মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্থবির চিড়িয়াখানা আধুনিকায়ন

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

স্থবির চিড়িয়াখানা আধুনিকায়ন

আর্থিক সংকটের কারণে থমকে গেছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার আধুনিকায়ন কাজ। আধুনিকায়ন না হওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছে চিড়িয়াখানাটি। কমে যাচ্ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের প্রচেষ্টায় ১৯৭২ সালে প্রায় ৩৩ একর জমির ওপর উদ্যানটি গড়ে তোলা হয়। ১৯৯৬ সালে এটি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) আওতায় আসে। তখন থেকেই নিজস্ব বরাদ্দ থেকে চিড়িয়াখানার রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করে আসছে সিটি করপোরেশন।

চিড়িয়াখানাটি আধুনিকায়নে সর্বশেষ ২০১০ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সীমানা প্রাচীর ও ভিতরে হাঁটার পথ ছাড়াও বাঘ, ভালুক, সিংহ, বানর, গাধা ও হরিণের জন্য খাঁচা বানানো হয়েছে। এছাড়া লেক সংস্কার ও লেকের ওপর দুটি আধুনিক স্টিলব্রিজ নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। তবে আর্থিক সংকটে এ প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। খাঁচা আধুনিকায়ন না হওয়ায় নেওয়া হয়নি বাঘ ও সিংহসহ বেশকিছু প্রাণী। সঙ্গে আর্থিক দৈন্যও রয়েছে।

চিড়িয়াখানার কর্মীরা জানিয়েছেন, ১৯৯৭ সালে একটি বাঘের বাচ্চা ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে এখানে আনা হয়। সম্রাট নামের সেই বাঘটি ১২ বছর নিঃসঙ্গ কাটিয়ে ২০০৮ সালে মারা যায়। এখন বাঘের জন্য নতুন খাঁচা বানানো হয়েছে কিন্তু এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। নতুন করে বাঘ আসেনি খাঁচায়। আগে চিড়িয়াখানায় সিংহ ও সিংহী ছিল দুটি। ২০১৩ সালে সিংহ-সিংহী দুটোই মারা যায়। সেই থেকে খালি খাঁচাটি। পরে এখানে পেলিক্যান পাখি রাখা হয়। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বানর ও গাধাসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রাণীর খাঁচা। সেই থেকে প্রাণীর ঠাঁই হয়েছে নতুন খাঁচায়। একসময় এখানে উট ও হায়েনা ছিল। সেগুলো মারা গেছে।

দর্শনার্থী খরায় ভুগছে চিড়িয়াখানা। যারা এসেছেন তারা অধিকাংশ রাজশাহীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। নওগাঁর নিয়ামতপুর থেকে রাজশাহীতে চিকিৎসার জন্য এসেছেন অচিন দেব বর্মণ। সঙ্গে স্ত্রী ও দুই ছেলে। তিনি বলেন, চিকিৎসক সিরিয়াল দিয়েছেন বিকালে। তাই সময় কাটাতে ছেলেদের নিয়ে এসেছেন চিড়িয়াখানায়। তবে এসে হতাশ হয়েছেন তিনি। তার ভাষায়, ১০ বছর আগেও চিড়িয়াখানা পশু-পাখিতে ভর্তি ছিল। এখন নেই। চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ বাঘ-সিংহ নেই।

চিড়িয়াখানার পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তানজিমুল আলম নামের এক অভিভাবক। তিনি বলেন, ছোট বাচ্চা নিয়ে এসেছেন পার্কে। এসে দেখেন পার্কে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। আর খাঁচাগুলো প্রাণীশূন্য। যেগুলো রয়েছে সেগুলোয় নোংরা আর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. ফরহাদ উদ্দিন জানান, আর্থিক দৈন্যতায় এটির আধুনিকায়ন কাজ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বাঘ ও সিংহ নেওয়ার মতো খাঁচা নেই চিড়িয়াখানায়। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, ২০১০ সালের প্রকল্পটির সব কাজ এখনো শেষ হয়নি। খাঁচা ও ল্যান্ডস্কেপের কাজ বাকি রয়েছে। শেষ করতে আরও অর্থের প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর