মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সংরক্ষণ হচ্ছে না পাহাড়তলী বধ্যভূমি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সংরক্ষণ হচ্ছে না পাহাড়তলী বধ্যভূমি

দেশের সর্ববৃহৎ বধ্যভূমি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাহাড়তলী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফয়’স লেকের এ বধ্যভূমির শুধু একটি গর্ত থেকেই উদ্ধার করা হয় প্রায় ১১০০ মাথার খুলি। ’৭১-এর এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এখানে প্রায় ২৫/৩০ হাজার বাঙালিকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা। দেশের বৃহৎ এ বধ্যভূমিকে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ নির্দেশনা দিলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি আদেশ। মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘পাহাড়তলী বধ্যভূমি দেশের সবচেয়ে বৃহৎ বধ্যভূমি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশি বাঙালিকে হত্যা করা হয় এ বধ্যভূমিতে। এখানকার ৩০-৩৫টি স্পটে কমপক্ষে ২৫-৩০ হাজার বাঙালিকে জবাই ও গুলি করে হত্যা করা হয়।’

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির চট্টগ্রাম সভাপতি চবি অধ্যাপক গাজী সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘পাহাড়তলী বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য গত বছরের ৪ মার্চ আদেশ দেন উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ। কিন্তু আদেশের পরও তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’ জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে পাঁচজন পাক সৈন্য ও ১২ জন অবাঙালি (রেলওয়ের বিহারি কর্মচারী) সার্বক্ষণিক অবস্থান করত। তাদের সহযোগী ছিল মাসিক বেতনভুক্ত আরও ১০০ বিহারি। রেলওয়ে ওয়ার্কশপ প্রধান ও জামায়াতের নেতা মকবুলকে ওই এলাকার বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাহাড়তলী রেলওয়ে জংশন এলাকার দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন সামদেরানি। পাহাড়তলী বধ্যভূমির হত্যা পদ্ধতি ছিল জবাই করে হত্যা, গুলি করে হত্যা, শরীর ছুরি দিয়ে কেটে তাতে লবণ-মরিচ ছিটিয়ে নির্যাতন করে হত্যা। হত্যাকাণ্ডের ধরন হিসেবে ভিন্ন হারে বকশিশ প্রদান করা হতো। জবাই করে হত্যা করলে ঘাতক মাথাপিছু পেত ২০ টাকা, গুলি করে হত্যা করলে পেত ১০ টাকা আর শরীর কেটে লবণ-মরিচ লাগিয়ে হত্যা করলে পেত ২৫ টাকা। ক্যাপ্টেন সামদেরানি মকবুলকে এ হারে টাকা প্রদান করতেন। শহরের বিভিন্ন নির্যাতন কেন্দ্র থেকে পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে বাঙালিদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো হত্যার জন্য। এ হত্যাকাণ্ড প্রতিদিন গভীর রাত থেকে শুরু হয়ে ভোররাতে শেষ হতো। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হলে হত্যার আগে পুরো শরীর ছুরি দিয়ে কেটে লবণ-মরিচ মেখে দেওয়া হতো। তারপর রেলের লোহার পাতের সঙ্গে হাত-পা শক্ত করে বেঁধে রাখত। সময়ে সময়ে পাথরের ওপর রেখে জবাই করা হতো। অধিকাংশ সময় তারা জবাই করে মাথা আলাদা করত এবং ধড়কে ছোট খালে ফেলে দিত। সে খালে এক ধরনের কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেওয়া হতো। আর মাথা মাটির গর্তে পুঁতে ফেলত। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের এক ভোরে অবাঙালিরা পাক সৈন্যদের সহযোগিতায় দোহাজারী, নাজিরহাট ও ফেনী থেকে আসা তিনটি ট্রেনের কয়েকশ যাত্রীকে ধরে এনে পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করে।

সর্বশেষ খবর