মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফের বেদখল গুলিস্তানের ফুটপাথ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ফের বেদখল গুলিস্তানের ফুটপাথ

ছবি : জয়তাি রায়

ফের হকারদের দখলে গুলিস্তান ও আশপাশের ফুটপাথ এলাকা। ফলে গুলিস্তান ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফের যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর গুলিস্তান ও আশপাশের যানজট নিরসনে আট মাস আগে ফুটপাথ থেকে সব হকার উচ্ছেদ করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ সময় দিনে ফুটপাথে পসরা নিয়ে না বসে সন্ধ্যার পর বসার নির্দেশও দেওয়া হয়। এতে যানজট অনেকটা কমে আসায় সুফলও পেয়েছিল নগরবাসী। কিন্তু উচ্ছেদের আট মাসের মাথায় চাঁদাবাজরা আবারও ফুটপাথ দখলে নিয়ে হকার বসার ব্যবস্থা করেছে। ফলে আগের মতোই সকাল থেকে ফুটপাথ দখল করে হকাররা বসছে।

ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গুলিস্তান, পল্টন ও মতিঝিলের ফুটপাথ ফাঁকা রাখতে প্রায় প্রতিদিনই ডিএসসিসির পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়। তবে এর ফাঁকে ফাঁকে কিছু হকার দিনের বেলা পণ্যের পসরা নিয়ে বসে। তাদের অনেককে আটক করে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তিনি বলেন, ওই ফাঁকা চিত্র ধরে রাখতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সাবেক প্রায় ৭০ জন সদস্যকে নিয়োগ দেওয়ার কাজ চলছে। তাদের নিয়োগ দেওয়া সম্পন্ন হলে চলতি মাসের শেষদিকে তারা কাজ শুরু করবেন। কোনোক্রমেই দিনের বেলা ফুটপাথে হকার বসতে দেওয়া হবে না। তবে হকারদের পুনর্বাসনে কাজ করছে ডিএসসিসি।

সরেজমিন দেখা গেছে, টানা সাত মাস ফাঁকা থাকার পর গুলিস্তান, পল্টন ও মতিঝিলের ফুটপাথে দিনের বেলা আবার হকার বসতে শুরু করেছে। এতে এসব এলাকার চিরচেনা সেই ঘিঞ্জি চিত্র ফিরে এসেছে। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, এই ফাঁকা অবস্থা ধরে রাখতে বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ৭০ জন সাবেক সদস্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই তারা মাঠে নামবেন।

জানা গেছে, ডিএসসিসির লাগাতার অভিযানের কারণে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গুলিস্তান, পল্টন ও মতিঝিলের ফুটপাথ দিনের বেলায় একেবারে ফাঁকা ছিল। এতে এসব এলাকায় যানজট কমে যায়। এই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন টিকেছিল প্রায় আট মাস। কিন্তু দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দিনের বেলা আবার হকাররা ফুটপাথে বসতে শুরু করেছে। এতে পথচারীদের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। এসব এলাকার সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাথে হরেক রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে দুই শতাধিক হকার। এতে পথচারীদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কেও যানজট লেগে আছে। একইভাবে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু পাতাল মার্কেট, সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স, ঢাকা ট্রেড সেন্টার (উত্তর-দক্ষিণ), গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার ও সুন্দরবন মার্কেটের সামনে ঝুড়িতে জুতা, ফল, জামাকাপড়, শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বসেছে আরও তিন শতাধিক হকার। দরদাম করে কেনাকাটাও করছে ক্রেতারা। এছাড়া, বায়তুল মোকাররম উত্তর ফটক ও দক্ষিণ ফটক, জিপিও মোড়, পুরানা পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল এলাকায় শতাধিক হকার বসতে দেখা গেছে। তাদের অধিকাংশই ভ্যানে ও স্থায়ী মাচার ওপর পসরা সাজিয়েছে। গুলিস্তানে পথচারীর অনেকেই বলেছেন, এসব এলাকায় আগে ১০ থেকে ১২ হাজার হকার বসত বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি। সেই তুলনায় এখন ফুটপাথ ফাঁকাই বলা যায়। তবে এক সপ্তাহ ধরে অল্প অল্প করে দিনের বেলা ফুটপাথে আবার হকারের সংখ্যা বাড়ছে। মতিঝিলে পথচারী আবদুল আহাদ বলেন, টানা উচ্ছেদে গুলিস্তান ও আশপাশের ফুটপাথ ফাঁকা। শুরুর দিকে তো এই এলাকাগুলো অচেনা মনে হতো। ডিএসসিসিকে এই অবস্থা ধরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিদিনই অভিযান চালাতে হবে। আবার আগের মতো ফুটপাথ দখল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। 

জানা গেছে, ৪০ জন চাঁদাবাজের দখলে রয়েছে গুলিস্তান ও আশপাশের ফুটপাথ। ডিএসসিসি উচ্ছেদের পর এই চাঁদাবাজরা গা ঢাকা দিলেও এখন আবার ফুটপাত তাদের দখলেই রয়েছে। এসব চাঁজাবাজদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও ডিএসসিসির পক্ষ থেকে তা আর করা হয়নি। গুলিস্তান এলাকার ফুটপাথের ৪০ জন চাঁদাবাজের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। এরাই গুলিস্তান ও আশপাশের ৪০-৪৫টি ফুটপাথের হকার্স মার্কেট নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এখান থেকে তারা প্রতি মাসে দুই কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করে।

 

সর্বশেষ খবর