মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাসস্ট্যান্ড হচ্ছে হানিফ ফ্লাইওভারে!

রফিকুল ইসলাম রনি

বাসস্ট্যান্ড হচ্ছে হানিফ ফ্লাইওভারে!

মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর নকশাবহির্ভূতভাবে বাসস্ট্যান্ড করা হয়েছে। এতে দুর্ঘটনা, যানজট ও ভোগান্তি বাড়বে ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর যানজট এড়িয়ে নিরবচ্ছিন্ন গতিতে পারাপারের জন্য ফ্লাইওভার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নগরীর দক্ষিণ প্রবেশমুখে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার গত কয়েক বছরে যানজটের দুর্ভোগ থেকে স্বস্তি দিয়েছে নগরবাসীকে। সেই ফ্লাইওভারের ওপর নকশাবহির্ভূতভাবে তৈরি করা হচ্ছে বাসস্ট্যান্ড। নিচ থেকে ফ্লাইওভারে ওঠার জন্য তৈরি করা হয়েছে স্টিলের সিঁড়ি। এই উদ্যোগকে অত্যন্ত বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

নকশায় যাত্রী ওঠানামার কোনো স্টপেজ না থাকলেও যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে ৭-৮টি স্থানে অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে যাত্রী ওঠানামার স্টপেজ ও সিঁড়ি। এতে একদিকে যেমন যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে অপরদিকে পথচারীদের এলোমেলো চলাচলের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভারে যাত্রী ওঠানামার জন্য সিঁড়ি তৈরি করা ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরা এর বিরোধিতা করলেও কোনো কর্ণপাত করা হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আবুল কালাম অনু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ২০ জুন সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাদল সরদার, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন দেলু এবং আমিসহ ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা বিজয় কৃষ্ণের সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আমরা মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর ও নিচের রাস্তা যানবাহন চলাচলে নির্বিঘ্ন রাখার এবং ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না থাকায় সিঁড়ি নির্মাণ কাজের অনুমতি না দিতে সর্বসম্মত হই। কিন্তু আমি পবিত্র হজ পালনে মক্কা যাওয়ায় পর জানতে পারি সিঁড়ি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তিনি আরও জানান, সংশ্লিষ্টরা তার স্বাক্ষর জাল করে একটি মিথ্যা চিঠি তৈরি করে সিঁড়ি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। 

গতকাল সরেজমিন যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর সুপার মার্কেটের আগে র‌্যাব-৩ অফিসের সামনে, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ভিতরে, সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে, ধোলাইপাড় যাওয়ার পথে এভাবে বাস স্টপেজ তৈরি করা হয়েছে। প্রথম সিঁড়ি করা হয়েছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ভিতরে, দ্বিতীয় সিঁড়ি বাস টার্মিনাল থেকে ২০০ গজ দূরে জনপথ সড়কে ও দুটি সিঁড়ি যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার মোড়ে দুই পাশে।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার জন্য যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। তবে দক্ষিণের সিঁড়ি দিয়ে যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা গেলেও উত্তরেরটিতে রং করতে দেখা গেছে। সাইনবোর্ডে গুলিস্তান, পলাশীগামী বাসে উঠতে এ সিঁড়ি ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাইনবোর্ড দুটিতে লেখা রয়েছে, ‘গুলিস্তান যাওয়ার জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করুন’, ‘পলাশী যাওয়ার জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করুন’। কিন্তু সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ভিতরে সিঁড়িটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। সিঁড়ির মুখেই তিশা পরিবহনের কয়েকটি বাস রাখা হয়। কোম্পানীগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার যাত্রীদের এই সিঁড়ি ব্যবহার করে বাসে উঠতে দেখা যায়।

ফ্লাইওভারের ওপরে বাস স্টপেজের জন্য নির্ধারিত কোনো জায়গা নেই। কিন্তু ফ্লাইওভারের ওপরে ৫টি স্থানে বাস-বে তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া যাত্রীদের ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য তিনটি স্থানে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। ফ্লাইওভারে ওঠানামার র‌্যাম্পগুলোর সংযোগস্থলে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে এই সিঁড়ি দিয়েই নিয়মিত যাত্রীরা ওঠানামা করছেন। বাস ছাড়াও হিউম্যান হলারে যাত্রীরা ওঠানামা করছেন ওই স্টপেজগুলোতে। রাস্তার দুই পাশেই এভাবে যাত্রী ওঠানামা করেন। এতে গুলিস্তান বা পলাশীগামী যাত্রীরা একদিক দিয়ে বাসে উঠছেন, ফেরত আসা যাত্রীরা অপরদিকে নামছেন। এরপর ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে ফ্লাইওভারের ওপর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাচ্ছেন যাত্রীরা। এ জন্য ডিভাইডারের মাঝে সামান্য ফাঁকা জায়গাও রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া উড়াল সড়কের স্টপেজ বলে কথা! তাই মালামাল নিয়ে ওপরে উঠে গেছে তিন চাকার অযান্ত্রিক বাহনও। বাসের যাত্রীরা দিব্যি ঘুরছেন-ফিরছেন। চঞ্চল পায়ে ছোট শিশুর বিপজ্জনক ছোটাছুটিও দেখা গেছে।

ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক, পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, এরকম একটি রানিং ফ্লাইওভারের ওপর বাস স্টপেজ করা কোনোভাবেই উচিত নয়। দুই লেনের ফ্লাইওভারের ওপরে বাস স্টপেজ করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, যখনই একটি গাড়ি যাত্রী তোলার জন্য থেমে থাকবে তখন চলমান গাড়ির জন্য এটি বাধা সৃষ্টি করবে। দুর্ঘটনা ঘটবে। ফ্লাইওভারের ওপরও যানজটের সৃষ্টি হবে। মূলকথা হচ্ছে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপরে বাস স্টপেজ করার বিষয়টি মূল নকশায় নেই। এটি করা হলে তা হবে নকশার লঙ্ঘন। রাজধানীর প্রবেশমুখে যে উদ্দেশে ফ্লাইওভারটি তৈরি করা হয়েছে সেটাই ব্যাহত হবে। এটি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

সর্বশেষ খবর