মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
পা ঠ ক প্র তি বে দ ন

মেডিকেল-ইপিজেড-কোটবাড়ি সড়কের সংস্কার নেই

মেডিকেল-ইপিজেড-কোটবাড়ি সড়কের সংস্কার নেই

কুমিল্লা মহানগরীর টমসমব্রিজ-ইপিজেড-মেডিকেল কলেজের ইপিজেড সংলগ্ন ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে তোলা ছবি।

সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি শেষ হওয়া অর্থ বছরের জুন মাসে দু’দফা ৬৪ ও ৭৫ লাখ টাকা সড়কটি সংস্কারে বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি

 

কুমিল্লায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জনদুর্ভোগের কথা বললে প্রথমেই উচ্চারিত হচ্ছে ব্যস্ততম মেডিকেল কলেজ-ইপিজেড-কোটবাড়ি সড়কটির নাম। নগরীর টমসমব্রিজ থেকে পূর্ব-পশ্চিমে বিভক্ত সড়ক দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষের যাতায়াত। ভাঙ্গা সড়কটি মাঝে মাঝে নামমাত্র সংস্কার হয়। এতে দিন কয়েকের জন্য যানচলাচল স্বাভাবিক থাকলেও কিছুতেই জনদুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না। পাশাপাশি পথচারীদের হাঁটার জন্য ফুটপাথ না থাকায় বর্ষা-শীত মৌসুমে হাঁটা-চলায়ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মেয়র, জনপ্রতিনিধি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপড়্গের কোনই খেয়াল নেই। এই সড়কে চলাচল করলে সুস্থ্য মানুষও অসুস্থ হয়ে যায়।

মহানগরীর অন্যতম প্রধান সড়ক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-টমসমব্রিজ-কোটবাড়ি সড়কটি। টমসমব্রিজ থেকে সড়কটির পূর্ব অংশে রয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড), কুমিল্লা সদর উপজেলা পরিষদ, কুমিল্লা কেটিসিসি, হাইওয়ে পূর্বাঞ্চল (কুমিল্লা)’র পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পরিবেশ অধিদফতর, ইবনে তাইমিয়া কলেজ ছাড়াও এই সড়কটি ব্যবহার করে নগরীর ৮টি ওয়ার্ডের জনগণ। পাশাপাশি টমসমব্রিজ থেকে পশ্চিম অংশে জেলা পশু অধিদফতর, সার্ভে ইনস্টিটিউট, আনসার একাডেমি, র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ কার্যালয়, সদর উপজেলার দৌলতপুর, বলারামপুর এলাকা, সিটি করপোরেশনের দুটি ওয়ার্ড, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্বস্থল, ময়নামতি জাদুঘর, কুমিল্লা সেনানিবাস, কুমিল্লা বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দফতর ছাড়াও জেলার সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের লোকজনও এই সড়ক পথে যাতায়াত করে। প্রতিদিন এই সড়কপথে  শত শত রোগী যাতায়াত করছে। জেলার বাইরে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হচ্ছে রোগীদের। কিন্ত্র ভাঙ্গাচোরা সড়কে রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সবচেয়ে দুর্ভোগ গর্ভবর্তী নারীদের। সড়কের এমনই বেহাল দশা যে, রোগী কিংবা স্বজনরা একবারের পর দ্বিতীয়বার এই সড়ক ব্যবহার করতে চায় না। বাধ্য হয়েই তাই অনেকেই নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। নোয়াখালী সদর থেকে আসা এক রোগীর স্বজন রিয়াজ মাহমুদ বলেন, এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে ভালো মানুষই রোগী হয়ে যাবে। 

ভুক্তভোগীরা বলেন, মনে হয় জনপ্রতিনিধিরা ডাক্তারদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে রাস্তা মেরামত বন্ধ রেখেছে। এতে রোগীরা মেডিকেল কলেজে না গিয়ে নগরীর বেসরকারি ক্লিনিকে সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে। ইপিজেড এলাকায় সড়কের পাশে বেসরকারি ব্যাংক বুথের নিরাপত্তাকর্মী বলেন, বৃষ্টি হলে সড়কটিতে পানি জমে যায়। সারা বছর ধরে ভাঙ্গা রাস্তার কারণে যানবাহন চলাচলে যেমন দুর্ভোগ, তেমনি পথচারীদেরও একই অবস্থা। তিনি আরও বলেন, ইপিজেড এলাকায় পুরো বছরই রাস্তায় পানি জমে থাকে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মতিউর জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন ভাঙ্গাচোরা রাস্তা দিয়ে নগরীতে আসা-যাওয়া করছেন। মাঝে মাঝে বড় বড় গর্তে নিম্নমানের ইট-বালু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলেও দুর্ভোগ কমছে না কিছুতেই। কুমিল্লা ময়নামতি জাদুঘরের কাস্ককেই ডিয়ান ড. আব্দুলস্নাহ বলেন, প্রতিদিনই কুমিল্লা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) এবং লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ে আবিষ্কৃত ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ ময়নামতি জাদুঘর দেখতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত পর্যটক এই সড়ক ব্যবহার করে এখানে আসছে। সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সূত্র জানায়, সম্প্রতি শেষ হওয়া অর্থ বছরের জুন মাসে দু’দফা ৬৪ ও ৭৫ লাখ টাকা সড়কটি সংস্কারে বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ব্যস্ততম এই সড়কটি সংস্কারে বরাদ্দ থাকলেও সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে কখনোই মানসম্পন্ন কাজ হয় না। ফলে পুরো বছর ধরেই সড়কটি ব্যবহারকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার বলেন, সড়কটির বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি থেকে কোটবাড়ি হয়ে পার্শ্ববর্তী বরুড়া পর্যন্ত সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান শেষ। ৫০ কোটি টাকার এই সংস্কারের কাজ আগামী ১৫/২০ দিনের মধ্যেই শুরুয হবে।     মামশাদ কবীর, কুমিল্লা

সর্বশেষ খবর