১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৩:০৭

নিখুঁতভাবে গোলের রায় দেয় যে প্রযুক্তি

অনলাইন ডেস্ক

নিখুঁতভাবে গোলের রায় দেয় যে প্রযুক্তি

আজকের ফুটবল খেলা উত্তেজনায় ভরা। কিন্তু গোল হল কিনা, তা রেফারি ও টিভি ক্যামেরাও সব ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। গোলরেফ নামের এক প্রযুক্তি এ সংশয় দূর করতে পারে। খেলোয়াড়দের অনুশীলনের সময়ও প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ছে।

ফুটবল ম্যাচে গোল হলো কি না, সেটাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূল বিষয়। কিন্তু বল পুরোপুরি গোলপোস্টের সীমানা পেরোলো কিনা, তা মানুষের চোখে সব সময়ে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে না। জার্মানির ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের নতুন এক পরিমাপের পদ্ধতি সে ক্ষেত্রে রেফারির সিদ্ধান্ত অনেক সহজ করে তুলতে পারে। 

পদার্থবিদ টোমাস পেলকোফার বলেন, পরিমাপের এই সিস্টেম চৌম্বক ক্ষেত্রের ভিত্তিতে কাজ করে। বিশেষ করে গোলকিপার বা একাধিক খেলোয়াড়ের আড়ালে মানুষের চোখ বল দেখতে পায় না। তখনও বোঝা যায়, বল কোথায় কখন লাইন অতিক্রম করলো।

অদৃশ্য এক পর্দার মতো এই চৌম্বক ক্ষেত্র গোলপোস্টের খাঁচার মধ্যে কাজ করে। বল সেই সীমা পেরোলে 'গোলরেফ' গোলের রায় দেয়। টোমাস পেলকোফার বলেন, বলের সারফেসের ঠিক নিচে তিনটি কয়েল রয়েছে। সেগুলো তিনটি ভিন্ন দিকে চলে গেছে। কয়েলগুলোর নিজস্ব ওজন এতই কম যে, বল প্রস্তুতকারকের বিধিনিয়ম অটুট থাকে।

ট্রেনিং-এর সময়েও ইলেকট্রনিকের প্রয়োগ করা হয়। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নিজস্ব পারফরমেন্স সংক্রান্ত তথ্য কোচের কাছে পৌঁছে যায়। টিমের খেলোয়াড়দের শরীর ও খুঁটিগুলোতে ট্রান্সমিটার বসানো হয়েছে। এক কম্পিউটার সর্বক্ষণ খেলোয়াড়দের অবস্থান মনিটর করছে। কম্পিউটার তাদের গতিবিধি অনুসরণ করে এক থ্রিডি ছবির মধ্যে গোটা অবস্থা ফুটিয়ে তুলছে। 

ইনডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার রেনে ড্যুনকলার বলেন, নানা ধরনের ট্রেনিং ইউনিট রয়েছে। যেমন খেলোয়াড় কত দ্রুত দৌড়ালো, কীভাবে দৌড়ালো, তার আচরণ কেমন ছিল, বাঁ পা না ডান পা চালালো, ঠিক কোথায় মুভমেন্ট হলো-অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এই সব তথ্য সঙ্গে সঙ্গে আইপ্যাডের মতো ডিভাইসের মাধ্যমে কোচের কাছে পৌঁছে যাবে।'

ন্যুর্নব্যার্গ শহরের স্টেডিয়ামে পেশাদারি খেলোয়াড়রা মাত্র ১৫ গ্রাম ওজনের যন্ত্রের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। হাইটেক ট্রেনিং-এর তথ্য সংরক্ষণ করে পরে ফুটবলারদের দৌড়ানোর পথ, গতি, বল কাছে রাখার সময়ের হিসেব পাওয়া যায়। 

কোচ প্রত্যেকের ভুল ধরতে পারেন, ঘুরপথে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা বা তাদের ক্লান্তি শনাক্ত করতে পারেন এবং তার ভিত্তিতে ট্রেনিং-এর পরিকল্পনা করতে পারেন। খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সের উন্নতিও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে স্পষ্ট দেখা যায়। স্বয়ংক্রিয় এক সিস্টেম থাকার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে ভিডিও বিশ্লেষণের আর প্রয়োজন হয় না। 

রেনে ড্যুনকলার বলেন, খেলোয়াড়দের জন্য এই প্রযুক্তি অত্যন্ত আকর্ষণীয়, কারণ এভাবে তারা আরও উন্নতি করতে পারেন। কোচ ও পক্ষপাতহীন এক সিস্টেমের মাধ্যমে তারা তাৎক্ষণিক ফিডব্যাক পেতে পারেন৷ ফলে ট্রেনিং চলাকালীন উন্নতি করা সম্ভব।

ইলেকট্রনিক সিস্টেমগুলো দর্শকদের জন্যও নতুন সুযোগ এনে দিচ্ছে। টেলিভিশন সম্প্রচারের সময় খেলোয়াড়দের গতি ও পারফরমেন্স পর্দায় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। নতুন প্রযুক্তির দৌলতে গোল হলো কিনা, তা নিয়েও আর উত্তপ্ত বিতর্কের কারণ থাকবে না। 

টোমাস পেলকোফার বলেন, 'গোলরেফ প্রযুক্তির উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের মনে হয়, ১৯৬০ সালে বড় ধীরে খেলা হতো। আজ ফুটবল এক উন্নত ক্রীড়া, আগের তুলনায় অনেক দ্রুত হয়ে উঠেছে। ফেয়ারনেস বা ন্যায্য রায় আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের চোখে যা ধরা পড়ে না, তা শনাক্ত করতে একমাত্র প্রযুক্তি সাহায্য করতে পারে।'

এবার রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত অনেক কমে যাবে। আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন ফিফা এরই মধ্যে গোলরেফ প্রযুক্তিকে সার্টিফিকেট দিয়েছে। সূত্র: ডয়চে ভেলে।

বিডি প্রতিদিন/১৩ ডিসেম্বর ২০১৭/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর