শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

মহল্লায় মহল্লায় নিরাপত্তা গেট

জিন্নাতুন নূর

মহল্লায় মহল্লায় নিরাপত্তা গেট

রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলোতে নিরাপত্তার জন্য গড়ে ওঠে গেট ব্যবস্থা। এতে আবাসিক এলাকাগুলোতে আগের চেয়ে অপরাধ কমে গেছে ছবি : রোহেত রাজীব ও জয়ীতা রায়

রাজধানীর এলাকাভিত্তিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত কয়েক বছর ধরে মহল্লায় মহল্লায় গেট স্থাপন করা হয়েছে। আবাসিক এলাকার প্রবেশ পথে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তার সতর্ক প্রহরা। রাতে নির্ধারিত সময়ের পর এসব আবাসিক এলাকায় বাইরের অবাঞ্ছিত লোকজন সহজে ঢুকতে পারে না। প্রতিটি এলাকায় একটি মাত্র গেট খোলা রেখে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ফলে রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলোতে আগের চেয়ে অপরাধ কমে গেছে। নগরবাসীর জীবনযাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়ে উঠেছে।

আবাসিক এলাকার সোসাইটি বা সমিতিগুলো এসব গেট বা নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। এলাকাগুলোতে বাড়ি মালিক সমিতি রাতে নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়াও সিসি ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করেছেন। দিনে গেটগুলো খোলা থাকলেও রাতে নির্দিষ্ট সময়ের পর গেটগুলো বন্ধ থাকে। এলাকার বাসিন্দা ছাড়া বহিরাগতদের এলাকায় প্রবেশের জন্য নিরাপত্তা রক্ষীকে নিজের নাম-পরিচয় জানাতে হয়। কিছু এলাকায় আবার ট্রাক ও বাসের মতো বড় যানবাহন যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য দিনের বেলাও গেটগুলো বন্ধ রাখা হয়।

বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে রাত ১২টার পর মিরপুর ১২ নম্বর পল্লবী আবাসিক এলাকায় প্রবেশের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে লাগানো হয়েছে লোহার গেট। গেটগুলোর মাথার ওপর পল্লবী বাড়ি মালিক সমিতির নাম রয়েছে। গেটের পাশে রাতে নিরাপত্তা কর্মীরা অবস্থান করে। পরিচিত হলে তারা গেট খুলে দেন। একইভাবে নিরাপত্তার জন্য রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, ধানমন্ডি, বনশ্রী, মধুবাগ, সেগুনবাগিচা, মহাখালী ও মিরপুর ডিওএইচএস, সিদ্ধেশ্বরী, উত্তরা, বারিধারাসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় লোহার গেট তৈরি করা হয়েছে। গুলশান, বনানী, উত্তরা, বারিধারার মতো উচ্চবিত্ত আবাসিক এলাকার প্রবেশপথে লোহার গেট ছাড়াও এলাকাজুড়ে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াটিয়া সেজে জঙ্গিরা আস্তানা গড়ে তোলায় বাড়ি মালিক সমিতি এলাকার নিরাপত্তা আরও জোরদার করেছে। এলাকাভেদে রাত ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে এসব গেট বন্ধ হয়। তবে গেটের কারণে যারা কর্মক্ষেত্রের কাজ শেষে রাতে দেরি করে বাসায় ফিরছেন তাদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কাউকে আবার ঘুরে অন্য গেট দিয়ে এলাকায় ঢুকতে হচ্ছে। বর্তমানে উত্তরার সব সেক্টরের বেশির ভাগ প্রবেশ পথেই গেট লাগানো হয়েছে। নতুন করে আরও গেট লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

মিরপুর পল্লবী বর্ধিত আবাসিক এলাকার এক বাড়ির মালিক আবুল কাশেম বলেন, নিরাপত্তা প্রহরীরা রাতে টহল দিলেও নিরাপত্তা জোরদারে এসব গেটের বিকল্প নেই। এতে রাতে চোর-ডাকাত ও সন্দেহজনক ব্যক্তিদের আনাগোনা ঠেকানো সম্ভব।  

নগর বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আবদুল মতিন বলেন, কোনো এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি ভালো থাকে তবে এ ধরনের গেটের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু যদি একটি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয় তাহলে নিরাপত্তার খাতিরে সেই এলাকায় এ ধরনের গেট লাগানো যেতেই পারে। কিন্তু বাড়ি মালিক সমিতিগুলোর পক্ষ থেকে এজন্য ভালো ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাতে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিটি গেটে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা কর্মী থাকতে হবে। প্রয়োজনে সেই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বাড়ি মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আলাদা কার্ডের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এই কার্ড দেখিয়ে বাসিন্দারা তাদের এলাকায় প্রবেশ করবেন। 

নগর ঘুরে দেখা যায়, বহিরাগত ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে বড় যানবাহনের প্রবেশ ঠেকাতে এসব ফটক লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির পক্ষ থেকে এসব গেট বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে এলাকাভিত্তিক গেট ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর