মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাণিজ্যের চেয়ে সেবার গুরুত্ব যেখানে বেশি

ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাণিজ্যের চেয়ে সেবার গুরুত্ব যেখানে বেশি

শিক্ষার্থীদের দায়িত্ববান চিকিৎসকের পাশাপাশি আর্ত-মানবতায় দায়িত্বশীল ভূমিকায় প্রকৃত দেশ ও জনপ্রেমী মানুষরূপে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। ৮ তলা এই বিল্ডিংয়ের মেডিকেল কলেজের পাঁচশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব উপকরণে সজ্জিত।

 

সাধারণ মানুষের কোনো সেবা খাতই আর সেবা খাত নেই। সব কিছুই বাণিজ্যিকীকরণের আওতাভুক্ত হয়ে গেছে। শিক্ষার মতো স্বাস্থ্য খাতও এখন বাণিজ্যের চারণভূমি। প্রাইভেট ক্লিনিক, হাসপাতাল, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ যেখানেই যাবেন, দেখবেন টাকার ছড়াছড়ি। সাধারণ মানুষ সাধ্যমতো টাকায় কোনো সেবাই পায় না। এমতাবস্থায় ভিন্ন চিন্তা নিয়ে এগিয়ে এলেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কয়জন চিকিৎসক। গঠন করলেন ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল ট্রাস্ট। ১৯৮৮ সালে ঢাকায় সীমিত খরচে সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য গড়ে তোলা হয় ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল।

উদ্যোক্তাদের মনে বাণিজ্যের চেয়ে চিকিৎসা যে একটা সেবা, সে শপথের কথা অধিক গুরুত্ব পায়। এখন ২০১৭ সাল। ২৯ বছর আগে রাজধানীর মগবাজার রেল গেটের পাশে খুবই সীমিত সাধ্য নিয়ে গড়ে ওঠা ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালটি এখন ৮ তলা নিজস্ব ভবনে বিশালাকার হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে পরিণত হয়েছে। অলাভজনক এই হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ বিদ্যমান ব্যবস্থায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষকে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। আছে আউটডোর, জরুরি বিভাগ, বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক, ফার্মেসি, প্যাথলজি ল্যাব। ২৪ ঘণ্টা রোগী ভর্তির ব্যবস্থা এবং সব ধরনের প্যাথলজি পরীক্ষার ব্যবস্থাও আছে।

এখানে আছে জরুরি, মেডিসিন, শিশু, দন্ত, গাইনি, চর্ম ও যৌন, চক্ষু, নাক-কান গলা, অর্থোপেডিক্স, জেনারেল সার্জারি, নিউরোসার্জারি, মুখের প্লাস্টিক সার্জারি, হৃদরোগ, ফিজিওথেরাপি, আর্সেনিক, টিবি, ল্যাপ্রসি, ইপিআই, সাইকোথেরাপি, অনকোলজি (ক্যান্সার), জীবনধারা, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ হেপাটাইটিস টিকা প্রদানের ব্যবস্থাদি।

দেশে আর্সেনিক বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠানটি বিদেশেও সুপরিচিতি লাভ করেছে। ছয় সদস্যের ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান দেশের প্রখ্যাত শিশু সার্জন প্রফেসর ডা. কাজী কামরুজ্জামানের নিরলস প্রচেষ্টায় হাসপাতালের পাশাপাশি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ। কলেজে প্রতি বছর ১০০ জন শিক্ষার্থী এমবিবিএস কোর্সে এবং ৩০ জন শিক্ষার্থী ডেন্টাল ইউনিটে বিডিএস কোর্সে ভর্তির সুযোগ পেয়ে এসেছে। বর্তমানে মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচশ। বিশ জন বিদেশি শিক্ষার্থীর সবাই নেপালের নাগরিক। কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মাহমুদুর রহমান। বর্তমানে মেডিকেল কলেজটির অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক ডা. তোফায়েল আহমেদ। আছেন ৮০ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক। কলেজের ছাত্রীদের জন্য কলেজসংলগ্ন ৩টি হোস্টেল রয়েছে। কলেজের সমৃদ্ধ লাইব্রেরিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পাঠ্যপুস্তকসহ বিশ্বমানের বিদেশি মেডিকেল জার্নাল। শিক্ষার্থীদের দায়িত্ববান চিকিৎসকের পাশাপাশি আর্তমানবতায় দায়িত্বশীল ভূমিকায় প্রকৃত দেশ ও জনপ্রেমী মানুষরূপে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। ৮ তলা এই বিল্ডিংয়ের মেডিকেল কলেজের পাঁচশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব উপকরণে সজ্জিত। হাসপাতালের পরিচালক দেশের প্রখ্যাত অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এ এস এম মনিরুল আলম। হাসপাতালের উদ্যোগে গ্রামাঞ্চলে নিয়মিত হেলথ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। কলেজের শিক্ষার্থী ইন্টার্নদের অংশগ্রহণে এই ক্যাম্প পরিচালিত হয়। আমাদের দেশে শিক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে যেখানে রমরমা ব্যবসা চলছে, সেখানে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠানই বটে। মাত্র ৫০ টাকায় সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা পরামর্শ প্রদানসহ সহজ ও সুলভে সর্বসাধারণের চিকিৎসাসেবা গ্রহণের অপার সুযোগের ব্যবস্থা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর