইল্লোর নেতৃত্বে একটি গবেষকদল। যে দলে রয়েছেন এক অনাবাসী ভারতীয় বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অনিতা কুলকার্নিও। একেবারে কচি ভেড়ার শরীরে ওই কৃত্রিম ধমনী বসিয়ে দেখা গিয়েছে তা ওই ভেড়ার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরের কোষ, কলাগুলি যেমন একটু একটু করে বেড়েছে, তেমনই তা ভেড়ার শরীরে বসানো কৃত্রিম ধমনীটিকে একটু একটু করে বেড়েছে।

শরীরের ভেতরে বসানো কোনও কৃত্রিম অঙ্গের এই ভাবে শারীরিক বৃদ্ধির ঘটনা রীতিমতো অভিনব। গত সেপ্টেম্বরে গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-কমিউনিকেশন্স’-এ। ওই গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং অফ আসেলুলার ভাসকুলার গ্র্যাফ্টস কেপাব্‌ল অফ সোম্যাটিক গ্রোথ ইন ইয়ং ল্যাম্বস’।

মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অফ সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বায়োমেডিক্যাল ই়ঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মূল গবেষক রবার্ট ট্রাঙ্কুইল্লো বলেন, "ভেড়ার শরীরে ওই কৃত্রিম ধমনী বসানোর পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেই দেখা গিয়েছে, ওই ভেড়ার শরীরের কোষগুলি নিজেরাই বেড়ে উঠে কৃত্রিম ধমনীটিকে বাঁকিয়ে দিয়েছে, কোনও একটি নির্দিষ্ট অঙ্গের অভিমুখী করে তোলার জন্য। এও দেখা গিয়েছে, একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত কোষগুলি বেড়ে উঠে ওই কৃত্রিম ধমনীটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পেরেছে।"

গবেষকদলের অন্যতম সদস্য, অনাবাসী ভারতীয় বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অনিতা কুলকার্নি বলছেন, "আমরা দেখেছি, কচি ভেড়াগুলির বয়স যখন ৫০ সপ্তাহে পৌঁছেছে, তখন তাদের শরীরে বসানো কৃত্রিম ধমনীর ব্যাস কম করে ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। আর সেই কৃত্রিম ধমনীর মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া রক্তস্রোতের গতি বেড়েছে ২১৬ শতাংশ। ধমনীতে দ্রুত রক্ত সংবহনের জন্য যা খুবই জরুরি, সেই কোলাজেন প্রোটিনের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪৬৫ শতাংশ। তার মানেটা হল, স্বাভাবিক ধমনী যে ছন্দে বাড়ে শরীরে, একেবারে সেই ছন্দেই আপনাআপনি বেড়ে উঠেছে কৃত্রিম ধমনী ভেড়ার শরীরে। আর তার ফলে রক্ত জমাট বাঁধা, ধমনী হঠাৎ সরু হয়ে যাওয়া বা ধমনীতে ক্যালসিয়াম জমে রক্তপ্রবাহে বাধা দেওয়ার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।"


বিডি-প্রতিদিন/১৯ অক্টোবর, ২০১৬/তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর