মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

সারা দেশে বন্ধ ফরমালিন চেকিং বুথ

আসন্ন রোজায় নেই কোনো বিশেষ অভিযান

মানিক মুনতাসির

সারা দেশে বন্ধ ফরমালিন চেকিং বুথ

ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে সারা দেশে স্থাপিত ২৭টি ফরমালিন চেকিং বুথ। এ নিয়ে সরকার, ব্যবসায়ী বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কারোই কোনো মাথাব্যথা নেই। প্রতি বছর রোজা শুরুর আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকার ও ব্যবসায়ীরা ফরমালিনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও এ বছর নেই কোনো বিশেষ অভিযান। তবে ভেজালবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বিএসটিআই’র নিয়মিত কার্যক্রম চালু থাকছে এবারের রোজায়ও। এদিকে মধু মাস জৈষ্ঠ্যের শুরুতেই আম, লিচু, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ধরনের রসালো দেশি ফল বাজারে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু কার্বাইড বা ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করে এসব ফল পাকানো হচ্ছে এমন আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। এদিকে ক্ষতিকর রাসায়নিক বা কার্বাইড ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা যাচাই করারও কোনো কার্যক্রম নেই বাজার সংশ্লিষ্টদের। ফলে আসন্ন রোজায় ভেজালযুক্ত খাদ্যদ্রব্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছর মালিবাগ, কারওরান বাজার, শান্তিনগর, কচুক্ষেত, হাতিরপুলসহ রাজধানীর প্রায় ১৭টি কাঁচাবাজারকে ফরমালিনমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এসব বাজার এখন ফরমালিকমুক্ত কিনা তা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, ফরমালিনের ব্যবহার উদ্বেগজনকহারে বেড়ে যাওয়ার পর গত বছর বহু হাঁকডাক নিয়ে এফবিসিসিআই, দোকান মালিক সমিতি, সরকার ও পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় ঢাকাসহ সারা দেশে ২৭টি ফরমালিন চেকিং বুথ চালু করা হয়। প্রথমদিকে এসব বুথ বেশ সাড়াও ফেলে। কিন্তু তিন-চার মাসেই প্রশ্ন উঠে ফরমালিন চেকিং যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে। বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশে বন্ধ হয়ে যায় এসব বুথের কার্যক্রম। এরপর ছয় মাস কেটে গেলেও এই জটিলতার সুরাহা হয়নি। ফলে শান্তিনগর, কারওরান বাজার, মালিবাগসহ ঢাকার ১৭টি বুথ এবং ঢাকার বাইরের আরও ১০টি বুথে তালা ঝুলছে দীর্ঘদিন ধরে।

এফবিসিসিআইর সাবেক সহ-সভাপতি ফরমালিন চেকিং বুথের প্রধান সমন্বয়কারী হেলালউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ফরমালিনের ব্যবহার আগের চেয়ে অনেকটাই কমে এসেছে। আর ফরমালিন চেকিং বুথের ব্যাপারে যেহেতু কোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে তাই এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। তবে মৌসুমি ফলে ক্ষতিকর রাসায়নিক বা কার্বাইড ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে ফলের মৌসুম শুরু হওয়ায় কার্বাইডের ব্যবহার বেড়ে গেছে। বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজার আসা লিচু ও আমে কার্বাইড ব্যবহার হচ্ছে। কেননা অনেক অপরিপক্ব আম ও লিচুকে পাকানো হচ্ছে। ফলে মৌসুম শুরুর আগেই বাজারে আসতে শুরু করেছে এসব মৌসুমি ফল। কিন্তু এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কেউ নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরেরও নেই কোনো বিশেষ কার্যক্রম। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে স্থাপিত ফরমালিন চেকিং বুথ ঘুরে দেখা গেছে বুথগুলোতে তালা ঝুলছে। দীর্ঘদিন তালা থাকায় বুথের ভিতরে ও তালার মুখে ধুলার আস্তর পড়ে গেছে। প্রশ্ন উঠেছে এসব বুথের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই। আমিনুল ইসলাম নামের এক সাধারণ ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এদেশে ভালো কোনো কার্যক্রম বেশি দিন চলে না। তার অভিযোগ, অসৎ ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই ফরমালিন চেকিং বুথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো সমাধান দিচ্ছে না সরকার।

সর্বশেষ খবর