মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বদলে যাচ্ছে পাবলিক টয়লেট

রফিকুল ইসলাম রনি

বদলে যাচ্ছে পাবলিক টয়লেট

রাজধানীর বিভিন্ন পাবলিক টয়লেটে এখন অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে, তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড় ছবি : জয়ীতা রায়

বদলে যাচ্ছে রাজধানীর পাবলিক টয়লেট ব্যবস্থাপনা। টয়লেটের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাজধানীতে বসাচ্ছে দুই শতাধিক অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট। যার প্রত্যেকটিতে থাকছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। নারী-পুরুষের জন্য আলাদা পাবলিক টয়লেটগুলোতে রয়েছে প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো, নারীবান্ধব পরিবেশ ও নারী কেয়ারটেকার, নিরাপদ খাবার পানি, সাবান ও গোসলের ব্যবস্থা। টয়লেটের বাইরের চত্বরে সিসিটিভি ক্যামেরাও রয়েছে। টয়লেটের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে কমিটি গঠিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩৫টি টয়লেট নির্মাণ সম্পন্ন এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। 

রাজধানীতে প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে ৫৫ লাখ মানুষ রাস্তায় চলাচল করে। তাদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে নানা দিক ছোটাছুটি করতে হয়। তবে পাবলিক টয়লেটের অভিজ্ঞতা নগরবাসীর জন্য মোটেও সুখকর নয়। আশপাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই উটকো গন্ধ জানান দেয় এখানে একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। তাই নগরবাসী পাবলিক টয়লেটের উটকো গন্ধ থেকে পরিত্রাণ পেতে এড়িয়ে চলেন। মহিলাদের জন্য টয়লেট সুবিধা নেই বললেই চলে। অনেক সময় দেখা যায়, মহিলা টয়লেট থেকে বের হচ্ছেন পুরুষ! এমনকি মহিলা টয়লেটের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে পুরুষ। তবে সম্প্রতি পাবলিক টয়লেটের এই অবস্থা বদলে গেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা এবং ওয়াটার এইডের উদ্যোগে দুই শতাধিক টয়লেট স্থাপিত হচ্ছে নগরীতে। ৩৫টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো ২০১৭ সালের মধ্যে শেষ হবে।

রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোড এলাকায় তৈরি হয়েছে আধুনিক পাবলিক টয়লেট। এই টয়লেটে প্রবেশমুখে নাকে এলো পারফিউমের ঘ্রাণ। চারদিকে রঙিন আলোকচ্ছটা। পায়ের জুতা খুলেই এ টয়লেটে ঢুকতে হয়। ভিতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, কোনো ধরনের ময়লা নেই। মাথার ওপরে ঘুরছে সিলিংফ্যান। রয়েছে নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা। পৃথক লকার ও হাত ধোয়ার জন্য পৃথক স্থানসহ লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। পাঁচ টাকার রশিদ নিয়েই সেবা মিলছে এ টয়লেটে। গোসলের সুব্যবস্থা রয়েছে, এক্ষেত্রে খরচ করতে হবে ১০ টাকা। শুধু এক টাকা দিয়ে ওয়ানটাইম গ্লাস কিনেই বিশুদ্ধ পানি খাবার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। চারদিকে উন্নতমানের গ্লাস, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও উন্নতমানের কমোড। এসব দেখে মনে হবে অভিজাত হোটেলের কোনো টয়লেট। একজন সেবা গ্রহণ করলেই সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। সেবার মান অক্ষুণ্ন রাখতে ১০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী শিফট অনুযায়ী কাজ করছেন। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে টয়লেটের প্রবেশদ্বারে রয়েছে সিসিক্যামেরা। নামাজ ও অজুর ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। তবে আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষজন বিনামূল্যে এখান থেকে সেবা নিতে পারবেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে উন্নতমানের কমোড। একসঙ্গে ১০ জন টয়লেট ব্যবহার করতে পারবেন এখানে। এটি বসিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও ১০০টি আধুনিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে সায়েদাবাদ, পল্টন, ওসমানী উদ্যান, বাহাদুর শাহ পার্ক, মিয়াজানগলি এলাকায় ৮টি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে বাকি টয়লেটগুলো নির্মাণ করা হবে। ৫০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় করে এসব টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে। ফার্মগেটের ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন পার্কসহ মহাখালীর ওয়াসা পাম্প সংলগ্ন স্থান এবং শ্যামলী শিশুপার্কে আধুনিক টয়লেটগুলো উদ্বোধন করা হয়েছে। টয়লেটের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জানান, পাবলিক টয়লেটগুলোতে সকালের দিকে চাপ বেশি থাকে। দুপুর এবং সন্ধ্যায়ও চাপ থাকে। আধুনিক ফিটিংস এবং উন্নত সুবিধার কারণে এসব টয়লেট ব্যবহারকারীরা খুশি।

শ্যামলী শিশুপার্কে আধুনিক টয়লেট ব্যবহারকারী মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকার পাবলিক টয়লেটে যে আধুনিক সুবিধা, তা আমাদের অনেকের বাসা-বাড়িতেও নেই।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে বদলে যাবে ঢাকা। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। রাজধানীতে ১০০ পাবলিক টয়লেটের মধ্যে চারটি তৈরি হয়েছে। ১৪টির কাজ শেষ পর্যায়ে। কিন্তু পাবলিক টয়লেট নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থান বড় বাধা।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, আমরা একটি পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে চাই। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছি। উন্নতমানের পাবলিক টয়লেট স্থাপন তাদের একটি। ইতিমধ্যে প্রায় ১৪টি টয়লেট স্থাপিত হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে ১০০টি অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট স্থাপিত হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর