মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

৫৪ খালের মধ্যে উদ্ধার মাত্র ৫টি

মাহবুব মমতাজী

 ৫৪ খালের মধ্যে উদ্ধার মাত্র ৫টি

উদ্ধারের পরও আশপাশের বর্জ্যে ভরাট হচ্ছে কল্যাণপুর খাল

ঢাকার সরকারি খালগুলোর অবৈধ দখলদার স্থানীয় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনরা। তারা রীতিমতো খালকে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করে সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্র বসিয়েছেন। এই দখলদারদের ২০০ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। এ তালিকার প্রায় ১৩ মাস পর ৫৪টি খালের মধ্যে মাত্র ৫টি খাল উদ্ধার হয়েছে। সরকারি খালে অবৈধ দখলদারদের নিয়ে তৈরি করা জেলা প্রশাসনের একটি তালিকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছে।       

ঢাকা ও আশপাশের খালগুলো অবৈধ দখলের কারণে বৃষ্টি হলেই রাজধানীর পথঘাট তলিয়ে যায়। কাদাপানি-ময়লা-আবর্জনায় নাকানি-চুবানি খায় নগরবাসী। কিন্তু সমাধান কোনো কিছুই হয় না। বর্ষায় রাজধানীর বেহাল দৈন্যদশায় এখন নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা। তবে এখনো জেলা প্রশাসনের তৈরি করা অবৈধ দখলদারদের তালিকা নিয়ে কাজ শুরু হয়নি। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) জানান, অবৈধ দখলদাররা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক হওয়ায় তাদের কাছ থেকে খাল পুনরুদ্ধার করা অনেক কঠিন।

গত বছরের ১৮ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শহীদুল ইসলামের স্বাক্ষরে সরকারি খাল অবৈধ দখলমুক্ত করতে একটি তালিকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পাঠানো হয়। একই ধরনের আরেকটি তালিকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও পাঠানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, তৈরি করা তালিকাটি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। খালগুলোর অধিকাংশের মালিক জেলা প্রশাসন। তাদেরই উচিত হবে সেগুলো উদ্ধার করে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা। যদি তারা না পারে তাহলে স্থানীয় সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এমন ক্ষমতা দিতে হবে যাতে সিটি করপোরেশন এককভাবে অবৈধ উচ্ছেদ করতে পারে। এক্ষেত্রে আইন সমানভাবে প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। তা নাহলে ক্ষমতার পরিবর্তনে আরেক সরকারের ছত্রছায়ায় অন্য কেউ আবারও খাল দখল করবে। তবে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন উভয়ের নিজস্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। এ দুই সংস্থা যদি চায় তাহলে পুলিশের সহায়তা নিয়ে যে কোনো সময় খাল উদ্ধারে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারবে। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়ার আনোয়ার হোসেন জানান, জেলা প্রশাসনের দেওয়া তালিকার মধ্যে কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধ এলাকার তিনটি, খিলগাঁয়ে একটি এবং নন্দীপাড়া খালটি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া খাল উদ্ধারের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। তারা যদি সহযোগিতা চায় সেক্ষেত্রে আমরা তাদের লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে থাকি।

তালিকা থেকে জানা যায়, ১৫৪ জন অবৈধ দখলদার নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খালটির এক পাশ ভরাট করে মুদি দোকান, দলীয় ও সমিতির কার্যালয়, ফার্মেসি, গ্যারেজ, চা ও কাপড়ের দোকান বসিয়েছেন। ঘোপদক্ষিণ খালেরও এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। সেই স্থানে বর্তমানে লতিফ বাওয়ানী জুট মিল অবস্থিত। শাহবাগ থেকে বেগুনবাড়ী খালের সঙ্গে সংযোগ থাকা পরিবাগ খালটি এখন কালভার্ট হিসেবে আছে। ধানমন্ডি সার্কেলে রামচন্দ্রপুরের বিভিন্ন খাল দখলে রেখেছে নবীনগর হাউজিংয়ের আমিন উদ দৌলা, সিরাজ উদ দৌলা, রাজধানী উদ্যানের পক্ষে ইউসুফ সিকদার ও আবদুল রশিদ সিকদার।

রায়েরবাজার সুলতানগঞ্জে খালের অবৈধ দখলদাররা হলেন- আবদুল মালেক, জাহাঙ্গীর, খাইরুল ইসলাম, আলামিন, কালাম মোল্লা, ফারুক, ছালাম মোল্লা, স্বপন, মুরাদ আহম্মেদ, ওমর ফারুক মিয়া, নুর হোসেন, হুসাইন আহম্মেদ, আবুল কালাম, মোসলেম উদ্দিন পাটোয়ারী, শাহ আলম, বাবু, কদম আলী মৃধা, হারুন দেওয়ান, আ. মান্নান, আবুল কালাম, ডা. ফয়েজ, তানহা ভিলা, মনির খান, জেবুন্নেসা, শামীম খান ও নেওয়াজ হোসেন। কোতোয়ালি সার্কেলে থাকা ধোলাইখালটি এখন সড়ক ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা। কেরানীগঞ্জে শুভাড্ডা খালের অবৈধ দখলদাররা হলেন- আসাদ মিয়া, আলাউদ্দিন, আমীর, জলিল, জহির, সাহা, হানিফ মিয়া, মোতালেব হোসেন, সিহাব, ইদ্রিস বেপারি, হাজী আবুল কাশেম, সেন্টু হাজী, জসিম উদ্দিন, মিন্টু, ইনু হাজী, তোফাজ্জল হোসেন, ছোরহাব, রাজু, আওলাদ মিয়া, আয়নাল, ফারুক, আবদুল মজিদ, আবদুল ছালাম, নুরু মিয়া, আ. বারেক, লাল বানু, চিনি বেগম, রমজান মেম্বার, অভি মিয়া, কানা রবি মিয়া, মোহাম্মদ আলী, সোহেল, আ. ছাত্তার, মিজান, ইয়াদ আলী, জুম্মন মিয়া, সেলিম, আসাদ মিয়া ও আবদুর রাজ্জাক। লালবাগ সার্কেলের কামরাঙ্গীরচর খালের অবৈধ দখলদাররা হলেন- কামাল উদ্দিন, মোসলেম উদ্দিন, ইসমাঈল, কামাল মেম্বার, পান্না ব্যাটারির এমডি লোকমান হোসেন ও তাইজ উদ্দিন। কালুনগর খালের অবৈধ দখলদাররা হলেন- রফিক রানা, হাজী মিলন, রুহুল আমিন, মো. জোয়ার্দ্দার, নুরু মিয়া, রোকন, আবুল মিয়া, সবুজ মিয়া, আবদুল খালেক, তাসলিমা খাতুন, আবুল বাসার বশির, মো. মাছুম, সেলিম মিয়া, পলি বেগম, আবদুল ছামাদ, মজিবর রহমান মজু, কেএম সিদ্দিক আলী, আলম সরকার, ইকবাল, আনোয়ার হোসেন আনু, শরীফ, রনি মিয়া, স্বপন, জনি, আলী হোসেন এবং ইঞ্জিনিয়ার মো. শহিদুল্লাহ।

 

সর্বশেষ খবর