মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
আনন্দ স্কুল

রেলস্টেশনে পথশিশুদের আনন্দ স্কুল

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

রেলস্টেশনে পথশিশুদের আনন্দ স্কুল

রেলস্টেশন। প্লাটফর্মজুড়ে মানুষের হৈ-হুল্লোড়। ভালো মানুষের সঙ্গে আছে মাদকসেবী-বিক্রেতা, চোর ছিনতাইকারী আর পতিতা। ট্রেন এসে স্টেশনে থেমেছে।

মানুষ দৌড়াচ্ছে ট্রেনের দিকে। এদিকে প্লাটফর্মের কোনে ছন্দ তুলে পড়ছে কিছু শিশু। ‘ট্রেন চলেছে-ট্রেন চলেছে, ট্রেনের বাড়ি কই...’। ট্রেনের যাত্রীরা যেন শিশুদের ওপর উঠে না পড়েন তাই তাদের আগলে দাঁড়িয়ে যান কিছু কলেজ শিক্ষার্থী। দৃশ্যটি কুমিল্লা রেলস্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মের। শনি ও বুধবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় এখানে শিক্ষার্থীদের আনন্দ স্কুল বসে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ২০১৪ সালে দুর্বার ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন গঠন করেন। তারা পথশিশুদের পড়ানো এবং মাদক, বাল্যবিয়ে ও ইভ টিজিংয়ের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। কুমিল্লা রেলস্টেশনে ৬০ জন এবং লাকসাম জংশনে ৩৫ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানো হয়। এই সংগঠনে ১ হাজার ৭০০ স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। তাদের চাঁদায় এই সংগঠন চলে। শিশুদের পোশাক, বই, খাতা, কলম দেওয়া হয়। মাঝে মাঝে ভালো খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়। শিশু শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের অভিভাবক ভিক্ষুক, কিছু আছেন ফেরিওয়ালা। কয়েকজনের অভিভাবক নেই।

স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, কারও পরনে জামা নেই। কারোরটা ছেঁড়া-ময়লা। কিন্তু আনন্দের কমতি নেই। ছড়া, কবিতা পড়ছে। গান গাইছে, পিটি করছে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আরিফ চৌধুরী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।

অভিভাবকহীন শিশু সুজন সরকারের (১০) বাড়ি বগুড়ার মহাস্থান গড়ে। বাবা সাপুড়ে। মা মারা গেছেন। বাবা আরেক বিয়ে করেছেন। তারা দুই ভাই, তিন বোন। খাবার না পেয়ে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। এখন ট্রেনে ভিক্ষা করে। কুমিল্লা রেলস্টেশনে খায়-ঘুমায়।

সুজন জানায়, তার হাত-পা ভাঙা, তাই ভারী কাজ করতে পারে না। স্টেশনের স্কুলে পড়তে তার ভালো লাগে। সে প্রতিবেদককে ‘কেন বাঁধো দালান ঘর ও মন আমার’ শিরোনামে একটা গানও শুনিয়ে দেয়। সে পড়ালেখা শেষে চাকরি করতে চায়। আগে সুজন সিগারেট খেত, স্কুলের স্যার নিষেধ করায় ছেড়ে দিয়েছে।

অন্তু নামের এক শিক্ষার্থীর মা পারভীন বেগম বলেন, তারা এসেছেন নোয়াখালীর চৌমুহনী থেকে। স্বামী শুক্কুর আলী রিকশাভ্যান চালান। রেলের পাশের বস্তিতে তারা থাকেন। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। এখানে এসে ছেলে আনন্দের সঙ্গে পড়ছে বলে তিনি জানান।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আরিফ চৌধুরী বলেন, তারা সমাজে পরিবর্তন আনতে চান। যারা শিক্ষার আলো থেকে দূরে তাদের আলো দিতে চান। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও শিক্ষার সঙ্গে তারা মাদক, বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং নিয়ে কাজ করছেন। স্টেশন মাস্টার তাদের সহযোগিতা করছেন। স্টেশনের পাশে একটি ঘর হলে শিক্ষার্থীদের আরও সুশৃঙ্খলভাবে পড়ানো যেত বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর