মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অরক্ষিত যাত্রী ছাউনি

রফিকুল ইসলাম রনি

অরক্ষিত যাত্রী ছাউনি

ফার্মগেট সংলগ্ন তেজগাঁও গার্লস স্কুলের সামনের ছাউনি ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীতে প্রায় দুই শতাধিক যাত্রী ছাউনির বেশিরভাগই অবৈধ দখলদারদের কবলে। রোদ-বৃষ্টিতে আশ্রয় বা অপেক্ষার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না পেয়ে প্রতিদিনই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরীর বাসযাত্রীরা। সারাদেশ থেকে রাজধানীতে প্রতিদিনই মানুষ বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। তেমনি বাড়ছে গণপরিবহনের সংখ্যাও। তারপরও প্রয়োজনের তুলনায় গণপরিবহন অপ্রতুল। তাই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বাসের যাত্রীদের। তবে অপেক্ষমাণ এসব যাত্রীর জন্য পর্যাপ্ত যাত্রীছাউনি নেই। এ ছাড়াও সংস্কার না করা ও অযত্ন-অবহেলায় অনেকটাই গুরুত্বহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) দুই শতাধিক যাত্রী ছাউনি। রোদ বা বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গত ফেব্রুয়ারি হিসাব অনুযায়ী, দক্ষিণে যাত্রীছাউনি রয়েছে ১২৯টি। এর মধ্যে ৯৬টি সিটি করপোরেশনের। এর মধ্যে ১৮টি ছাউনি ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সড়ক ও জনপথ, বিআরটিসি  ও অন্যান্য সংস্থার অনুমোদিত যাত্রীছাউনি রয়েছে ১৫টি। এসব যাত্রীছাউনির মধ্যে ৭৭টিই ব্যবহার অনুপযোগী। এর মধ্যে চুক্তি নবায়ন হয়েছে ৬১টির। আর সংস্কারযোগ্য যাত্রীছাউনি রয়েছে ১০টি। এ ছাড়া উচ্ছেদযোগ্য ১৩টি যাত্রী ছাউনি রয়েছে।

সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর ডিএসসিসি এলাকায় ৮৬টি যাত্রী ছাউনি ছিল। এর মধ্যে একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানিকে ৫৭টি যাত্রীছাউনি ইজারা দেয়া হয়। তারা ৩২টি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করে। এ ছাড়া অন্য বেসরকারি কোম্পানি আরও ২৯টি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করে। মোট ৬১টি যাত্রী ছাউনি ২০০৭ সালে চুক্তির মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদে বরাদ্দ দেয়া হয়, যা ২০১২ সালে শেষ হয়েছে। জানা গেছে, এরপর ডিএসসিসি নতুন করে আর কোনো যাত্রী ছাউনির অনুমোদন দেয়নি বা নবায়ন করেনি। বর্তমানে ডিএসসিসির সব যাত্রীছাউনিই মেয়াদোত্তীর্ণ। জানা গেছে, ভ্রাম্যমাণ যাত্রীদের সুবিধার্থে আশির দশকে এরশাদ সরকারের আমলে যাত্রী ছাউনিগুলো তৈরি করা হলেও দীর্ঘ বছরেও তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এসব যাত্রী ছাউনিতে সাময়িক বিশ্রাম অবস্থায় যাত্রীদের সুবিধার্থে একাংশে খাবারের দোকান ও কোনো কোনো ছাউনিতে পত্রিকার স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো স্থানে স্টল ও খাবারের দোকান নেই। এর অধিকাংশেই রয়েছে নানা রকমের পণ্য সামগ্রীর দোকান। আবার অনেক ছাউনির পুরোটাই দখল করে ব্যবসা চালানো হচ্ছে। ভাড়ার মেয়াদ শেষ হলেও এখন আর উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না ক্ষমতাধর দোকানিদের। সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি বলে মত নগরবিদদের। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পিতভাবে যাত্রীছাউনি নির্মাণের মাধ্যমে একদিকে যেমন উপকৃত হবেন নগরবাসী, তেমনি যাত্রীছাউনি কেন্দ্রিক বাস স্টপেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে যেখানে সেখানে গণপরিবহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা বন্ধ হবে। অজ্ঞাত কারণে ছাউনিগুলোর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির (ডিসিসি) বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আবদুল্লাহপুর যাওয়ার পথে বিমানবন্দর বাসস্টপেজের সামনের ছাউনিটির বসার স্থানের রড বের হয়ে রয়েছে যা বিপজ্জনক। শেওড়া বাসস্ট্যান্ডের দুটি ছাউনিতেই বসার জায়গা নেই। ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের উল্টো দিকের যাত্রী ছাউনিতে নিচে সিরামিকের তৈরি বসার জায়গা থাকলেও উপরে ছাদ নেই। যাত্রীদের ওঠানামা ও অপেক্ষার জন্য বাস স্টপেজ সংলগ্ন স্থানেই কল্যাণপুরের যাত্রীছাউনিটি। কিন্তু প্রধান সড়কের পাশেই এ যাত্রীছাউনির আজ বেহাল দশা। বসার তো কোনো জায়গা নেই উল্টো দখল নিয়েছেন চা দোকানি। একই স্থানে হচ্ছে জুতা রঙের কাজও। অনেকে জানেনই না কল্যাণুপরে যাত্রীছাউনি আছে। সরেজমিনে রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে এ চিত্র। ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের উল্টো দিকের যাত্রীছাউনিতে নিচে সিরামিকের তৈরি বসার জায়গা থাকলেও উপরে ছাদ নেই। কিছু জং ধরা স্টিল এবড়ো-থেবড়োভাবে মাথার ওপর ঝুলছে। গুলিস্তানে স্টেডিয়ামের উল্টো দিকে বাসস্টপেজের সামনের যাত্রীছাউনির পুরোটাই হকারদের দখলে। প্যান্ট, শার্টসহ রয়েছে রকমারি বেল্টের দোকান।

কাকরাইল মোড়ের দিকে যাওয়ার পথে শান্তিনগরের যাত্রীছাউনিটির ওপরের ছাদ খসে পড়েছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের যাত্রীছাউনিতে ভাজাপোড়া তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। রাজধানীর যাত্রীছাউনির চিত্র একই রকমই। শেওড়া বাসস্ট্যান্ডের দুটি ছাউনিতেই বসার জায়গা নেই। ফার্মগেট থেকে শাহবাগে যেতে শাহবাগ মোড়ে যাত্রীছাউনি থাকলেও বাংলামোটরের কোনো স্থানেই কোনো যাত্রীছাউনি নেই। পুরনো ছাউনিগুলো তেমন একটা কাজে না আসায় যাত্রী হয়রানি চরম আকার ধারণ করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর