মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি!

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

হারিয়ে যাচ্ছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি!

সিলেটের এই হাসান মার্কেটের পূর্ব নাম ছিল গোবিন্দচরণ পার্ক। এই পার্কে অনুষ্ঠিত ভাষা আন্দোলনের সমাবেশে হামলা চালিয়েছিল মুসলিম লীগের সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে পাকিস্তানের উর্দুভাষী ডেপুটি কালেক্টরেট পার্কটির নাম পরিবর্তন করে রাখেন হাসান মার্কেট। এতে হারিয়ে যাচ্ছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি।

ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত সিলেট। ১৯৪৭ সালে লিখিতভাবে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি তুলেছিলেন এখানকার লেখক ও সাহিত্যিকরা। সিলেটে ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো। ভাষাসৈনিক ও সুশীল সমাজ দীর্ঘদিন ধরে এসব স্থান সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই সিটি করপোরেশনের।

১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার অধিকার। বায়ান্নর সেই গৌরবোজ্জ্বল আন্দোলনের আগে থেকেই সিলেটের লেখক ও সাহিত্যিকরা সোচ্চার ছিলেন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে। উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, ১৯৪৭ সালের আগস্টে সিলেট থেকে প্রকাশিত ‘আল ইসলাহ’ নামক একটি পত্রিকায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি জানিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশ হয়। প্রবন্ধটি লেখেন শিক্ষাবিদ মুসলিম চৌধুরী।

সিলেটের ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান জানান, ১৯৪৭ ও ১৯৪৮ সালে ভাষার দাবিতে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও শহীদ সোলেমান হল হিসেবে পরিচিত তৎকালীন জিন্নাহ হলে লেখক-সাহিত্যিকরা নিয়মিত সভা করতেন। ওই সব সভায় অংশগ্রহণ ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে নিয়মিত লিখে যাচ্ছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী, আছদ্দর আলী, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, সরেকওম আবদুল্লাহ-সহ সিলেটের অনেক লেখক, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে সিলেটে প্রথম রক্ত ঝরে বন্দরবাজারের গোবিন্দচরণ পার্কে। ১৯৪৮ সালের ৮ মার্চ ওই পার্কে সমাবেশ করতে গেলে সেখানে হামলা চালায় মুসলিম লীগের সন্ত্রাসীরা। হামলায় রক্তাক্ত হন মকসুদ নামে এক যুবক। ১৯৫৯ সালে ভাষার স্মৃতিবিজড়িত এই পার্কটির জায়গায় তৎকালীন উর্দুভাষী ডেপুটি কালেক্টরেট নিজ নামে গড়ে তোলেন ‘হাসান মার্কেট’। ভাষার স্মৃতি রক্ষায় স্থানটির নাম পুনরায় গোবিন্দচরণ পার্ক করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ভাষাসৈনিক মাসউদ খান। আলিয়া মাদ্রাসা বা সোলেমান হলেও ভাষা আন্দোলনের কোনো স্মৃতিফলক নেই। বিষয়টি পীড়া দেয় সিলেটের সচেতন সমাজকে।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হলে এসব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ বা ফলক নির্মাণ প্রয়োজন।

এদিকে দেরিতে হলেও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব জানান, গোবিন্দ পার্ক তথা হাসান মার্কেটে ভাষা আন্দোলনের সময় যেসব ঘটনা ঘটেছে তার স্মারক হিসেবে সেখানে কিছু একটা করার পরিকল্পনা রয়েছে সিটি করপোরেশনের। এ ছাড়া নগরীর মীরের ময়দান থেকে রিকাবীবাজার পর্যন্ত সড়কের পাশের দেয়ালে ভাষা আন্দোলনের নানা চিত্র আঁকা হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস জানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর