মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

উন্নয়নে বাধা সমন্বয়হীনতা

রফিকুল ইসলাম রনি

উন্নয়নে বাধা সমন্বয়হীনতা

নগরীতে উন্নয়নের প্রয়োজনে এক রাস্তা খুঁড়ছে একাধিক সংস্থা। সমন্বয়ের অভাবে বাড়ছে জনদুর্ভোগ ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীবাসীকে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা সিটি করপোরেশন। নাগরিক সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার সিটি করপোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণ দুইভাগে ভাগ করে। নির্বাচনের পর দুই মেয়র নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে কাজও শুরু করে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না নগরবাসীর। সেবা না পাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, রাজধানীর উন্নয়ন করতে হলে ২৬টি সেবা প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয় মিলে মোট ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের কাজের দায়িত্ব বা সমন্বয়ন করার ক্ষমতা দিতে হবে। না হলে সেবা মিলবে না। সব প্রতিষ্ঠানই নগরবাসীর সেবার কাজে নিয়োজিত থাকলেও তারা যে যার মতো কাজ করছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, একই রাস্তা এক বছরে দুই থেকে তিনবার খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এতে যানজট, জলাবদ্ধতাসহ নানা ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। আবার রাজধানীতে ৪৩টি খালের মধ্যে ঢাকা ওয়াসার নিয়ন্ত্রণে আছে ২৬টি, ঢাকা জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে বাকিগুলো। এই খালগুলোও এখন অধিকাংশ বেদখল, কে উদ্ধার করবে তারও সমন্বয় নেই।  

এ প্রসঙ্গে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজধানীবাসীর নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হলে নগর সরকারের বিকল্প নেই। আর না হলে ২৬টি সেবা প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয় মিলে মোট ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের কাজের দায়িত্ব বা সমন্বয় করার ক্ষমতা মেয়রদের দিতে হবে। আর সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সমন্বয় করেই কাজ করতে হবে। তবেই সেবা মিলবে। সূত্রমতে, রাজধানীর সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। একই রাস্তায় একই সঙ্গে কিংবা উপর্যুপরি একাধিক সংস্থার খোঁড়াখুঁড়িসহ নানা সমন্বয়হীনতায় ক্ষুব্ধ নগরবাসী। এ অবস্থায় সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ সুষ্ঠুুভাবে পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কয়েক মাস আগে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, রাজউক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, ঢাকা ওয়াসা, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদফতর, তিতাস গ্যাস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, ডেসকো, সড়ক ও জনপথ, বিটিসিএল, ডিপিডিসিসহ ২৬টি সেবাদানকারী সংস্থা সিটি করপোরেশনের অধীনেই সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি ২৬টি সেবা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, আগামী দুই-আড়াই বছরে ডিএনসিসি প্রায় ৫০০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করবে। ওয়াসা এই সময়েই প্রায় ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাইপ বসাবে। সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় না হলে জনদুর্ভোগ কমানো যাবে না। এই শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা। তিনি বলেন, এই সভার মাধ্যমে আমরা সব সেবা সংস্থা এক প্লাটফর্মের মধ্যে এসে সমন্বিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুরো উন্নয়নমূলক কাজও আমরা একটা পরিকল্পনামাফিক করতে চাই। যারা সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করবে তারা ডিএনসিসিকে কমপক্ষে ছয় মাস আগে জানাতে হবে। আর ডিএমপিকে এক মাস আগে জানাবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উন্নয়নে বড় বাধা ছিল সমন্বয়হীনতা। তবে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সেবা সংস্থাগুলোকে সমন্বয় করতে বৈঠক করেছি। এখন দক্ষিণে যা কিছু করা হবে, তা সমন্বয় করেই করা হবে।

উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ঢাকায় ৪৩টি খালের মধ্যে ঢাকা ওয়াসার নিয়ন্ত্রণে ২৬টি এবং ঢাকা জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে থাকা খাল যথাযথভাবে নিষ্কাশন না করায় এবং খালগুলো অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি নামতে পারে না। ফলে নাখালপাড়া, মিরপুর ১২ নম্বর, কালশী, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অন্য সংস্থার অধীনে থাকা গুলশান পার্ক, বনানী খেলার মাঠ ও মোহাম্মদপুর পার্ক হস্তান্তর করতে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে ডিএনসিসি। কিন্তু এখন পর্যন্ত পার্কগুলো হস্তান্তর করা হয়নি। শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র-সংলগ্ন রাস্তা এবং আগারগাঁও এলাকার সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তা গণপূর্ত অধিদফতরের।

বনানী লেভেল ক্রসিং থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। এই সড়কগুলো ডিএনসিসির কাছে হস্তান্তর না করায় সড়ক সংস্কার, বর্জ্য সরানো, সড়কবাতি মেরামতসহ বিভিন্ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর