জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলছে না খুলনা মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের কয়েক লাখ বাসিন্দার। মাঝারি ধরনের বৃষ্টিতেও কোমর সমান পানি উঠে এখানকার বাসা-বাড়িতে। কয়েকটি এলাকায় সৃষ্ট স্থায়ী জলাবদ্ধতায় পুরো বর্ষা মৌসুমে বাসিন্দারা থাকেন পানিবন্দী অবস্থায়। অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংকট ও রাস্তাঘাটের পর্যাপ্ত উন্নয়ন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। সিটি কর্তৃপক্ষ উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ না নেওয়ায় জলাবদ্ধতা কাটছে না। জানা গেছে, নগরীর উত্তর প্রান্তে সিটি করপোরেশনের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহেশ্বরপাশা, বণিকপাড়া, মানিকতলা মাইলপোস্ট, ফুলবাড়ি গেট, পশ্চিম সেনপাড়া, দৌলতপুর মধ্যডাঙ্গা ও কোপার বিল এলাকায় এবং দক্ষিণ প্রান্তে ২৯, ৩০, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের রূপসা এলাকার বান্ধাবাজার, মোল্লাপাড়া, লবলচরা, দারোগা পাড়া, চাঁনমারী, হরিণটানাসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি। সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর মানিকতলা মাইলপোস্ট এলাকার কয়েকশ মানুষ গত এক মাস ধরে পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। প্রতিনিয়ত হাঁটু সমান নোংরা পানি পাড়ি দিয়ে চলাচল করছেন এখানকার বাসিন্দারা। স্কুল-কলেজ, মসজিদে যাতায়াত, খাবার পানি সংগ্রহ, দৈনন্দিন কাজ সবকিছুই করতে হয় পানির মধ্যে থেকে। বৃষ্টি হলে কখনো ঘরের মধ্যেও পানি ওঠে। তখন দুর্ভোগ আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ভানু বেগম জানান, অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন বন্ধ করে পাট গোডাউন ও প্লট আকারে জমি বিক্রির জন্য বালু ভরাট করায় এখানে মোসলেম ফকির, আবু বক্কার সিদ্দিক ও হাফেজ সরদারের বাড়িসহ ৩০-৩৫টি ঘর চলে গেছে হাঁটু সমান পানির নিচে। স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার কোনো কোনো ঘর বাঁশ দিয়ে উঁচু করা হয়েছে।
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় নগরীর ফুলবাড়ি গেট, পশ্চিম সেনপাড়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ময়লা-আবর্জনা ও নর্দমার পানিতে এ সময় সয়লাব হয়ে পড়ে চারপাশ। পুরো এলাকা তখন যেন পানি আর ময়লার ভাগাড়। সেনপাড়ার কয়েকশ পরিবার এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।দুর্ভোগের একই চিত্র নগরীর দৌলতপুর মধ্যডাঙ্গা, কোপার বিল, রূপসা এলাকার বান্ধাবাজার, মোল্লাপাড়া, লবণচরা, দারোগা পাড়া ইস্টিং রোড, চাঁনমারী, হরিণটানাসহ আশপাশের এলাকায়। জলাবদ্ধতা ইস্যু এখন খুলনা নগরের ‘টক অব দ্য টাউন’ হলেও সিটি করপোরেশনের এ নিয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুধীজনরা।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আবিরুল জব্বার বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, সঠিক পরিকল্পনার অভাব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও খাল ভরাটের ফলে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে হালকা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় নগরীতে। তিনি বলেন, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়াও জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ। সিটি মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনিছুর রহমান বিশ্বাস জানান, জলাবদ্ধতাকে অন্যতম প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করে তা নিরসনের চেষ্টা করছে করপোরেশন। এ লক্ষ্যে কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে সুফল পাবে নগরবাসী।