মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

নারী যাত্রীর ভোগান্তি চরমে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

নারী যাত্রীর ভোগান্তি চরমে

রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস তুলে দেওয়ায় যাতায়াতে নারীদের ভোগান্তি ছবি : জয়ীতা রায়

সকাল ৮টা ৩০ মিনিট। কর্মস্থলে সময়মতো পৌঁছাতে কুড়িল বিশ্বরোডে ভিড় জমিয়েছেন প্রায় শতাধিক মানুষ। একটা করে গাড়ি ছুটে এসে হালকা ব্রেক দিয়ে দাঁড়াচ্ছে। কোনটাতে অল্প বিস্তর জায়গা খুঁজে দরজায় ঝুলে চলে যাচ্ছেন পুরুষ যাত্রীরা। কিন্তু ঘণ্টা পার হতে চললেও বাসে উঠতে পারছেন না নারী যাত্রীরা। সিটিং সার্ভিস আর লোকাস সার্ভিস নাটকে রাস্তায় গাড়ি না নামায় যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে নারী যাত্রীদের ভোগান্তির মাত্রা সীমাহীন। পুরুষ যাত্রীরা ভিড় ঠেলে গাড়িতে উঠতে পারলেও সিট না থাকায় নারী যাত্রীদের নিচ্ছেন না বাস চালকরা। আবার নিলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।

সরেজমিন শাহবাগ, ফার্মগেট, আগারগাঁও, মিরপুর, টেকনিক্যাল মোড়, মহাখালী, কাকরাইল মোড়, পল্টন মোড়, বাড্ডা এলাকায় দেখা গেছে নারী যাত্রীদের ভোগান্তির এই চিত্র।

বেলা ১১টার দিকে ফার্মগেট থেকে উত্তরাগামী ঢাকা পরিবহনে উঠেছেন সুমিতা চাকমা। বাসে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রায় ৩০ জন যাত্রী। এই ভিড়ে আরও যাত্রী ওঠায় পুরুষ যাত্রীদের মাঝে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে যান তিনি। এত ভিড়ে এই বাসে কেন উঠলেন জিজ্ঞেস করলে একটু বিরক্ত হন তিনি। বলেন, দুপুরের রোদে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বাসে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। কোনো বাসে তিল ধারণের জায়গা নেই। এই বাসে ওঠা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। সিটিং সার্ভিস তুলে দেওয়া মানে যে মুড়ির টিনের মতো ভর্তি করে যাত্রী নেওয়া এটা জানা ছিল না। ভাড়া তো মাত্র ৫ টাকা কম নিয়েছে। কিন্তু লোকাল সার্ভিসের ভাড়া তো এর চেয়ে অনেক কম হওয়ার কথা। বাস মালিক আর সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয় আর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের।

কাকরাইল মোড়ে যাত্রীদের হয়রানি ছিল চরমে। সিটিং সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক মালিকই গাড়ি বের করেননি। এর ফলে যাত্রীদের যাতায়াতে তৈরি হয়েছে ভোগান্তি। সাধারণ সময় যে গাড়ি চলে তাতেই ভিড়ে ঘেমে একাকার হন যাত্রীরা। আর প্রায় অর্ধেক গাড়ি রাস্তায় না নামলে যাত্রী পরিবহনে ভোগান্তির মাত্রা ছাড়ানোই স্বাভাবিক। কাকরাইল থেকে রামপুরা ব্রিজ যাবেন আতিয়া বেগম। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার জন্য ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থাকলেও বাড়ি ফেরার কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি। নারী যাত্রীদের ভোগান্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, রাস্তায় গাড়ি নেই বললেই চলে। যে দু-একটা কালে ভদ্রে আসছে তাতে পুরুষরা ধাক্কাধাক্কি করে উঠে পড়ছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেও বাসে উঠতে পারিনি। হেলপাররা বলছে, জায়গা নেই মহিলারা উঠবেন না। সিটিং উঠিয়ে দিয়ে ব্যবসা আরও লাভজনক হয়েছে। আগে তো সিটের বাইরে অনেকেই যাত্রী তুলত না। এখন তো ভাড়াও বেশি নিচ্ছে আর যাত্রী তুলছে ঠাসাঠাসি করে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মধ্যবিত্ত মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকবে না।

বিকাল ৪টার দিকে মিরপুর টেকনিক্যাল থেকে বাসে ওঠা নিয়ে নারী যাত্রীদের সঙ্গে অছিম পরিবহনের হেলপারের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় লায়লা বানু নামে এক মহিলা  বলেন, নারী যাত্রীদের চেয়ে কি পুরুষ যাত্রীরা পাঁচ টাকা বেশি দেয়? বাসের পুরুষ যাত্রীদের এক পাশে আর নারী যাত্রীদের এক পাশে দাঁড়াতে দিলেই তো আর সমস্যার কিছু থাকে না। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অফিস শেষে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে আছি। আগে সিটিং বলে বসিয়ে বেশি ভাড়া নিত। এখন তো বাসেই নিচ্ছে না। সকালে আসার সময়ও একই পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। সিটিং-লোকাল নাটক শুরু হয়েছে। এখন তো গাড়িতে সিটও পাচ্ছি না আবার ভাড়াও প্রায় একই দিতে হচ্ছে। আমাদের এসব ভোগান্তি দেখার কেউ নেই।

সর্বশেষ খবর