মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রাণের প্রবাহ বুড়িগঙ্গায়

গোলাম রাব্বানী

প্রাণের প্রবাহ বুড়িগঙ্গায়

বুড়িগঙ্গায় পানির দূষণ কমছে। পাওয়া যাচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যের জলধারা বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রাণের প্রবাহ ফিরে আসছে। বুড়িগঙ্গার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়েছে। আগের তুলনায় পানির গুণতম মান ভালো হচ্ছে। সেখানে জলজ প্রাণী বিকশিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বুড়িগঙ্গায় পাওয়া যাচ্ছে দেশি প্রজাতির নানান মাছ। গত বর্ষা শেষে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে বুড়িগঙ্গায় পানির গুণগত মান আগের চেয়ে ভালো হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়লেও তা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় আসেনি। পানির মান যাতে নিচে না নামে সে ব্যাপারে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

পরিবেশ অধিদফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বুড়িগঙ্গাকে ইতিমধ্যে পরিবেশগত বিপর্যয় এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পরিবেশ অধিদফতর বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর পানি যাতে কেউ দূষিত না করে সে জন্য জনগণকে সচেতন করার এবং পরিবেশগত বিপর্যয় উত্তরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস হাজারীবাগ ট্যানারি সরে যাচ্ছে সাভারে। আগামী এক বছরের মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারি উৎস থেকে সব রকমের দূষণের ক্ষেত্র অপসারণ হয়ে যাবে। এর ফলে পর্যায়ক্রমে বুড়িগঙ্গা নদীর পানির মান আরও ভালো হবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। পাওয়া যাচ্ছে পুঁটি, টেংরা, চাপিলা, কৈ, শিং, মাগুর, বাইমসহ নলা, রুই, কাতল, বোয়াল মাছ। গত কিছুদিন ধরে জেলেদের জালে এসব মাছ ধরা পড়ছে। বুড়িগঙ্গা নিয়ে কাজ করছেন এমন পরিবেশ কর্মীরা বলেছেন, গত বর্ষায় নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীতে দূষণের পরিমাণ কমেছে। সেই ধারাবাহিকতা এখনো রয়ে গেছে। এ কারণে নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে বুড়িগঙ্গার বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ড্রেজিং করে মাটি তুলে নেওয়ায় নদীর গভীরতা বেড়েছে। পানি ধারণের পরিমাণও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। বুড়িগঙ্গাকে সারা বছরই দূষণমুক্ত রাখা গেলে নদীতে ফিরে আসবে জলজ প্রাণীসহ সব প্রজাতির মাছ। নদী তীরবর্তী জেলেরা ফিরে পাবেন তাদের জীবিকা। এ জন্য দরকার একটি সম্মিলিত উদ্যোগ।

বুড়িগঙ্গা নদী তীরবর্তী বছিলা, কামরাঙ্গীরচর ও পোস্তগোলা এলাকায় স্থানীয়দের জালে ধরা পড়ছে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ। তারা বলেন, বুড়িগঙ্গায় মাছ পাওয়া তাদের কাছে অনেকটা স্বপ্নের মতোই। বছিলা ব্রিজ এলাকায় প্রতিদিনই জাল ফেলে মাছ ধরেন স্থানীয় জেলেরা। টেংরা, পুঁটি, খইলশা, কৈ, শিং, মাগুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে বুড়িগঙ্গায় ঝাঁকে ঝাঁকে কালিবাউস মাছ ধরা পড়ছে বলেও জানান স্থানীয় জেলেরা।

বুড়িগঙ্গা নিয়ে কাজ করছেন এমন পরিবেশকর্মীরা বলেন, বুড়িগঙ্গাকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে হলে, জলজ প্রাণীর আবাসস্থল হিসাবে ফিরিয়ে আনতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। বুড়িগঙ্গা খনন করতে হবে। বুড়িগঙ্গায় পানি এনে প্রবাহ বাড়াতে হবে। গৃহস্থলী বর্জ্য পানি প্রবাহে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। হাজারীবাগের ট্যানারি দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান জানান, গত মার্চ মাসে পবা থেকে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশপাশের নদীর পানি পরীক্ষা করা হয়। তখন দেখা যায়, ঢাকার চারপাশের নদীর প্রায় অধিকাংশ স্থানের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের কোঠায়। গত বর্ষায় নদীতে পানি বেড়েছে।

তাই নদীতে প্রাণও ফিরেছে। সারা বছরই আমরা নদীর এ অবস্থা দেখতে চাই। বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের কো-অর্ডিনেটর মিহির বিশ্বাস বলেন, বুড়িগঙ্গার পানির মান ভালো হওয়ার বড় কারণ ভারতের ফারাক্কার পানি ছেড়ে দেওয়া। এজন্য দেশের অন্য নদীগুলোরও পানির দূষণ কমেছে।

নদীতে দূষিত পানি যাতে ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা স্থায়ী করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী বুড়িগঙ্গা আবার প্রাণ ফিরে পাবে। বুড়িগঙ্গার দখল-দূষণ রোধে সরকার বড় ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বুড়িগঙ্গার দখল ও দূষণ রোধে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। মিহির বিশ্বাস বলেন, নদী তীরের দখলদারদের উচ্ছেদ করে ওয়াকওয়ে তৈরি করে দেওয়া হবে। সেখান গাছও লাগানো হবে। তা ছাড়া দূষণের উৎসগুলোকে কঠোর মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা হবে।

সর্বশেষ খবর