মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

আন্ডারপাসগুলোর শোচনীয় অবস্থা

আকতারুজ্জামান

আন্ডারপাসগুলোর শোচনীয় অবস্থা

পথচারীদের পারাপারের আন্ডারপাসগুলো যেন ভাসমান মানুষের আবাস ছবি : জয়ীতা রায়

প্রবেশমুখের সামনে দাঁড়িয়ে, বসে প্রস্রাব করছে মানুষ। যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে দুই পাশ রূপ নিয়েছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে। একটু বৃষ্টি হলেই প্রবেশমুখে জমে যায় পানি। সেখানে জলাবদ্ধতা কাটতে লাগে সপ্তাহখানেক। এসব চিত্র রাজধানীর গাবতলীতে অবস্থিত আন্ডারপাসটির! বেহাল দশার কারণে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হন। এসব দিনের চিত্র। রাত হলেই আন্ডারপাসটির দুই পাশে দেখা যায় ভাসমান মানুষের আনাগোনা। রাত একটু গভীর হলেই আতঙ্কে কেউ আন্ডারপাস ব্যবহার করেন না।

রাজধানীতে পথচারীদের রাস্তা পারাপারে গুলিস্তান ও কারওয়ান বাজারে আরও দুটি আন্ডারপাস থাকলেও সেগুলোর অবস্থাও করুণ। আন্ডারপাসের সামনে কথা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন ইমনের সঙ্গে। ইমন জানান, দুর্গন্ধে আন্ডারপাসের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার উপায় নেই। সন্ধ্যার পর ছিঁচকে চোর, ছিনতাইকারী, ভাসমান পতিতাসহ অন্ধকার জগতের নানা পেশার মানুষের আস্তানায় পরিণত হয়। এখন আর মানুষ পারাপারে ব্যবহার হয় না এটি। তখন তা রূপ নেয় মদ, গাঁজাসেবীদের আস্তানায়। এ ছাড়া প্রবেশমুখে হকারদের উৎপাত তো লেগেই থাকে। সন্ধ্যার পর এই আন্ডারপাসে নামলে ছিনতাইকারী অথবা মাদকসেবীদের খপ্পরে পড়তে হয়।

গুলিস্তান এলাকার আন্ডারপাসটি শুরু থেকেই মার্কেট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আন্ডারপাসে ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মার্কেট’ লেখা থাকলেও ভিতরে ভ্যাঁপসা গন্ধে বমি হওয়ার উপক্রম। আন্ডারপাসের ভিতরে দুই পাশে মোবাইল সরঞ্জামাদির দোকানের কারণে সংকুচিত হয়ে গেছে হাঁটার রাস্তা। বাইরে দুই পাশে শুয়ে থাকে ভাসমান মানুষ। রাতে অবস্থান নেয় ছিনতাইকারী আর ভাসমান পতিতারা। মার্কেটের ক্রেতারাও টার্গেটে থাকে ছিনতাই চক্রের।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত আন্ডারপাসটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রজাপতি গুহা’। ভিতরে রং-বেরঙের সাঁটিয়ে রাখা প্রজাপতি মাসখানেক আগেও এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছিল। নিরাপত্তার জন্য দিনে-রাতে মোট ছয়জন নিরাপত্তাকর্মী ও দুজন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োজিত ছিল। পুরো এলাকা ঘোষণা ছিল ধূমপানমুক্ত। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেছে বেহাল দশা এ আন্ডারপাসটিরও। ভিতরে একটি টেলিভিশন ছিল, সেটিও নষ্ট রয়েছে। গুহার দুই পাশে-মুখে আবাস ভাসমান মানুষদের। সারাদিনই এখানে চলে মাদক, গাঁজা সেবন। নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো কর্মী। ভিতরের পরিবেশও নোংরা। দিনের বেশির ভাগ সময়ই লাইটিং ব্যবস্থা থাকে বন্ধ। সেখানে এক ভুতুড়ে পরিবেশ। আন্ডারপাসের ভিতরে অবস্থান নেয় হকাররাও। পথচারীরা বলছেন, যাত্রী স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে রাজধানীর আন্ডারপাসগুলো ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তোলা জরুরি।

রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ফলমূলের মৌসুম হওয়ায় গাবতলীতে বর্জ্য বেশি হচ্ছে। ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট নিয়মিত এটি তদারকি করছে। আর কারওয়ান বাজারে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেট্রোরেলের কলাম বসানো হবে। তখন এই আন্ডারপাস আর থাকবে না। তাই বড় কোনো সংস্কার কাজে যাওয়া হচ্ছে না এ আন্ডারপাসের। কিন্তু পথচারী চলাচলে যেসব কার্যক্রম অব্যাহত রাখা প্রয়োজন সেটি করা হচ্ছে নিয়মিতই।

সর্বশেষ খবর