রাজধানীর রাজপথে হাঁটাপথ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গুলিস্তান-মতিঝিলে হাঁটাপথ হকারমুক্ত হয়েছে। এবার বদলে যাচ্ছে বনানী থেকে বিমানবন্দর সড়ক। দুই পাশের ফুটপাথে ১০টি ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি তৈরি হচ্ছে। এতে থাকবে এটিএম বুথ, মোবাইল রিচার্জ পয়েন্ট, ওয়াশ রুম, উন্নতমানের টয়লেট এবং খাবারসহ পণ্য কেনার সুবিধা, নামাজ পড়া ও ব্রেস্ট ফিডিংয়ের নির্ধারিত জায়গা। থাকবে পৃথক সাইকেল লেন, ইন্টারনেট সংযোগ, সড়কের দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যাবলি, মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনা প্রবাহ, ফাউনটেন ঝরনা, এলইডি টিভিসহ বিভিন্ন সুবিধাসংবলিত অনেক আয়োজন। প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘এয়ারপোর্ট রোডের সৌন্দর্যবর্ধন’ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এই প্রকল্পের জন্য ভাঙা পড়বে পাঁচ তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ানের সামনের অবৈধ দখলি অংশ। কারণ, দেশের সবচেয়ে বড় চেইন হোটেলটি নিজেদের কোনো জায়গা না ছেড়েই সওজের জায়গা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আগামী জুন-জুলাইয়ে পুরো কাজটি শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা উদ্বোধন করবেন। ভিআইপি সড়কটি বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে রাত-দিন ‘বিউটিফিকেশন’ কাজ চলছে। শুরু হয়েছে ডিজিটাল স্ক্রিন লাগানোর কর্মযজ্ঞ। চীনের একটি পরামর্শক দল এতে কাজ করছে। সন্ধ্যা হলেই ওয়াকওয়েতে জ্বলে উঠছে দৃষ্টিনন্দন আলো। ফুটপাথের পাশেই নির্ধারিত জায়গায় যাত্রী ছাউনি, বিভিন্ন আলপনাসহ, ইট-পাথর আর স্টিলের স্ট্রাকচারে তৈরি হচ্ছে নানা স্মৃতিস্তম্ভ। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে কারুকাজের মাধ্যমে। ১২টি ফাউনটেন ঝরনা তৈরি করা হচ্ছে। ঝরনাগুলো থেকে অবিরাম পানি ঝরবে, সঙ্গে রাতের বেলায় বিভিন্ন রঙের আলোকরশ্মি ছড়াবে। ইতিমধ্যে এয়ারপোর্ট রোডের সড়ক বাতি বদলে ফেলা হয়েছে। হোটেল রেডিসনের সামনে পাইলট প্রকল্প হিসেবে একটি ফাউনটেন ঝরনা ও ২০০ মিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শেষ। ঝরনাটি দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ফুটপাথে আধুনিক কারুকাজসংবলিত টাইলস লাগানো হবে। পথচারীরা স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এ ফুটপাথ দিয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নিরাপদে চলাচল করতে পারবেন। পুরো সড়কটি সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। প্রহরীসহ পুরো রাস্তাটি থাকবে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো। ডাবল এলইডি লাইট লাগানো হবে। এয়ারপোর্ট থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে পৃথক সাইকেল লেন স্থাপনেরও কাজ চলছে। ফুটপাথ সংলগ্ন নির্ধারিত স্থানে মৌসুমি ফুলের গাছ লাগানো হবে, যাতে ১২ মাসই ফুল দেখতে পাবেন পথচারীরা। বিশ্বের আধুনিক সব ফুলগাছ দিয়ে সাজানো হবে সড়কটি। নিকুঞ্জ এলাকায় সড়কসংলগ্ন জলাশয়ে শিশুদের জন্য বিনোদন স্পট তৈরি করা হচ্ছে।
নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও সওজের প্রকৌশলীরা ‘বিউটিফিকেশন’ কাজের তদারকি করছেন। ফুটপাথের নির্ধারিত স্থানে ইট-পাথরের সুরকি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নানা আলপনা। আলপনার ফাঁকে ফাঁকে তৈরি করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ। ঢাকা সড়ক বিভাগের আওতায় তৈরি প্রকল্পটির তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান। তিনি বলেন, প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটি করছে ‘ভিনাইল ওয়ার্ল্ড’ নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এতে সরকারের কোনো টাকা ব্যয় হবে না। প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত স্থানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নিজেদের অ্যাড দেবে। তিনি বলেন, ৬ কিলোমিটার পথে পথচারী ছাড়াও সড়কে যে কোনো পরিবহনে থাকা মানুষ মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট কানেক্টেড হয়ে যাবেন। প্রায় ৫ হাজার মানুষ একসঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। সড়কজুড়ে থাকবে ’৫২ থেকে ’৭১ পর্যন্ত ইতিহাসসংবলিত নানা স্মৃতিস্তম্ভ।
প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান বলেন, ২০০ থেকে ৩০০ ফুট লম্বা ১০টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ চলছে। এগুলোতে এটিএম বুথ, মোবাইল রিচার্জ, ওয়াশ রুম, উন্নতমানের টয়লেট এবং কয়েন ও টাকা দিয়ে খাবার সামগ্রীসহ পণ্য কেনার সুবিধা থাকবে।জানা গেছে, পথচারীদের জন্য বিশুদ্ধ পানিসহ ফুটপাথের ওপর স্থাপিত বেঞ্চিতে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। সড়কের পাশে থাকা এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হবে সারা দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো। ক্রিকেট খেলাসহ বিভিন্ন লাইভ প্রোগ্রাম দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় অতিথিদের কর্মসূচিও ডিজিটাল স্ক্রিন ও এলইডি স্ক্রিনগুলোতে দেখানো হবে। প্রকল্পটির কাজ শেষে প্রতি বছর রক্ষণাবেক্ষণ নিজ দায়িত্বে করবে ভিনাইল ওয়ার্ল্ড।