কাল ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। সুস্থ নিরোগ বিশ্ব জনসম্পদ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পালন করবে দিনটি। বিশ্বের ১৯০টি দেশের ২৬০টিরও বেশি শহরে কাল আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে পালন করা হবে।
২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২১ জুন দিনটিকে আন্তর্জাতিক ‘যোগ দিবস’ ঘোষণার প্রস্তাব দেন। সে বছরই ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক ‘যোগ দিবস’ ঘোষণা করে। ইয়োগা বা যোগ ব্যায়াম শুধু রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণই করে না, অনেক রোগ নিরাময়েও ভূমিকা রাখে। প্রাণায়াম, যোগাসনের বিভিন্ন মুদ্রা এবং ধ্যান বা মেডিটেশনের সমন্বয়ই ইয়োগা বা যোগ। বিশ্বজুড়ে যোগচর্চায় অসংখ্য মানুষ কাটিয়ে উঠছে হতাশা আর মানসিক অবসাদ। উপমহাদেশে উদ্ভাবন হলেও এর চর্চা এখন সবচেয়ে বেশি পশ্চিমা দেশগুলোয়। তবে এ অঞ্চলে চর্চা বাড়ছে গত কয়েক বছর থেকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপন করবে ভারত। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ভারতজুড়ে দিবসটি উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। প্রথমবার ২০১৫ সালে মোদির নেতৃত্বে দিল্লির রাজপথে ৩৬ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে প্রথম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপন করা হয়েছিল।
বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ধ্যানচর্চা বা মেডিটেশন। এটি এখন পরিপূরক চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ওজন কমানো, নমনীয় শরীর, উজ্জ্বল ত্বক, প্রশান্ত মন, সুস্বাস্থ্য-যা কিছু আমাদের কাঙ্ক্ষিত সবকিছুই মিলবে ধ্যানচর্চায়। এতে সমাধান মিলবে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন, করোনারি আর্টারি ব্লকেজসহ জটিল শারীরিক সমস্যার। এসব কার্যকারিতার কারণেই বাংলাদেশে ধ্যান বা মেডিটেশনচর্চা এখন সামাজিক আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠেছে।ধ্যানে মগ্ন ভোরের ঢাকা : রাজধানীর বিভিন্ন পার্ক, উদ্যান ও খোলা চত্বরে এখন অসংখ্য মানুষ সম্মিলিত ধ্যানচর্চায় অংশ নেন। বিশেষ করে ঢাকার পার্কগুলোতে ভোরে যারা শরীরচর্চা করতে যান তাদের অনেকেই মেডিটেশনেও অংশ নেন। ধ্যানচর্চা এখন নাগরিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ শারীরিক-মানসিক সুস্থতার জন্য নিয়মিত ধ্যানচর্চা করেন। বাংলাদেশে ধ্যান বা মেডিটেশনচর্চার নেতৃত্ব দিচ্ছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। মেডিটেশন ও কোয়ান্টাম এখন সমার্থক। সংগঠনটির স্থানীয় উদ্যোগে রমনা পার্কে নিয়মিত মেডিটেশন হয় ‘প্রশান্তি রমনা’র তত্ত্বাবধানে। ধানমন্ডি লেকে প্রতিদিন ভোরে মেডিটেশন করে প্রাত ভ্রমণকারীরা। গুলশান সাউথ পার্কে নিয়মিত মেডিটেশন হয় মহাখালী শাখার উদ্যোগে। এ ছাড়া মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনেও নিয়মিত মেডিটেশনে বসেন সেখানকার একটি প্রি-সেলের উদ্যোগে। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের অর্গানিয়ার মারুফ ইবনে মাহবুব বলেন, পার্ক, উদ্যান ও খোলা চত্বর ছাড়াও প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টায় অভিন্ন সময়ে সারা দেশে ধ্যানে মিলিত হন হাজার হাজার মানুষ। সারা দেশে আমাদের পাঁচটি সেন্টার, ২৯টি শাখা, ৭২টি সেল, ৭১টি অগ্রসর প্রি-সেল এবং ১০২টি সক্রিয় প্রি-সেল মিলিয়ে মোট ২৭৯টি ইউনিটে হাজার হাজার মানুষ নিজের ও অন্যের কল্যাণে ধ্যানমগ্ন হন।
ধ্যানচর্চায় আবারও ভ্যাট! : দেহ-মন সুস্থ রাখার অন্যতম উপায় ধ্যান বা মেডিটেশন। বিশ্বব্যাপী এই ধ্যানের গুরুত্ব দিন দিনই বাড়ছে। শারীরিক মানসিক যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি আজকাল মেডিটেশনের সাহায্য নিচ্ছেন অনেকে। অথচ প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট অব্যাহতি প্রাপ্ত পণ্য ও সেবার দীর্ঘ তালিকার কোথাও মেডিটেশন সেবার নাম নেই। গত ২৭ মে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, মেডিটেশন সেবা বা ধ্যানচর্চার ওপর ভ্যাট থাকছে না। এটি থেকে খুব সামান্যই ভ্যাট পাওয়া যায়। এটি আগের মতোই থাকবে। এর আগে ২০১৪ সালের বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, মেডিটেশন সেবা গ্রহণ করে হতাশাগ্রস্ত অনেক মানসিক ও শারীরিক ব্যাধিগ্রস্ত মানুষ মুক্তির প্রয়াস পায়। এ জন্য এই সেবার ওপর প্রযোজ্য কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি। কিন্তু এবার ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভ্যাটের খড়গ নামল ধ্যানচর্চার ওপর। এ নিয়ে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় চলছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ধ্যানচর্চাকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানাচ্ছেন।