মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকার পার্কে প্রশান্তির খোঁজ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ঢাকার পার্কে প্রশান্তির খোঁজ

ঢাকার পার্কে প্রশান্তির খোঁজে নিমগ্ন নগরবাসী। ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর ও মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে ধ্যানচর্চা

সকাল ছয়টা। গাছের পাতার ফাঁক গলে ঠিকরে পড়ছে সূর্যের প্রথম আলোক রশ্মি। তখনো জাগেনি শহর। কিন্তু নিরোগ শরীর, প্রশান্ত মন, সুস্থ জীবনের সন্ধানে জেগে উঠেছেন কিছু স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ। শহরের পার্কগুলোতে শারীরিক কসরত, ধ্যান এবং যোগব্যায়ামে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। রাজধানীর বিভিন্ন উদ্যান এবং পার্কগুলোতে অসংখ্য মানুষের দিন শুরু হয় সুস্থ থাকার প্রত্যয় নিয়ে।

এই উদ্যোগের পালে হাওয়া দিতেই গত ২১ জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হলো বিশ্ব যোগ দিবস। সুস্থ নিরোগ বিশ্ব জনসম্পদ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পালন করে দিনটি। ইয়োগা বা যোগব্যায়াম শুধু রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণই করে না, অনেক রোগ নিরাময়েও ভূমিকা রাখে। প্রাণায়াম, যোগাসনের বিভিন্ন মুদ্রা এবং ধ্যান বা মেডিটেশনের সমন্বয়ই ইয়োগা বা যোগ। বিশ্বজুড়ে যোগচর্চায় অসংখ্য মানুষ কাটিয়ে উঠছে হতাশা আর মানসিক অবসাদ। উপমহাদেশে উদ্ভাবন হলেও এর চর্চা এখন সবচেয়ে বেশি পশ্চিমা দেশগুলোয়। তবে এ অঞ্চলে চর্চা বাড়ছে গত কয়েক বছর থেকে। বাংলাদেশে যোগ দিবসের আয়োজনে এবার ১০ হাজার মানুষকে জড়ো করেছিল ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিশ্ব যোগ দিবস পালনের উদ্যোগে অংশগ্রহণকারীদের গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পুরস্কারও দেওয়া হয় লটারি করে।

বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ধ্যানচর্চা বা মেডিটেশন। এটি এখন পরিপূরক চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ওজন কমানো, নমনীয় শরীর, উজ্জ্বল ত্বক, প্রশান্ত মন, সুস্বাস্থ্য— সবকিছুই মিলবে ধ্যানচর্চায়। এতে সমাধান মিলছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন, করোনারি আর্টারি ব্লকেজসহ জটিল শারীরিক সমস্যার। এসব কার্যকারিতার কারণেই বাংলাদেশে ধ্যান বা মেডিটেশনচর্চা এখন সামাজিক আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন পার্ক, উদ্যান ও খোলা চত্বরে এখন অসংখ্য মানুষ সম্মিলিত ধ্যানচর্চায় অংশ নেন। বিশেষ করে ঢাকার পার্কগুলোতে ভোরে যারা শরীরচর্চা করতে যান তাদের অনেকেই মেডিটেশনেও অংশ নেন। ধ্যানচর্চা এখন নাগরিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ শারীরিক-মানসিক সুস্থতার জন্য নিয়মিত ধ্যানচর্চা করেন। বাংলাদেশে ধ্যান বা মেডিটেশনচর্চার নেতৃত্ব দিচ্ছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। মেডিটেশন ও কোয়ান্টাম এখন সমার্থক। সংগঠনটির স্থানীয় উদ্যোগে রমনা পার্কে নিয়মিত মেডিটেশন হয় ‘প্রশান্তি রমনা’র তত্ত্বাবধানে। ধানমন্ডি লেকে প্রতিদিন ভোরে মেডিটেশন করেন প্রাতঃভ্রমণকারীরা। গুলশান সাউথ পার্কে নিয়মিত মেডিটেশন হয় মহাখালী শাখার উদ্যোগে। এ ছাড়া মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনেও নিয়মিত মেডিটেশনে বসেন সেখানকার একটি প্রি-সেলের উদ্যোগে।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পরিচালক সমন্বয় মিসেস সুরাইয়া রহমান বলেন, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাদের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। সরকারও আমাদের কাজের প্রশংসা করছে। ব্যক্তিগত উৎকর্ষতার উন্নয়নে উপজেলা নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে আমাদের প্রশিক্ষণগুলো চলছে। সুপ্ত ক্ষমতাকে জাগ্রত করে পরিশুদ্ধ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। 

উল্লেখ্য, পার্ক, উদ্যান ও খোলা চত্বর ছাড়াও প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টায় অভিন্ন সময়ে সারা দেশে ধ্যানে মিলিত হন হাজার হাজার মানুষ। সারা দেশে কোয়ান্টামের পাঁচটি সেন্টার, ২৯টি শাখা, ৭২টি সেল, ৭১টি অগ্রসর প্রি-সেল এবং ১০২টি সক্রিয় প্রি-সেল মিলিয়ে মোট ২৭৯টি ইউনিটে হাজার হাজার মানুষ নিজের ও অন্যের কল্যাণে ধ্যানমগ্ন হন। ‘কোয়ান্টাম মেথড’ নামে ধ্যানচর্চার মূল কোর্সটি আগামী মাসেই সাড়ে চারশ সংখ্যার মাইলফলক স্পর্শ করবে। এটির উদ্ভাবক শহীদ আল বোখারী মহাজাতক কর্তৃক এককভাবে পরিচালিত মেডিটেশনচর্চার এক বিশ্ব রেকর্ড বলে মনে করা হয়।   

কোয়ান্টামের ধ্যানচর্চাকে কেন্দ্র বান্দরবানের লামা ঘুরে এসে রাজধানীতে একটি ‘গোস্বা নিবারণী পার্ক’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি জানান, রাজধানীর মানুষের প্রশান্তিতে বাড়তি সুবিধা যোগ করতে এই পার্কে জলের আধার থাকবে। চা, কফি, স্যান্ডউইচ খাওয়া ও হারানো দিনের গান শোনার ব্যবস্থা থাকবে। তাই যখন মানুষ এখানে আসবে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মন ভালো হয়ে যাবে, উত্ফুল্ল হবেন নগরবাসী। 

সর্বশেষ খবর