মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

গতিহীন কাঁচাবাজার স্থানান্তর

লাকমিনা জেসমিন সোমা

গতিহীন কাঁচাবাজার স্থানান্তর

মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে ময়লার স্তূপ ছবি : রোহেত রাজীব

মহাখালী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দৃষ্টিনন্দন ভবন ডিএনসিসি মার্কেট। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। কাওরানবাজারের কাঁচাবাজারটি এখানে স্থানান্তরের কথা ছিল। কিন্তু সুদৃশ্য এই ভবনের সামনেই আবর্জনার ভাগাড়। বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলার বাসগুলো বেরুবার মুখে ও টার্মিনালে ঢোকার সময় তীব্র দুর্গন্ধময় জায়গাটি অতিক্রম করতে হয়। কাঁচাবাজার স্থানান্তর গতিহীন হয়ে পড়ায় বাজারের নির্ধারিত স্থানগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। 

জানা গেছে, ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম কারওয়ানবাজারের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এ লক্ষ্যে রাজধানীর মহাখালী, যাত্রাবাড়ী ও গাবতলী সংলগ্ন আমিনবাজারে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্যবসায়ীদের জন্য মার্কেটও তৈরি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন জটিলতায়, বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা ভেটো দেওয়ায় তা বানচাল হয়ে যায়। এরপর আর এমন জোরালো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে খুব সম্প্রতি উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক আবারও এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে তিনি বাজার সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। আগের সমস্যাগুলো সমাধানে কিছুদিন পরপরই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসছেন। আলাপ-আলোচনা ও দরকষাকষির মাধ্যমে একটি সমন্বিত সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করছেন। এর আগে গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে কাওরানবাজার এলাকার অবৈধ দোকানপাট ও হকার উচ্ছেদে নামে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে প্রায় হাজার সংখ্যক হকার উচ্ছেদ সম্ভব হয়েছে। ডিএনসিসির একটি সূত্র বলছে, অবৈধ দোকানপাটের ব্যাপারে আনিসুল হক অনেকটা কড়া সুরেই ব্যবসায়ীদের বলেছেন, নিজে থেকে সরিয়ে না নিলে, বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাওরানবাজারের বড় বড় আড়তসহ সম্পূর্ণ কাঁচাবাজারটি সরিয়ে নিতে বেশকিছু বাস্তব সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান সমস্যাই কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা। কেননা, ওই এলাকার সব দোকানপাটই সিটি করপোরেশনের কর্তৃত্বে নেই। এর কিছু আছে রাজউকের, কিছু বেসরকারি মালিকানার। ব্যবসায়ীরা লিজ নিয়ে বা টোল পরিশোধের মাধ্যমেই সেখানে ব্যবসা করছেন। আবার ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা এ যাবত্ টাকা দিয়ে নিয়ম-নীতি মেনেই ব্যবসার একটি ইতিবাচক অবস্থান তৈরি করেছি। এখন হুট করে কীভাবে অন্যত্র চলে যাই? ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন একটি জায়গায় খাপ খাইয়ে ব্যবসার আগের অবস্থান ফিরিয়ে নিয়ে আসা আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তারা। যদিও উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটি ব্যবসায়িক এলাকা, এখানে আলু-পটোল বিক্রির জন্য জায়গা রাখা হয়নি। বাজার স্থানান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন, মেয়রের নির্দেশে সরানোর প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, শিগগিরই এটি সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনটি পাকা মার্কেট ও কাঁচাবাজারের আড়তসহ গোটা কারওয়ানবাজারে অন্তত দুই হাজার দোকান রয়েছে। আর শুধু কাঁচাবাজারের কথা বলতে গেলে, তার সংখ্যা হবে কমপক্ষে ৩০০টি। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের আওতায় পাকা আড়ত ভবনের নিচতলায় ৬৩টি, উপরে ১১৩টি এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকান আছে আরও প্রায় ১১৮টি। এ ছাড়া এই বাজারকে ঘিরে আরও বেশকিছু ভাসমান দোকানপাট রয়েছে, যেখানে চা-সিগারেট বা হালকা নাশতার জন্য খাদ্য-খাবার বিক্রি হয়। বাজার স্থানান্তরের অগ্রগতি বিষয়ে উত্তর সিটির সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-৫) অজিউর রহমান বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন মেয়র আনিসুল হক।

অধিকাংশ ব্যবসায়ীই মেয়রের উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। অন্যদিকে মহাখালী, যাত্রাবাড়ী ও আমিনবাজারও ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন কেবল রাজউক ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে সমন্বয় করা গেলেই বিষয়টি দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব হবে। 

কেবল কাওরানবাজার নয়, রাজধানীর মিরপুর-২ এলাকাসহ কিছু কিছু স্থানে মূল রাস্তার ওপর বসা কাঁচাবাজারগুলো উচ্ছেদ বা সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।

তারা বলছেন, রাস্তার ওপরে এসব বাজার কেবল পরিবেশ দূষণই করে না, ঘটায় সড়ক দুর্ঘটনাও। একই অভিযোগ শোনা গেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ছোট-বড় ১৩টি কাঁচাবাজারের বেশ কয়েকটি থেকেও।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, কাঁচাবাজার স্থানান্তর উদ্যোগ গতিহীন হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ খবর