শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে বাড়ছে বহুতল ভবন

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীতে বাড়ছে বহুতল ভবন

রাজশাহী মহানগরের একাংশ। ক্রমেই বাড়ছে বহুতল ভবনের সংখ্যা

রাজশাহী নগরীতে পাঁচ বছর আগেও বহুতল ভবন ছিল মাত্র কয়েকটি। তবে এখন শহরে বহুতল ভবন কয়েকশর বেশি। এর মধ্যে ১০ ও এর বেশি তলা ভবনের সংখ্যা অর্ধশতের বেশি। বহুতল ভবন বাড়লেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না নিয়ম-নীতি। অভিযোগ রয়েছে, অর্থের বিনিময়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অসাধু কর্মকর্তারা বহুতল ভবনের অপরিকল্পিত নকশা অনুমোদন দিচ্ছেন। বিল্ডিং কোড না মেনেই ভবন বানাচ্ছেন মালিকরা। বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি।

রাজশাহী নগরীতে ২০০৯ সাল থেকে বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর আগে কেবল ১০ তলা বলতে ছিল নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে জীবন বীমার ভবনটি। কয়েক বছরের ব্যবধানে ১০ তলা ভবন ৫০টির বেশি। নগর ভবন থেকে শুরু করে আশপাশে আরও চারটি এবং সাহেববাজার এলাকায় ১০টি, আলুপট্টির মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড়, সাগরপাড়া, উপশহর, বর্ণালীর মোড়, আমবাগান, তেরোখাদিয়া, সিপাইপাড়া, কাজীহাটা ও পদ্মা আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব ভবন। ১০ তলার নিচে এবং পাঁচ তলার ঊর্ধ্বে ভবনের সংখ্যা কয়েকশ। ২০১৩ সালে নগরীতে ৬০০ ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচ তলা পর্যন্ত ৫৬৫টি এবং ছয়ের অধিক তলা ভবনের অনুমোদন ছিল ৩৫টির। ২০১৪ সালে অনুমোদন দেওয়া হয় ৫০২টির। এর মধ্যে ৪৮৬টি পাঁচতলা পর্যন্ত এবং ছয়ের অধিক তলার ভবন ৩৫টি। ২০১৫ সাল থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৩৫৪টি ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩৬টি পাঁচ তলা পর্যন্ত এবং ছয়ের অধিক তলার ভবন অনুমোদন ছিল ৩৩টি। প্রতিটি ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য আরডিএর এক অথরাইজড অফিসার থেকে শুরু করে নগর পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে গুনতে হয় লাখ লাখ টাকা। আর টাকা দিলেই জমির শ্রেণি বদলেও মেলে নকশার অনুমোদন। কখনো কখনো মাস্টারপ্ল্যান লঙ্ঘন করেও দেওয়া হয় ভবনের অনুমোদন। গৌরহাঙ্গা-সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক প্রকল্পটি ২০০৫ সালের জুনে অনুমোদিত নগরীর মাস্টারপ্ল্যানেও উল্লেখ করা হয়েছিল। সড়কপথে কোনো আবাসিক ও বাণিজ্যিক ইমারত নির্মাণের নকশা অনুমোদনের সুযোগ ছিল না। কিন্তু আরডিএর অথরাইজড অফিসার সেখানেও ভবন নির্মাণের জন্য ২০০৫ সালের ২২ ডিসেম্বর ছয় তলার একটি নকশা অনুমোদন দেন। পরে আরও পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। রাস্তাটি প্রশস্ত করতে গিয়ে ২০০৯ সালে ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। তবে ভবন ভাঙতে গিয়ে অতিরিক্ত চার কোটি তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় মালিককে।

২০১২ সালে সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় আট তলা ভবন নির্মাণের জন্য আরডিএ থেকে নকশা অনুমোদন নেন জমির মালিক সাজ্জাদ হোসেন। শর্ত ছিল, ভবনের সামনে এক দশমিক ৫০ মিটার এবং পেছনে ও উভয় পাশে এক মিটার করে জায়গা ছেড়ে নির্মাণ কাজ করতে হবে।

তবে ভবন মালিক ভবনের সামনে এক মিটার জায়গাও ছাড়েননি। আরডিএর নির্দেশনা উপেক্ষা করে ফুটপাথ ঘেঁষে আট তলার স্থানে ১১ তলা অট্টালিকা গড়ে তোলেন। ২০১৩ সালের ২৩ জুনের মধ্যে অবৈধ নির্মাণকৃত অংশটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় আরডিএ। কিন্তু এখনো ভবনের অবৈধ অংশটি ভাঙা হয়নি। মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে ভবনটি পরে বৈধ করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। আরডিএর চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ বজলুর রশিদ জানান, সময় এবং প্রয়োজনের কারণে মানুষ বহতল ভবন নির্মাণ করছে। এটি নগরায়ণের একটি অংশ। তবে বিল্ডিং কোড না মেনে কিংবা নকশা অনুমোদনে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে সেটি তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর