মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফুটপাথের বাধা সরিয়ে নিন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ফুটপাথের বাধা সরিয়ে নিন

রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টন এলাকায় ফুটপাথ দখল করে চলছে জমজমাট ব্যবসা। ভোগান্তিতে পথচারীরা ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা আগারগাঁও-শ্যামলী লিংক রোডের দুই পাশের ফুটপাথ দখল করে বসানো হয়েছে দোকানপাট। অবৈধভাবে ফুটপাথ দখলে থাকায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। শুধু এই রাস্তা নয় মিরপুর, বনানী, গুলশান-১, ফার্মগেট, মালিবাগ, মগবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, বঙ্গবাজার, পুরান ঢাকা এলাকার বেশ কিছু জায়গায় ফুটপাথ দখল করে চলছে রমরমা ব্যবসা।

সরেজমিন মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চিড়িয়াখানা রোডের পুরোটাই ভ্রাম্যমাণ কাঁচাবাজার ব্যবসায়ীদের দখলে। ফুটপাথ পার হয়ে রাস্তায় বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে বসেন তারা। চারপাশে ছাড়ানো রয়েছে মাছের আঁশটে, মুরগির উচ্ছিষ্ট অংশ। ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। কমার্স কলেজ রোডে দেখা যায় ফুটপাথের টাইলস ভেঙে গর্ত করে তৈরি করা হয়েছে টং ঘর। ফুটপাথে বেঞ্চ পেতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে জমজমাট চা বিক্রি। ফুটপাথ বন্ধ থাকায় রাস্তায় যানবাহনের পাশ দিয়ে যাতায়াত করছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই অবস্থা আগারগাঁও-শ্যামলী লিংক রোডের। এই রাস্তার পাশে রয়েছে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), শিশু হাসপাতাল, শিশু মেলা। বিপরীত পাশে রয়েছে জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স অ্যান্ড হসপিটাল। এ ছাড়া পাসপোর্ট অধিদফতর, নির্বাচন কমিশনসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরও রয়েছে এই এলাকায়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকার ফুটপাথ দখল করে দেওয়া হয়েছে খাবার হোটেল, ওষুধের দোকান, ফলের দোকান, জুতার দোকানসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান। সড়কের দুই পাশে বসানো হয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জামের দোকান। এসব দোকানের মূল ক্রেতা হলেন এই হাসপাতালগুলোর রোগীরা।

এই সড়কে দুটি যাত্রীছাউনি বানানো হলেও সেটি দখল হয়ে আছে। যাত্রীছাউনিগুলোতে বসার কোনো জায়গা নেই। ঢাকা শিশু হাসপাতালের সামনের যাত্রীছাউনির ভিতর বসানো হয়েছে ওষুধের দোকান। এর পাশে রয়েছে খাবারের হোটেল। এ ছাড়া জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের সামনের যাত্রীছাউনির ভিতরে রয়েছে দুটি ওষুধ ও একটি চিকিৎসা সরঞ্জামের দোকান। দোকানপাটে ফুটপাথ দখলে থাকায় পথচারীদের জন্য চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। সড়কের দক্ষিণ পাশে শিশু হাসপাতালের সামনের ফুটপাথে দিনের কিছু সময় বসে ছোট ছোট ভাসমান দোকান। ফুটপাথ দখল হয়ে যাওয়ায় ব্যস্ত এই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় মানুষকে। কোনো ফুটওভারব্রিজ না যানবাহনের পাশ কাটিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা।

ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনের চিত্র আরও ভয়াবহ। এখানে ফুটপাথ দখল করে গড়ে উঠেছে চায়ের দোকান, খাবার হোটেল, ফলের দোকান, ফটোকপির দোকান, ভর্তি সহায়ক বিভিন্ন বইয়ের দোকান এবং কাঁচাবাজারও। ফুটওভারব্রিজ থেকে নেমেই ধাক্কাধাক্কি করে যাতায়াত করতে হয় পথচারীদের। আনন্দ সিনেমা হলের সামনে জুতার দোকানগুলো সিটি করপোরেশন উঠিয়ে দেওয়ার ১৫ দিন পার না হতেই আবার বসে গেছে তারা। এ ছাড়া বাদাম, ঝালমুড়ি বিক্রেতারা তো রয়েছেই।

হকার ছাড়াও এখন ফুটপাথে রাজত্ব নিয়েছে মোটরসাইকেল চালকরা। রাস্তায় সিগন্যাল বা যানজট পড়লেই ফুটপাথে মোটরসাইকেল নিয়ে উঠে পড়েন তারা। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুটপাথ। ভেঙে উঠে যাচ্ছে ফুটপাথের টাইলস। গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয় এলাকাজুড়ে। এ সময় টিএসসি মোড় থেকে নীলক্ষেতের দিকে যাওয়া রাস্তায় দেখা যায় অসংখ্যা প্রাইভেট কার, রিকশা, মোটরসাইকেল যানজটে আটকে আছে। ফুটপাথ দিয়ে যাতায়াত করছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা। এ সময় হঠাৎ করে ফুটপাথে মোটরসাইকেল নিয়ে উঠে পড়েন বেশ কয়েকজন চালক। তাদের দেখাদেখি এক সময় সিরিয়াল লেগে যায় ফুটপাথ দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার। কয়েকজন শিক্ষার্থী এতে বাধা দিলে মোটরসাইকেল চালকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।

এসব মোটরসাইকেল চালকদের ফুটপাথ দিয়ে যাতায়াত ঠেকাতে বসানো হয়েছে লোহার খুঁটি। কিন্তু যেসব জায়গায় ফুটপাথে এ ধরনের খুঁটি নেই সেখান দিয়েই নির্বিঘ্নে যাতায়াত করছেন এসব মোটরসাইকেল চালকরা।  এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ফুটপাথ দখলমুক্ত করার বিষয়টি আমাদের চলমান প্রক্রিয়া। আমরা প্রায় ডিএনসিসি এলাকার কোনো না কোনো জায়গায় অভিযান চালাই। কিন্তু অভিযান শেষ হতে না হতেই পরিস্থিতি আবার আগের মতো হয়ে যায়। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর