মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ট্রাফিকের ‘ওপেন সিক্রেট’ চাঁদাবাজি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ট্রাফিকের ‘ওপেন সিক্রেট’ চাঁদাবাজি

চট্টগ্রামে ওপেন সিক্রেটভাবে চলছে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। নগরের শতাধিক পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ ও তাদের নিয়োগ দেওয়া কথিত ‘টেন্ডল’দের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পরিবহন শ্রমিকরা। ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও হয়নি প্রতিকার। উল্টো অভিযোগের পর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ট্রাফিক পুলিশ।

তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ট্রাফিকের হাতে যাতে কাউকে হয়রানি হতে না হয় এ জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ট্রাফিকের কাজকর্ম নজরদারিতে রাখতে সাদা পোশাকে কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।   

সরেজমিন দেখা যায়, গত ২৭ আগস্ট দুপুরে নগরীর ওয়াসার মোড় এলাকায় কর্মরত ছিলেন সার্জেন্ট ওবায়দুর, কনস্টেবল বাশারসহ কয়েকজন। এ সময় একটি সিএনজি ট্যাক্সিকে থামার সংকেত দেন কনস্টেবল বাশার।

ডকুমেন্ট চেক করার নাম থেকে সিএনজি ড্রাইভারকে দাঁড় করিয়ে রাখেন দীর্ঘক্ষণ। পরে সিএনজি চালকের কাছে ৫০০ টাকা দাবি করা হয়। তা দিতে না চাইলে মামলার হুমকি দিয়ে ওই চালকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন বাশার। পরে ১০০ টাকা দিয়ে পার পান সিএনজি চালক। ওই কনস্টেবল টাকাটা দিয়ে আসেন সার্জেন্ট ওবায়দুরের হাতে। শুধু ওয়াসার মোড় নয়, এভাবে নগরীর দুই শতাধিক স্পটে ওপেন সিক্রেট চলছে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের হয়ে চাঁদা তোলে ট্রাফিক পুলিশের কথিত ক্যাশিয়ার। গাড়ি চালকরা তাদের ‘টেন্ডল’ নামে চেনেন। এ ধরনের বেশ কয়েকজন টেন্ডলের সন্ধান মিলেছে অনুসন্ধানে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ২ নম্বর গেটে রহিম ও কামাল, অলঙ্কার মোড়ে জসিম ও আমীর, সিটি গেটে আনোয়ার, নয়াবাজারে সোহেল, সিমেন্ট ক্রসিংয়ে আফসার ও আকতার, বারিক বিল্ডিংয়ে শাহেদ ও সাহাবুদ্দিন, নতুন ব্রিজে রফিক ও হৃদয়, চাক্তাই চাসড়ার গুদাম এলাকায় সুমন ওরফে লম্বা সুমন, সল্টগোলা ক্রসিংয়ে জহির ও জাবেদ, জিইসি মোড়ে দুলাল ও পুলিশের ভাগ্নে নামে পরিচিত এক যুবক। সপ্তাহের প্রতি রবিবার নতুন স্পটে দায়িত্ব পান ট্রাফিক সার্জেন্টরা। ফলে কোনো কোনো  টেন্ডলও নতুন জায়গায় চাঁদা  তোলার জন্য চলে যান। অভিযোগ রয়েছে, ঘুরেফিরে ২০ থেকে ২৫ ব্যক্তিকে ভাড়া করে ট্রাফিক পুলিশের কিছু সার্জেন্ট চাঁদা আদায় করছেন।

চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা অতিষ্ঠ। এমনকি চাঁদা না দিলেও ট্রাফিক পুলিশ চালক ও শ্রমিকদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সর্বশেষ খবর