মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

অচল ড্রেনে জলজট

জয়শ্রী ভাদুড়ী

অচল ড্রেনে জলজট

রাজধানীর অধিকাংশ ড্রেন নিয়মিত সংস্কার হয় না। পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগরজুড়ে দেখা দেয় জলজট। তলিয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ। সম্প্রতি মতিঝিল থেকে তোলা ছবি : রোহেত রাজীব

মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকায় বৃষ্টি হওয়ার তিন ঘণ্টা পরেও নামে না পানি। রাস্তার পাশের ড্রেনগুলো বদ্ধ থাকায় বৃষ্টির পানি রাস্তা ছেড়ে ঢুকে যায় বাড়ির চৌহদ্দিতে। কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশন আর ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থার দায়িত্ব হস্তান্তর নিয়ে টানাপড়েনে জলাবদ্ধতা নিয়ে বাড়ছে দুর্ভোগ। পানি নিষ্কাশন মাধ্যমের টেকসই উন্নয়নে বিভিন্ন সময় ভালো কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যর্থ হচ্ছে চেষ্টা।

জানা যায়, ঢাকা শহরে দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি আবাসন খাত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। তবে সিটি করপোরেশন আওতাভুক্ত ১২৭ দশমিক ৬৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম সরাসরি পরিচালনা করছে ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ লাইন রয়েছে দুই হাজার কিলোমিটারের কিছু বেশি। আর ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ লাইন রয়েছে ৩৭০ কিলোমিটার। যদিও ঢাকা ওয়াসার আওতাভুক্ত এলাকা ৪০০ বর্গকিলোমিটার। সব এলাকায় ঢাকা ওয়াসা ড্রেনেজ সিস্টেম গড়ে তুলতে পারেনি। অন্যদিকে রাজধানীতে ঢাকা জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন ২৬টি খাল রয়েছে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে ঢাকা ওয়াসা। দখল-ভরাটে এসব খালের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে মাণ্ডা, হাজারীবাগ, কসাইবাড়ী, সাংবাদিক কলোনি ও বাইশটেকি খাল ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড হয়ে রয়েছে। ব্যক্তিমালিকানায় চলে যাওয়া খালগুলো টিকিয়ে রাখতে ঢাকা ওয়াসা খালের জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও প্রকল্প অনুমোদন না পাওয়ায় সেসব উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলা প্রশাসন মালিকানাধীন খালগুলোও দখল ও ভরাটের কবলে হারিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন খালগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চালালেও ঠিক কাজ আসছে না উদ্যোগগুলো।

তাই দুই ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পর মতিঝিল, টিকাটুলী অভয়দাস লেন, বঙ্গবাজার, পল্টন, রাজারবাগ, শান্তিনগর, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, আজিমপুর, শনির আখড়া, বাসাবো, পূর্ব জুরাইন, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন  রোড, আদালতপাড়া, চকবাজার রোড, শিক্ষা বোর্ড, খাজে  দেওয়ান, শহীদ মিনার রোড, নাজিরাবাজার, বংশাল, নবাবপুর  রোড, নর্থ সাউথ রোড পানিতে তলিয়ে যায়। এসব এলাকায় বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে পড়ায় মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়ে। অনেকে নিজ বাসস্থান আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পানি সেচে সরানোর চেষ্টা করেন। মিরপুর, শ্যামলী, কালশী, বাড্ডা, খিলক্ষেত, রায়েরবাজার,  মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, দক্ষিণ বনশ্রীসহ আরও অনেক এলাকায় দেখা যায় জলাবদ্ধতা। অফিসপাড়া হিসেবে পরিচিত মতিঝিল এলাকার প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার অধিকাংশ ড্রেন বদ্ধ হয়ে আছে ময়লা, প্লাস্টিক আর পলিথিন দিয়ে। এগুলো পরিষ্কার করতে নেই কোনো উদ্যোগ। তাই বাসাবাড়ির পানিই এই ড্রেন দিয়ে প্রবাহিত হতে না পেরে ভাসিয়ে দেয় পাশের সড়ক। এসব ড্রেনেজের দায়িত্ব নিতে মেয়ররা রাজি হলেও সমন্বয়ের অভাবে আটকে আছে সে উদ্যোগ।

ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং জলাবদ্ধতা নিরসন বিষয়ে নগরবিদ মোবাশ্বের হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা নয় আছে জলজট। ড্রেন এবং খালগুলো সচল না থাকায় বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার কোনো রাস্তা পায় না। ঢাকার আশপাশের সব খাল এবং পুকুর ভরাট হয়ে গেছে, অনেকগুলো দখল হয়ে গেছে। কালভার্টের ১১ ইঞ্চি ফাঁকাতে ময়লা জমে শক্ত হয়ে এখন ফাঁকা আছে ৩ ইঞ্চি মতো। কারও একক উদ্যোগে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। মানুষকে এই জলজট থেকে বাঁচাতে প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পিত উদ্যোগ।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগ এগুলো ঠিকঠাক করে দিলে আমরা নিতে রাজি আছি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমন্বয় সভা করে ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগ আমরা বুঝে নেব।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর