মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

আন্ডারপাস হচ্ছে বিমানবন্দর মোড়ে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

আন্ডারপাস হচ্ছে বিমানবন্দর মোড়ে

ব্যস্ত বিমানবন্দর মোড়ের একাংশ। এখানেই পথচারী পারাপারে নির্মিত হচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট আন্ডার পাস ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশন বিমানবন্দর মোড়ে একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ফলে বিমানবন্দর মোড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পারাপারের ভোগান্তি দূর হবে। মানুষকে ফুটওভারব্রিজে তুলতে পুলিশের নিত্যদিনের ভোগান্তি কমবে। দুর্ঘটনায় মৃত্যুমুখ থেকে বেঁচে যাবে অসংখ্য মানুষের প্রাণ।

গত ১২ আগস্ট রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে আন্ডারপাস নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বিমানবন্দর মোড়ে আন্ডারপাস নির্মাণের ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, কুর্মিটোলার এই আন্ডারপাস ছাড়াও ঢাকায় আরও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে ঢাকা বিমানবন্দর পর্যন্ত একটি এবং সংসদ সদস্য ভবন থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত অরেকটি আন্ডারপাস হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে বিমানবন্দর সংলগ্ন গোলচত্বর এলাকায় রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে প্রায় অর্ধশত দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন ২৫ জন। আহতের সংখ্যা শতাধিক। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে প্রাণে বাঁচলেও পঙ্গু হয়েছেন অনেকে। যাত্রীদের অসতর্কতা, হুড়োহুড়ি করে রাস্তা পারাপার যেমন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, তেমনি দায় রয়েছে ট্রাফিক পুলিশেরও। যেখানে গাড়ি থামবে না বলে নির্দেশনা রয়েছে, সেখানেই ট্রাফিক পুলিশের নাকের ডগায় থেমে থাকে অনেক গাড়ি।

বিমানবন্দর থানার একজন কর্মকর্তা জানান, মহাসড়ক হওয়ায় এখানে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান চালকরা। গোলচত্বর থেকে ফুট ওভারব্রিজের দূরত্ব বেশি হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন পথচারীরা। এ ছাড়া বিমানবন্দরে গ্রাম থেকে আসা সাধারণ মানুষ ট্রাফিক সিগন্যাল বুঝতে পারেন না। রাস্তায় স্পিড ব্রেকারও দুর্বল। এখানে পাতালপথ (আন্ডারপাস) করা না হলে দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না।

উল্লেখ্য, বিমানবন্দর মোড়ের বিশৃঙ্খল অবস্থা দূর করতে একটি আন্ডারপাস ও ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ প্রতিদিন দীর্ঘদিন থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। 

অবশেষে আন্ডারপাস নির্মাণের ব্যাপারে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। এটি যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায় ততই মানুষের ভোগান্তি লাঘব হবে। কারণ, বিমানবন্দর ঘিরে মানুষের পদচারণা দিন দিনই বেড়ে চলেছে। বিমানবন্দর মোড়ে ইতিমধ্যেই দুটি পাঁচ ও তিন তারকা মানের হোটেল ও একটি বৃহদাকার শপিং কমপ্লেক্স তৈরি হয়েছে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান চালু হলে এখানকার জনসমাগম অনেক বেড়ে যাবে। এই বাড়তি মানুষ সামাল দেওয়ার জন্যও জরুরি ভিত্তিতে আন্ডারপাস নির্মাণ করা প্রয়োজন। কারণ, শাহজালালের বিকল্প নতুন আরেকটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও কত বছরে নির্মাণ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এদিকে পুরনো ফুট ওভারব্রিজ ভেঙে নতুন যেটি নির্মাণ করা হয়েছে তাতে মানুষের ভিড় সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিমানবন্দর মোড়ে শুধু আন্ডারপাসই নয়, একটি ফ্লাইওভারও নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই বিমানবন্দরে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ অনেক বেড়ে যাবে। তখন আরও অনেক সুপরিসর বিমান নামবে শাহজালালে। ফলে এয়ার ট্রাফিক বেড়ে যাবে শাহজালাল বিমানবন্দরে। পাশাপাশি বাড়বে মানুষ ও যানবাহনের চাপ। এজন্য শাহজালাল ঘিরে একটি ফ্লাইওভার তৈরি করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।

শাহজালালের দ্বিতীয় ও নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালকে যুক্ত করে নতুন আরেকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা প্রয়োজন। যেটির দুটি লুপ উত্তরা এবং দক্ষিণে র‌্যাডিসন হোটেলের দিকে সম্প্রসারিত হতে পারে। এর ফলে বিমান বন্দরগামী হাজার হাজার যানবাহন এয়ারপোর্ট রোডের যানবাহনের ভিড় এড়িয়ে সহজেই বিমানবন্দরে যেতে-আসতে পারবে। বিমান যাত্রীরা সাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবে। এই সড়কের যানজটে পড়ে প্রতিদিন যে অসংখ্য মানুষ ফ্লাইট মিস করে সেটা লাঘব হবে।

সর্বশেষ খবর