মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্কুল গেটে গাড়িজট

জয়শ্রী ভাদুড়ী

স্কুল গেটে গাড়িজট

রাজধানীর অধিকাংশ নামকরা স্কুলের সামনে গাড়ি পার্কিয়ের কারণে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর গুলশান এলাকার ফয়েজ উদ্দিনের দুই সন্তানের একজন গুলশান বিআইটি স্কুল এবং অন্যজনকে কিন্ডারগার্টেনে প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছেন। নিজে পাবলিক বাসে অফিসে গেলেও বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনা নেওয়ার জন্য ব্যবহার হয় তার প্রাইভেট কারটি। সকালে তাদের স্কুলে দিয়ে ছুটি না হওয়া পর্যন্ত স্কুলের গেটেই পার্ক করা থাকে গাড়িটি। এরকম স্কুলের গেটে অনেক গাড়ি পার্ক করে রাখায় ওই এলাকাজুড়ে তৈরি হয় তীব্র যানজট।

এই পরিস্থিতি রাজধানীর অধিকাংশ নামকরা স্কুলের সামনে। নগরীর মতিঝিল, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বনশ্রী, উত্তরার বিভিন্ন নামি-দামি স্কুলেই প্রাইভেট গাড়িগুলোর ভিড় বেশি। ধানমন্ডির অধিকাংশ ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি গভ. বয়েজ স্কুল, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর রোডের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মহাখালীর শাহীন স্কুল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল, গুলশানের বিআইটি স্কুল, উত্তরার স্কলাসটিকাসহ নগরীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নামকরা স্কুলগুলোর সামনেই অভিভাবকদের গাড়ির ভিড় হয়। রাজধানীর দুর্বিষহ যানজটের জন্য শিক্ষাঙ্গনকেন্দ্রিক অবৈধ পার্কিং সমস্যাকেও দায়ী করা হয়।

স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রায় ১৪ হাজার প্রাইভেট কার দিনে অন্তত চারবার শিক্ষাঙ্গনে যাওয়া-আসা করে। এর ফলে রাজধানীর সড়কসংলগ্ন ভালো স্কুলগুলোর সামনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে রাজধানীতে ১৮ হাজার ১০টি প্রাইভেট কার রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে অর্থাৎ প্রতিদিন রাস্তায় নেমেছে ৪৯টি গাড়ি। আর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই মাসে রাজধানীতে ৩ হাজার ৪১৭টি প্রাইভেট কার রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে। প্রতিদিন রাস্তায় নেমেছে ৫৭টি প্রাইভেট কার। এ ছাড়া ঢাকার রাস্তায় দিনে ১৬৭টি মোটরসাইকেল নামছে। 

স্কুলবাস চালুর মাধ্যমে স্কুল গেটকেন্দ্রিক যানজট কমাতে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ড (ডিটিসিবি-বর্তমানে ডিটিসিএ) অনেক দূর এগিয়ে গেলেও পরে সেটি মুখ থুবড়ে পড়ে। অর্ধযুগ পরেও যানজট লাঘবে স্কুলবাস সার্ভিস চালু করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) দুই বছর আগে আজিমপুর থেকে মিরপুর পর্যন্ত ১৪টি স্কুলবাস চালু করলেও সেই বাস সার্ভিস এখন রাস্তায় নেই।

জানা গেছে, রাজধানীতে স্কলাসটিকা, আগা খান স্কুল, কোডা, সোডা, ইউডাসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগে থেকেই নিজস্ব বাস সার্ভিস চালু করেছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ায় বাস সার্ভিস প্রবর্তন করেছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট কারে আসা- যাওয়া করে। স্কুলবাস সার্ভিস বাস্তবায়ন হলে একটি স্কুলবাসে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী বহন করা যাবে।

অথচ এই ৩০ জনকে স্কুলে নিয়ে আসতে-যেতে তাদের প্রাইভেট গাড়ির অন্তত ১২০টি ট্রিপ দিতে হয়। স্কুলবাস সার্ভিস চালুর পর প্রাইভেট কার নিয়ে কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে না। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

রাজধানীর অভিজাত এলাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজসহ নগরীতে প্রায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকালে স্কুল শুরুর সময় এবং দুপুর ও বিকালে স্কুল শেষ হওয়ার সময় প্রাইভেট গাড়ির তীব্র ভিড় লেগে যায়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কসংলগ্ন স্কুলের সংখ্যাও কম নয়। এসব স্কুলে একজন শিক্ষার্থী নিয়ে গাড়ি এসে খালি অবস্থায় ফিরে যায়। আবার ছুটির সময় খালি গাড়ি এসে তাকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে যায়। এক শিক্ষার্থী দুইবার যাতায়াতের জন্য একটি গাড়ি চারবার আসা যাওয়া করে। এ ছাড়া অনেকে স্কুল সময়ের বাইরে কোচিংয়ের জন্যও গাড়ি ব্যবহার করে। সে হিসাবে প্রায় ১৪ হাজার প্রাইভেট কার দিনের বিভিন্ন সময়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাস্তায় চলাচল করে বলে সূত্র জানায়। ফলে দিনের ব্যস্ত সময়ে এসব প্রাইভেট কার যে পরিমাণ রোড স্পেস দখল করে তা থেকে পরিত্রাণের জন্যই স্কুলবাস প্রবর্তনের চিন্তা করছিল ডিটিসিবি। এই স্কুল বাস প্রবর্তন করা গেলে স্কুল গেটে প্রাইভেট গাড়ির দীর্ঘ লাইন বন্ধ হয়ে যাবে। ডিটিসিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, স্কলাসটিকা উত্তরার গেটে প্রতিদিন অভিভাবকদের অসংখ্য গাড়ির কারণে রাস্তায় জ্যাম লেগে যায়। মিরপুর রোডের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের সামনেও স্কুল শুরু ও শেষের সময় ভিড় হয়। অথচ তাদের স্কুল বেষ্টনীর ভিতরে ৯টি খেলার মাঠ রয়েছে।

ডিটিসিবির সাবেক অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, বিশ্বের কোনো দেশেই প্রাইভেট গাড়িতে স্কুলের বাচ্চা আনা-নেওয়ার রেওয়াজ নেই। একটি বাচ্চার জন্য একটি গাড়ি চারবার আসা-যাওয়া করে।

এটা সবদিক দিয়েই ক্ষতিকর। তিনি বলেন, আমরা ডিটিসিবি থেকে স্কুলবাস চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলাম অনেক আগেই। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর