মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুৎ লাইন

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুৎ লাইন

রাজশাহী নগরীর পূর্ব প্রান্তে কোর্ট এলাকার একটি মহল্লা বুলনপুর। কোর্ট ঢালান পেরিয়ে পূর্বদিকের সামনে এগোতেই পদ্মা নদীর পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা ঘরবাড়ি, বসতিতে যে কেউ চোখ দিলেই মিলবে শত শত বাঁশের খুঁটি। সেই খুঁটি ব্যবহার হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সঞ্চালনের কাজে। একেকটি বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ঝুলে আছে অসংখ্য বিদ্যুতের তার। এভাবেই ওই এলাকার বাসিন্দারা বিদ্যুতের সংযোগ নিয়েছেন যত্রতত্র বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের লাইন।

মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হলেও খোদ সিটি করপোরেশনের মধ্যেই এখনো এমন দৃশ্য দেখা যায় ওই এলাকায়। এ নিয়ে কারও কোনো দায় নেই। দৃষ্টি নেই বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের। অভিযোগ রয়েছে, বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন অবৈধ হলেও বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন অর্থের বিনিময়ে এসব হাজারো বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে রেখেছেন ওই এলাকায়। অর্থের বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা অস্বীকার করলেও বাস্তবতা হলো শত শত বাড়িঘর আর হঠাৎ গড়ে ওঠা স্থাপনায় যত বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে তার সবই বাঁশের খুঁটির মাধ্যমে। যে কেউ ওই এলাকায় দৃষ্টি দিলেই মনে হবে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আদিম রূপ যেন পুরো এলাকায় বিদ্যমান। নগরীর বুলনপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বুলনপুর থেকে জিয়ানগর হয়ে রায়পাড়া পর্যন্ত পদ্মা নদীর বাঁধ ঘেঁষে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মার তীরবর্তী এলাকার যত স্থাপনা রয়েছে সেসব স্থাপনায় বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে শুধুই বাঁশের খুঁটিতে। সড়কের ওপর প্রধান বিদ্যুতের লাইন থেকে যত্রতত্রভাবে যে যেভাবে পেরেছে বিদ্যুতের সংযোগ নিয়েছে ইচ্ছামতো। কয়েকশ স্থাপনায় হাজারো বাঁশের মাধ্যমে এসব বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বালুমহালের টং থেকে শুরু করে ছোট ছোট খুপরি ঘর এমনকি পাকা ঘরবাড়িতেও বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে বাঁশের খুঁটিতেই। এতে জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি বাড়লেও মাথাব্যথা নেই কারও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যে যার মতো বাঁশের খুঁটি পুঁতে মূল লাইন থেকে বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে নেন। বিদ্যুত বিভাগের লোকজন এসে মাঝে মাঝে টাকা পয়সা নিয়ে যান। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। বিদ্যুতের পোল না বসানোর কারণে এ অবস্থা বলে জানান স্থানীয়রা। পদ্মার তীরবর্তী বুলনপুরে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) সীমান্ত চৌকি আছে। এর সংলগ্ন সব এলাকায় বিদ্যুতের পরিবাহী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে শুধুই বাঁশের খুঁটি। এসব বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে রাতদিন চলছে বালুমহালের কাজ।  নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুনসুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু বুলনপুর, জিয়ানগর ও পদ্মা তীরবর্তী এলাকা নয়, তার ওয়ার্ডের কয়েকশ ফ্ল্যাট ও বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের খুঁটিতেই। এসব সংযোগে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে মিটার বসানো হলেও বিদ্যুতের পোল সরবরাহ করা হয় না। বছরের পর বছর ধরে বাঁশের খুঁটিতেই চলছে বিদ্যুতের সংযোগ। বার বার বাঁশের খুঁটি পরিবর্তন করে বিদ্যুতের পোল সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করলেও কোনো কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এসব বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহীর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এসই) আবদুর রশিদ বলেন, বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের সংযোগ সম্পূর্ণ অবৈধ। এটির কোনো নিয়ম নেই। তবে ওই এলাকায় কেন বিদ্যুতের পোল নেই সে বিষয়টি তদারকি করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি একজনকে এলাকা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেন।

সর্বশেষ খবর