মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

কুমিল্লায় নকল রসমালাইয়ের ছড়াছড়ি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লায় নকল রসমালাইয়ের ছড়াছড়ি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা টিপরা বাজার এলাকায় নকল রসমালাই দোকানের ছড়াছড়ি

রসমালাই! নাম শুনলেই জিভে জল আসে। সেই সুস্বাদু রসমালাই নকল হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে রয়েছে শতাধিক নকল রসমালাইয়ের দোকান। মহাসড়কের যাত্রীরা না জেনেই কিনছেন নকল রসমালাই। কুমিল্লার পদুয়ার বাজার থেকে সেনানিবাস সংলগ্ন টিপরা বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় এসব দোকান চোখে পড়ে। প্রায় সব দোকানের নাম মাতৃভাণ্ডার। কোনোটির আগে ছোট করে আদি, কুমিল্লা, আসল, ময়নামতি, খাঁটি ও নিউ শব্দটি লেখা রয়েছে। গরুর দুধ এবং অনুপাত ঠিক না রেখে এসব রসমালাই তৈরি হচ্ছে। ক্রেতা ধরতে দামও রাখা হচ্ছে কম। এতে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে কুমিল্লার ঐতিহ্য।

সূত্র মতে, মিষ্টির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রসমালাইয়ের ইতিহাস। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে রসমালাই তার রসে মাতোয়ারা করে রেখেছে মিষ্টিপ্রেমীদের। প্রথমে এর নাম ছিল ক্ষীরভোগ। দেশভাগের পর অবাঙালিরা কুমিল্লায় এসে ক্ষীরভোগকে রসমালাই বলতে শুরু করে। এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এখনো কুমিল্লা মনোহরপুরে রসমালাই দোকানের সামনের রাস্তায় মানুষের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। রসমালাইয়ের কারিগররা জানান, কুমিল্লা নগরীর বাইরে ‘কুমিল্লার রসমালাই’ বলে যা বিক্রি হয় তাতে আসল রসমালাইয়ের স্বাদ পাওয়া যায় না।

কুমিল্লায় আসল রসমালাই মেলে মাতৃভাণ্ডার, ভগবতী পেড়া ভাণ্ডার ও শীতল ভাণ্ডারে। মনোহরপুর কালীবাড়ির সামনে এই তিনটি মূল দোকানের অবস্থান। এ ছাড়া শহরে পোড়াবাড়ী সুইটস, জলযোগ, জেনিস সুইটসে ভালো মানের রসমালাই তৈরি হচ্ছে।

ভগবতী পেড়া ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী অ্যাডভোকেট কিরণময় দত্ত জানান, কুমিল্লার রসমালাই বিদেশেও যাচ্ছে। গুণগত মান ঠিক রাখলে ৩৬ ঘণ্টাও রসমালাই নষ্ট হয় না। ভেজাল ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের গুঁড়া দুধ আর ময়দা দিয়ে রসমালাই তৈরি করে গ্রাহকদের প্রতারিত করছে। গরুর খাঁটি দুধ ছাড়া রসমালাই তৈরি করা সম্ভব নয়। চিনি আর গরুর দুধের দাম বাড়ছে, তাই বাড়ছে রসমালাইয়ের দামও। মান ঠিক রেখে বর্তমানে কেজি ২৪০ টাকার কমে রসমালাই বিক্রি করা সম্ভব নয়।

পদুয়ার বাজার এলাকার শাহজালাল সুপার শপের দেলোয়ার হোসেন জানান, অনেকে বেশি মুনাফার জন্য ময়দা আর চিনি দিয়ে কিছু একটা তৈরি করে রসমালাই বলে চালিয়ে দেয়। তারা তা ক্রেতাদের কাছে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছে। এত কম দামে আসল রসমালাই বিক্রি সম্ভব নয়।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি আলী আকবর মাসুম বলেন, নকল রসমালাইয়ের কারণে একদিকে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে অন্যদিকে কুমিল্লার ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, মূল মাতৃভাণ্ডার তাদের নামের রেজিস্ট্রেশন করেনি। তাদের নাম ব্যবহার করে অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের প্রতারিত করছে। মাতৃভাণ্ডারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই নকল রসমালাইয়ের দোকানে অভিযান চালানো হবে।

সর্বশেষ খবর