মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

কেউ কি আছেন উত্তরাকে যানজটমুক্ত করার?

নিজস্ব প্রতিবেদক

কেউ কি আছেন উত্তরাকে যানজটমুক্ত করার?

‘‘ব্যস্ততম বিমানবন্দর চৌরাস্তায় রশি থেরাপিও ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। উত্তরার মতো আধুনিক শহরে বসবাস অথচ অশিক্ষিত মানুষের মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার যেন নিয়মে পরিণত  হয়েছে

 

গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে রাজধানী ঢাকার যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। জীবনীশক্তি, সময় ও জ্বালানি নষ্টকারী নগরজীবনের এমন যন্ত্রণা নিয়ে কেউ কাজও করছেন না, কথাও বলছেন না। ঢাকার অন্য এলাকার চেয়ে উত্তরা মডেল টাউনের যানজট এখন যানজটের মডেলে পরিণত হয়েছে। সপ্তাহের কোনো কোনো দিন উত্তরা ২৪ ঘণ্টাই অচল থাকে। প্রায় প্রতিদিন আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ এটি মাত্র ৮ মিনিটের পথ। জসীম উদ্দিন সড়কের মোড় থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লাগে কমপক্ষে ৪৫ মিনিট। অথচ এটি মাত্র ৩ মিনিটের পথ। একইভাবে উত্তরামুখী যানবাহনকে আটকে থাকতে হয় খিলক্ষেত ওভারব্রিজের নিচ থেকেই। যানবাহন নিয়ে আবদুল্লাহপুর পার হতে পারলেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন চালকরা। রাজধানীর একমাত্র মডেল টাউনের এখনই এই অবস্থা, আগামী পাঁচ বছর পর কি হবে তা কল্পনাই করা যায় না। কারণ, উত্তরায় রাজউক প্রায় ৫৪ হাজার ফ্লাট তৈরি করছে। সেই সঙ্গে যোগ হতে পারে বেসরকারি আরও সমপরিমাণ ফ্লাট। প্রতি ফ্লাটে একটি করে গাড়ি থাকলে কোন পথ দিয়ে এগুলো চলবে তা এখনই ভাবতে পারছেন না উত্তরাবাসী। বর্তমানে যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উত্তরাবাসীর অনেকেরই এখন প্রশ্ন, কেউ কী আছেন উত্তরাকে যানজটমুক্ত করার?

বর্তমান অবস্থা সরেজমিন ঘুরে এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর জন্য দায়ী দায়সারা ট্রাফিক পুলিশিং ব্যবস্থা, আবদুল্লাহপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোর বেপরোয়া চলাচল, সেক্টরের ভিতরের রাস্তাগুলোতে বাস-ট্রাক ঢুকে যাওয়া এবং ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে যত্রতত্র দৌড় দিয়ে পথচারী পারাপার। আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সিগন্যালে গাড়ি ছাড়া ও গাড়ি বন্ধ করা ছাড়া যেন ট্রাফিক পুলিশের আর কোনো দায়িত্ব নেই। প্রতিটি সিগন্যাল পয়েন্টে মিনিবাসগুলো বিশেষ করে আবদুল্লাহপুর-মিরপুর রুটের বাসগুলো বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। একটি আরেকটির সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে। আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে অন্য গাড়ির চলাচল বন্ধ করে দেয়। অন্য রুটের কোনো বাস হোক বা প্রাইভেটকার হোক না কেন সাইট দেয় না। শাহজালাল অ্যাভিনিউ, জসীম উদ্দিন সড়কের মোড়, ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়ক, হাজী ক্যাম্প সড়ক ও খিলক্ষেত রেলগেট সড়কের মুখ বন্ধ করে দিয়ে এসব বাস দাঁড়িয়ে থাকে পুলিশের সামনেই। ফলে এসব সড়কে অন্য গাড়ি ঢুকতেও পারে না, বেরও হতে পারে না। মিরপুর রুটের প্রতিটি বাস নিজেদের মধ্যে সারাক্ষণ মারামারি করে চলাচলের কারণে কোনোটিরই গায়ে রংয়ের পলেস্তারা নেই। সেই সঙ্গে আরেক যন্ত্রণা হলো মূল সড়কের পাশের লেনে  বাস ও ট্রাক ঢুকে সেক্টরের ভিতরের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া। উত্তরা পূর্ব থানা এসব বেপরোয়া যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বাঁশ দিয়ে নিজেদের নিরাপদ রেখে আত্মতৃপ্তিতে আছে। উত্তরার যানজটের আরেক কারণ দৌড়াদৌড়ি করে রাস্তা পারাপার হওয়া।

চাকরিজীবী, ছাত্র, গার্মেন্ট শ্রমিক এমনকি বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের অনেকেই ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে দৌড় দিয়ে রাস্তা পারাপার হন এ সড়কে। ব্যস্ততম বিমানবন্দর চৌরাস্তায় রশি থেরাপিও ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। উত্তরার মতো আধুনিক শহরে বসবাস অথচ অশিক্ষিত মানুষের মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর