মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির দুর্ভোগ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির দুর্ভোগ

রাজধানীর রাজপথগুলোতে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এমনই মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে গোটা নগরী ছবি : জয়ীতা রায়

রাস্তা সংস্কার, সম্প্রসারণ, ড্রেন নির্মাণ, ফুটপাথ তৈরির নামে প্রতিদিনই চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। এই ধারাবাহিক খোঁড়াখুঁড়ির সঙ্গে বৃষ্টিতে রাজধানীবাসীকে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। রাস্তা খুঁড়ে মাটি, ইট ছড়িয়ে রাখা হচ্ছে চারপাশ দিয়ে, অনেক জায়গায় এই খোঁড়াখুঁড়ির ফলে রাস্তার মধ্যে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। বৃষ্টিতে এসব গর্ত তৈরি হয়েছে মৃত্যুকূপে। প্রতিনিয়তই রিকশা, লেগুনা উল্টে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতায় রাজধানীতে খোঁড়াখুঁড়ির দুর্ভোগ বাড়ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর মিরপুর হজরত শাহ আলী (রহ.) বোগদাদী মাজার শরিফের সামনে থেকে পুরনো গাবতলী পর্যন্ত রাস্তায় রিং বসানোর কাজ চলছে, কালশী মোড় থেকে তালতলা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা খোঁড়া হয়েছে মেট্রো রেলের জন্য, মালিবাগ-মৌচাক সড়কে চলছে ফ্লাইওভারের কাজ, যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে ডেমরা-শনিরআখড়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলছে সম্প্রসারণ কাজ। উত্তর যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, দোলাইরপাড়, শ্যামপুর, জুরাইন, পোস্তগোলা, করাতিটোলা, দয়াগঞ্জ, কুতুবখালী, শনিরআখড়া, কাজলার পাড়, মাতুয়াইল, মাতুয়াইল মধ্যপাড়া, বিজয়নগর এলাকাতে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। আর বাড্ডা থেকে নর্দ্দা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকা খুঁড়ে রাস্তার ওপরই রাখা হয়েছে পিচ আর মাটি। এতে দিনের সব সময়ই লেগে থাকছে যানজট। আর একপাশে রিং রাখায় পানি জমে সয়লাব হচ্ছে রাস্তা এবং ফুটপাথ। সমন্বয়হীনতার কারণে একই রাস্তা বারবার খুঁড়ছে সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো।

মিরপুর-১০ এলাকার বাসিন্দা নাঈম উদ্দিন বলেন, এ এলাকার রাস্তা প্রথমে ওয়াসা খুঁড়ে পানির পাইপ বসালো এরপর বিটিসিএল খুঁড়ে টেলিফোন লাইনের তার বসালো। এখন মেট্রো রেলের জন্য কয়েক মাস ধরে রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এতদিন ধুলাবালুতে শ্বাস নিতে পারতাম না আর এখন বৃষ্টির পানি-কাদায় রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারি না।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় কয়েকটি স্থানে রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এর ফলে ড্রেনের ময়লা পানিতে সয়লাব হচ্ছে এলাকা। নোংরা আর দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে চলতে হচ্ছে মানুষকে। যাত্রাবাড়ী এলাকার মনির হোসেন বলেন, প্রতিদিনই কোনো না কোনো রাস্তা খোঁড়া হয়।

মাটি তুলে ড্রেনের ওপর রাখায় পানি যাতায়াত করতে পারে না। এর ফলে একদিকে ভাঙাচোরা রাস্তা আর অন্যদিকে ড্রেনের পানি জমে যাতায়াত করতে পারছে না মানুষ। আর এসব কারণে সারাক্ষণই তীব্র যানজট লেগে থাকে এসব রুটে। বাড্ডা এলাকায় রিং বসানোর জন্য বাড্ডা লিংক রোডের পাশ থেকে শুরু হয়েছে খোঁড়া। আস্তে আস্তে বুলডোজার দিয়ে বাড্ডা থেকে নর্দ্দা পর্যন্ত সড়ক খোঁড়া হচ্ছে। কিন্তু রাস্তা খুঁড়ে মাটি, ইট, পিচ সব কিছুই রাস্তার ওপর রাখা হয়েছে। আর প্রায় বৃষ্টি হওয়ায় থেমে থেমে চলছে কাজ। রাস্তা প্রায় কয়েক কিলোমিটার খুঁড়লেও কাজে গতি নেই বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। শাহজাদপুর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তা খোঁড়ার সময় কাজের গতি বেশি থাকে। কিন্তু খোঁড়া শেষে ঠিক করার সময় কাজ চলে আস্তে ধীরে। খোঁড়ার পর থেকে এ রুটে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। আর বৃষ্টির কারণে কাজ দেরির ঘটনা তো আছেই। রাজধানীর বিজয়নগর এলাকাতে একই রাস্তা বারবার খোঁড়া হয়। একবার এই সংস্থা সংস্কার করলে পরের বার আরেক সংস্থা লাইন বসানোর জন্য খোঁড়ে।

বিজয়নগর এলাকার বাসিন্দা হান্নান আলী বলেন, আমার দোকানের সামনের এই রাস্তা চারবার খোঁড়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন এই রাস্তা সংস্কার করে দেওয়ার পর ওয়াসা এবং বিটিসিএল খোঁড়ে।

খোঁড়ার পর কত মাস শুধু ইট আর খোয়া বিছিয়ে রাখা ছিল। এরপর যখন কাজ শুরু হলো নিজের চোখে দেখলাম কীভাবে কম মাল-মসলা দিয়ে কাজ হচ্ছে। এ বিষয়ে বলতে গেলে ঠিকাদারের সঙ্গে আমার বাকবিতণ্ডাও হয়। এই রাস্তার ওপর যদি একটা মালবাহী ট্রাক দাঁড়ায় তাহলে যেকোনো সময় তা বসে যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর