বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভরাট-দূষণে বিপন্ন চাক্তাই খাল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ভরাট-দূষণে বিপন্ন চাক্তাই খাল

চট্টগ্রামের ‘দুঃখ’ খ্যাত চাক্তাই খাল। জোয়ারের সময় পানি কোনো রকম থাকলেও ভাটার সময় থাকে একেবারেই তলানিতে। দখল-দূষণ ও ভরাটের কবলে পড়ে খালটি এখন ছোট হয়ে এসেছে। স্থানীয়রা অপেক্ষায় আছে, পায়ে হেঁটে খালটি পার হওয়ার। এমনই মুমূর্ষু অবস্থা দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রের প্রাণ এ খালটির।   

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নদী সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ২৬তম সভায় চাক্তাই খালসহ অন্যান্য খাল উদ্ধারের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তের আলোকে গঠিত তদন্ত কমিটি চাক্তাই খালের বাকলিয়া ও শুকলবহর মৌজার অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করে। 

সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আছিয়া খাতুন বলেন, চাক্তাই খাল নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলা চলমান। তবে আদালতের নির্দেশে আমরা খালটির ম্যাপ, অবৈধদখলদার ও খালের পাড়ের স্থাপনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। আশা করছি, এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত একটি নির্দেশনা দেবে। আমরা নির্দেশনা মতে কাজ করব।

চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, নিকট অতীতেও চাক্তাই খাল দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় নৌপথে মালামাল পরিবহন হতো। কিন্তু এখন পরিপূর্ণ জোয়ারের সময়ও নৌ পরিবহন করা কঠিন হয়ে যায়।

নগরীর সিংহভাগ এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় চাক্তাই খাল দিয়ে। ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটির প্রবেশ পথের প্রস্থ কাগজে-কলমে ৮০ থেকে ১২০ ফুট হলেও এখন খালের গভীরতা প্রায় নেই। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন অনেকটাই এ খালের ওপর নির্ভরশীল। অতীতে খালটির প্রশস্ততা গড়ে ৫০ ফুট থাকলেও এখন তা দখল-ভরাটে ৩০ থেকে ৪০ ফুট। অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়েছে এ খাল। দখলদাররা খালের পাড়ে অবৈধভাবে তৈরি করেছেন দোকান ঘর, বাথরুম, দালান, সেমি পাকা ও টিনশেড ঘর। এর সঙ্গে আছে ময়লা-আবর্জনা। সব মিলে দূষণ, ভরাট ও দখল-বেদখলে বিপর্যস্ত খালটি।

প্রায় ২০ বছর আগেও বাঁশখালী, মহেশখালী, সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, বোয়ালখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নৌযানে পণ্য পরিবহন হতো। কিন্তু এখন ছোট নৌযান চলতে অন্তত ১০ ফুট গভীরতা দরকার হলেও এখন আছে মাত্র ৪ থেকে ৫ ফুট।

চসিক সূত্র জানায়, চাক্তাই খালের গুরুত্ব বিবেচনায় ১৯৮৮ সালে ‘পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পে’র আওতায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি খনন করা হয়। ১৯৯২-৯৩ অর্থ বছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দ্বিতীয় দফায় চাক্তাই খালের সংস্কার কাজ হয়। ২০০৩ সালে তৃতীয় দফায় খালের তলা ও পাশ পাকাকরণ করা হয়। এরপর থেকে প্রতি অর্থ বছরে কোটি কোটি টাকার সংস্কার কাজ করা হলেও তার সুফল পাওয়া যায় না।

সর্বশেষ খবর