প্রযুক্তির বাজারে গত এক দশকে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এর ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। তাতে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রযুক্তি পণ্য। তবে অসংখ্য নতুন প্রযুক্তি পণ্যের ভিড়ে এখনো প্রযুক্তির বাজারে টিকে আছে কয়েকটি পুরনো গ্যাজেট।
প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে অনেক গ্যাজেট। এমন অনেক প্রযুক্তিপণ্য রয়েছে, যা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। সে সব গ্যাজেটের জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিক গ্যাজেট। কিন্তু, আজকের বিশ্বেও এমন কিছু পুরনো গ্যাজেট রয়েছে, যা এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে। দেখে নেওয়া যাক এমন কয়েকটি পুরনো গ্যাজেট...
ডেডিকেটেড GPS ডিভাইস
আজকাল বেশির ভাগ স্মার্টফোনেই জিপিএস ( GPS) ট্যাকারের ব্যবহার বেড়েছে। তবুও সেকেলে ডেডিকেটেড জিপিএস ডিভাইসটি এখনো ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে। আজও সনাতনী এই ডিভাইসটি বেশির ভাগ অটোমোবাইলে দেখা যায়। এর অবশ্য কারণও আছে। বেশির ভাগ মানুষ ইন-ড্যাশ জিপিএস ডিভাইস বা এমনকি পোর্টেবল ডিভাইসগুলোকে স্মার্টফোনের চেয়ে বেশি কার্যকরী বলে মনে করেন। কেননা, এই ডিভাইসে নির্মাতারা মানচিত্র আপডেটের পাশাপাশি গাড়ি চলার সময়- ড্রাইভার সঠিক কল দিতে পারেন।
ভিনাইল এলপি (গ্রামোফোন)
এখন সংগীত রেকর্ডিংয়ে সিডি, ডিভিডির ব্যবহার নেই বললেই চলে। এর পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক সব গ্যাজেট। কিন্তু এখনো পুরনো বড় কালো ডিস্কগুলোর ব্যবহার দেখা যায়। যা ভিনাইল এলপি (LPs) হিসেবে পরিচিত। সেকেলে এই গ্যাজেটটি অবশ্য- গ্রামোফোন বা কলের গানে ব্যবহৃত হয়। ১৮৭৭ সালে প্রথম এর ব্যবহার দেখা যায়। যদিও এই যুগে সেকেলে পণ্যটির থাকারই কথা নয়! কিন্তু আজও অভিজাত পরিবারে গান শোনার জন্য ভিনাইল এলপি (LPs)-এর ব্যবহার হয়।
টাইপরাইটার
এক সময়ের বিখ্যাত আবিষ্কার টাইপরাইটার। এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই ডিভাইসটি হলো কম্পিউটারের কিবোর্ড এবং প্রিন্টারের সংমিশ্রণ। কেননা, এই ডিভাইসের মাধ্যমে সরাসরি কাগজে মুদ্রণ করা যায়। ১৮৭০ সালে ইলেকট্রো মেকানিক্যাল যন্ত্রটির উদ্ভব। আশির দশক পর্যন্তও এটি ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র। কম্পিউটার আবির্ভাব এবং ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যারের আধুনিকায়নের ফলে এর উপযোগিতা কমেছে। তবে এখনো টাইপরাইটারের ব্যবহার দেখা যায়।
পোর্টেবল মিডিয়া প্লেয়ার
আজকাল আমরা প্রত্যেকে পোর্টেবল মিডিয়া প্লেয়ার হিসেবে অল-ইন-ওয়ান স্মার্টফোন ব্যবহার করি। কিন্তু নব্বই দশকের কথা মাথায় এলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেকেলে পোর্টেবল মিডিয়া প্লেয়ারের ছবি। গান শোনা, ভিডিও দেখা কিংবা গেমস খেলা; নব্বই দশকের পুরোটাই ছিল এই ডিভাইসটির দখলে। এই ডিভাইসটিতে আলাদাভাবে মেমরি কার্ড ব্যবহার, টিভি বা অন্যান্য ডিভাইসে প্লাগ; সবই সম্ভব ছিল।
ল্যান্ডলাইন টেলিফোন
এক সময় যোগাযোগ মাধ্যম ছিল নির্দিষ্ট স্থানে থাকা টেলিফোন বুথ। এই ল্যান্ডলাইন টেলিফোনের মাধ্যমে যখন-তখন, যে কোনো স্থানে যোগাযোগ করা যেত। ঐতিহ্যগতভাবে টেলিফোন এক্সচেঞ্জে অ্যানালগ তামার তারের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করা হয়। যদিও আজকের বিশ্বে সবার হাতে হাতেই স্মার্টফোন। তবুও আজকের বিশ্বেও অফিস, বাসা-বাড়ি, এমনকি শিল্প প্রতিষ্ঠানে মানুষের নির্ভরযোগ্যতার অনুভূতি প্রদান করে ল্যান্ডলাইন টেলিফোন। তন্মধ্যে রোটারি ডায়াল টেলিফোন- সবচেয়ে প্রাচীন।
টেলিগ্রাফ মেশিন
দূর-দূরান্তে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের প্রথম কার্যকরী যন্ত্রের নাম- টেলিগ্রাফ মেশিন। বেতার টেলিগ্রাফি হলো টেলিগ্রাফিক কোডসহ রেডিওর মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এর আবির্ভাব। নিকোলা টেসলা পরবর্তীতে বিশ্বকে তারবিহীন টেলিগ্রাফ মেশিনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ইন্টারনেটের এই যুগে প্রাচীনতম টেলিগ্রাফ মেশিন অচল হলেও- আজও অনেক অফিসে এর দেখা মেলে।
অ্যানসারিং মেশিন
পুরনো গ্যাজেটগুলো এখনো ব্যবহৃত হওয়ায় ল্যান্ডলাইনগুলো এখনো টিকে আছে। তন্মধ্যে অ্যানসারিং মেশিন (উত্তর দেওয়ার মেশিন) বেশ অপরিহার্য। ডেডিকেটেড অ্যানসারিং মেশিনগুলো আধুনিক সেলফোনের ভয়েসমেলের মতো একই কাজ করে। অ্যানসারিং মেশিনের ড্রিলটি একই- কাস্টমাইজড গ্রাহককে একটি বার্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে, গ্রাহক পরে যা শুনতে পারে।
অ্যানালগ ঘড়ি
ঘড়ি এমন একটি ডিভাইস, যা সময় নির্ধারণে সাহায্য করে। আজকাল স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ এমনকি দেয়াল ঘড়িগুলোও নিখুঁত সময় নির্ধারণ করে দেয়। পাশাপাশি এ ডিভাইসটি অ্যালার্ম ঘড়ির সম্পাদন কাজও করে। কিন্তু, সত্যি বলতে, স্মার্টফোন এখনো বাস্তব ঘড়ি কিংবা এর সুবিধার জায়গা নিতে পারেনি। সময় দেখার জন্য আজও মানুষ হাত ঘড়ি কিংবা দেয়াল ঘড়ির পানে তাকিয়ে সময় দেখে নেয়।
ডিজিটাল ক্যামেরা
আজকাল স্মার্টফোন বা অন্যান্য ফোনে হাই ডেফিনেশন ক্যামেরা থাকে, যা ভালো মানের ছবি তুলতে পারে। এগুলো ক্যামকর্ডার হিসেবে দ্বিগুণ হতে পারে। যার মাধ্যমে হাই ডেফিনিশনে ভিডিও শুট করা যায়। নৈমিত্তিক ব্যবহারের জন্য যেমন : সেলফি তোলা বা দ্রুত ভিডিও করা ইত্যাদি। কিন্তু এক সময়- ডিজিটাল ক্যামেরা ছিল একমাত্র ভরসা। একে ডিজিক্যামও বলা হয়। পেশাগত ব্যবহারে ডিএসএলআর বা ডিজিটাল ক্যামেরার মতো পুরনো এই ডিভাইসগুলো আজও ব্যবহার করা হয়।
নন-স্মার্ট মোবাইল ফোন
এখন প্রত্যেকেরই একটি সেলফোন আছে, এমন অনেক ছোট বাচ্চাও স্মার্টফোন ব্যবহার করে। আজকাল কেউই স্মার্টফোন ছাড়া অন্য কিছু চায় না। কিন্তু, নন-স্মার্ট ফোনগুলো আজও মানুষ ব্যবহার করে। এগুলোকে অনেকে বাটন ফোনও বলে থাকে। এর ব্যবহারকারী প্রধানত বয়স্ক লোক, যারা এখনো স্মার্টফোনে অভ্যস্ত হতে পারেনি। যারা সর্বদা প্রযুক্তির দ্বারা বিভ্রান্ত হতে চায় না, তারাও পুরনো এই ফোনগুলো পছন্দ করেন।
স্থানীয় স্টোরেজ ডিভাইস
ক্লাউড স্টোরেজ সিস্টেম একটি ভার্চুয়াল স্টোরেজ ডিভাইস এবং এতে ফাইলগুলো সংরক্ষণ করা যায়। এর মাধ্যমে যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গা থেকে ডেটা অ্যাক্সেস সম্ভব। স্থানীয় স্টোরেজ ডিভাইসের পরিবর্তে ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহারের আরেকটি কারণ- স্থানীয় স্টোরেজ হারিয়ে যেতে পারে। এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে দুর্বল নেট সংযোগ এবং হ্যাকিংয়ের আশঙ্কা থেকে সুরক্ষা পেতে আজও স্থানীয় স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া অন্যান্য অনেক পুরনো গ্যাজেটও আজকাল ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ফ্যাক্স মেশিন। যা আশির দশকে বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু ডিজিটাল যুগে এলেও নির্ভরযোগ্যতার কারণে ফ্যাক্স মেশিন এখনো অপরাজিত। তারপরে রয়েছে পোর্টেবল ডিভিডি/ভিসিআর প্লেয়ার। যা এখনো বাসা-বাড়িতে বড় টেলিভিশনে চলচ্চিত্র দেখার জন্য ব্যবহৃত হয়।
তথ্যসূত্র : ওয়ান্ডারলিস্ট