মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রেললাইন ঘেঁষে বিপজ্জনক বসতি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রেললাইন ঘেঁষে বিপজ্জনক বসতি

রাজশাহী নগরীর ভিতর দিয়ে যাওয়া রেললাইন ঘেঁষে ক্রমেই গড়ে উঠছে বসতি। এমনিতেই অনেক লেভেল ক্রসিংয়ের বার নেই, তার ওপর রেললাইনের ধার ঘেঁষে গড়ে উঠা বসতি, দোকানপাট ও খুপড়ি ঘরের কারণে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রেললাইনে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। গত ২৮ সেপ্টেম্বর নগরীর ব্যস্ততম বর্ণালীর মোড়ের লেভেল ক্রসিংয়ের ওপারেই ট্রেনে কাটা পড়েন সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা। এসব দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রেললাইনের দুই পাশে বাড়িঘর আর দোকানপাটকেই দায়ী করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য—বাঁশি না বাজালে বোঝার উপায় থাকে না, চলন্ত ট্রেন কতটা কাছে এসেছে পড়েছে।

নগরীর রেললাইনের দুপাশের অনেক দোকান ইজারা নিয়ে করা হলেও বসতবাড়িগুলো জমি দখল করে নির্মিত হয়েছে। রেলওয়ে বলছে, পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। বহরমপুর এলাকায় রেললাইনের ধারে বাড়ি করে আছেন আনোয়ারা বেগম (৫০)। ঘরবাড়ির মধ্য দিয়ে কখন তার বাড়ির কাছে ট্রেন চলে আসে বোঝা যায় না। বাড়ির পাশে শিশুরা রেললাইনের ওপর বসে খেলায় মত্ত থাকে। একটু নজর এড়ালেই বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। আনোয়ারা বেগম বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বাড়ি করে আছেন। তাদের বাচ্চারা কখনো ট্রেনে কাটা পড়ে না। ট্রেন এলে শিশুরা ঠিকই বুঝতে পারে। বাইরের লোকজনই ট্রেনে কাটা পড়েন।

একই এলাকার বাসিন্দা মনিরা বেগম (২৫) বলেন, তিনিও রেললাইনের পাশেই ঘর তুলে থাকছেন। স্বামী রিকশা চালান। যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাদের। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে রেলের লোকজন বাড়ি-ঘর ভেঙে দেয়। আবার তারা আসেন, ঘর তোলেন। নগরীর সিটি বাইপাস রেলক্রসিংয়ের পশ্চিম পাশে রেললাইন ঘেঁষে একটি খড়ির দোকান। দোকানের কারণে পশ্চিম দিক থেকে ট্রেন এলে দেখার উপায় নেই। এখানেই কয়েক বছর আগে ছোট শিশুকে মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে লাইনের ওপর উঠে গিয়েছিলেন বাবা। তিনি আর গাড়ি ঘোরাতে পারেননি। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। শিশুটি পেছন থেকে নেমে যাওয়ায় বেঁচে যায়। দোকানের মালিক ফাতেমা বেগম জানান, তিনি রেলওয়ের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ২৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। সর্বশেষ ২৮ সেপ্টেম্বর এরশাদ আলী নামে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি এক কর্মকর্তা রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারান। বছর দুই আগে একইভাবে নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে অপর এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, অনেক দোকানপাট ইজারা নিয়ে করা হয়েছে। আর বাড়িঘর যারা করেছে, অবৈধভাবে করেছে। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে বিশাল এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব নয়। ফলে দিনে দিনে রেললাইন ঘেঁষে বসতি গড়ে উঠছে।

সর্বশেষ খবর