মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকা ঢেকে যাচ্ছে দৃশ্যদূষণে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ঢাকা ঢেকে যাচ্ছে দৃশ্যদূষণে

ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গেছে রাজধানীর ফুটওভার ব্রিজ থেকে শুরু করে ফ্লাইওভার। ছবিগুলো মিরপুর-১ ও মৌচাক থেকে তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মহাখালী আঞ্চলিক অফিসে ঢুকতেই গেটের পাশে দেয়ালে চোখ আটকে যায়। দেয়ালে একটার ওপর দিয়ে আরেকটা পোস্টার সাঁটানো। এর মধ্যে অধিকাংশগুলোতেই এমপি পদপ্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার। পোস্টারের কবল থেকে বাদ যায়নি খোদ সিটি করপোরেশনের দেয়ালও। নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকায় বাড়ছে দৃশ্যদূষণের প্রতিযোগিতা।

সরেজমিন রাজধানীর গুলশান, বনানী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-১৭ আসনে এমপি পদপ্রার্থী বিভিন্ন ব্যক্তির নামে টানানো হয়েছে পোস্টার। সৈনিক ক্লাব এলাকায় মো. হাচান আলী মোল্লার নামে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে পোস্টার টানানো হয়েছে। ভাসানটেক থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাচান আলী মোল্লার নামে ঢাকা-১৭ আসনের সর্বস্তরের জনগণের নাম দিয়ে বনানীর বিভিন্ন সড়কের দেয়ালে লাগানো হয়েছে এসব পোস্টার। অফিস, বাড়ি বা দোকানের দেয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি, ল্যাম্পপোস্ট যে কোনো জায়গায় তাকালে চোখে পড়বে ভোট প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার।

এক প্রার্থীর পোস্টারের ওপর দিয়েই লাগানো হয়েছে আরেক প্রার্থীর পোস্টার। বনানী চার নম্বর রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, ডানে-বায়ে বিভিন্ন অফিসের দেয়ালে এ কে এম জসিমউদ্দিনের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে পোস্টার লাগানো হয়েছে। বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ আরও বেশ কিছু পদ-পদবি উল্লেখ করে ঢাকা-১৭ আসনের সর্বস্তরের জনগণের নাম দিয়ে পোস্টার টানানো হয়েছে। তার ঠিক দুই হাত দূরত্বে এমপি হিসেবে দেখতে চাই শিরোনাম দিয়ে মো. ওয়াকিল উদ্দিনের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের অর্থ সম্পাদক ওয়াকিল উদ্দিনের নামের পোস্টার দেখা যায় বনানী ১১ ও ১৩ নম্বর সড়কেও।  

৫ নম্বর সড়কের বিভিন্ন দেয়াল এবং ল্যাম্পপোস্টে ঢাকা-১৭ আসনে নৌকা প্রতীকে এমপি পদপ্রার্থী মেজর (অব.) দেলোয়ার এইচ খানের নামে পোস্টার টানানো হয়েছে। পোস্টারে তার পদ উল্লেখ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে। এই প্রার্থীর নামেও পোস্টার টানানো হয়েছে ঢাকা-১৭ আসনের জনগণের পক্ষে। নৌকা প্রতীকের বাইরে বনানীর কিছু এলাকায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ব্যানারে ববি হাজ্জাজের নামে পোস্টার টানানো হয়েছে। তবে এসব পোস্টার কার পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে সেসব কিছু লেখা নেই। শুধু বনানী, গুলশান, মহাখালী নয় রাজধানীজুড়েই চোখে পড়ে বিভিন্ন দলের এমপি পদপ্রার্থীদের পোস্টার। রাজধানীর রামপুরা, জনসন রোড ও বাড্ডা এলাকায় ঝুলছে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের নামে ব্যানার-পোস্টার। অন্যদিকে মিরপুর ১১, পূরবী সিনেমা হল ও ইসিবি চত্বর পর্যন্তও ছেয়ে গেছে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের ব্যানার পোস্টারে। উত্তর বাড্ডা এলাকার বাড়ির মালিক শফিক উদ্দিন বলেন, দিনের বেলা পোস্টার লাগাতে বাধা দেওয়ায় রাতে এসব পোস্টার লাগিয়ে যায়। সারা বছর বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে লাগাত কিন্তু এখন সব পোস্টারই বিভিন্ন দলের এমপি পদপ্রার্থীদের। ব্যানারে ঢেকে গেছে ফুটওভার ব্রিজের ফুল গাছগুলো। ফার্মগেট এলাকায় বেশি চোখে পড়ে বিভিন্ন ভর্তি কোচিংয়ের বিলবোর্ড এবং পোস্টার। এ ছাড়া ফুটপাথে টুল পেতে বসে ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বই, প্রশ্নব্যাংক বিক্রি তো চলছেই। এসব বিলবোর্ড, ব্যানার পোস্টার অপসারণে মাঝে মাঝে দুই সিটি করপোরেশন অভিযান চালালেও নিয়মিত না হওয়ায় কারওয়ান বাজার এলাকায় যেদিকে তাকানো যায় চোখ আটকে যায় থোকা থোকা বাদুড়ঝোলা তারে। বিদ্যুতের, ডিশ লাইনের, ইন্টারনেটের বিভিন্ন রকমের গোলপাকানো তারে ঘুরপাক খায় চোখ। আর নিচের দিকে তাকালে চোখে পড়ে কাঁচাবাজারের পচা সবজি, মাছ, মুরগির উচ্ছিষ্ট অংশ, ড্রেনের পাশে তুলে রাখা ময়লার স্তূপ। ইট-কাঠে চাপা লালচে শহরে চোখ সওয়া হয়ে গেছে এসব। তাই দৃশ্যদূষণের প্রবণতা বাড়লেও প্রতিরোধে নেই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে নগরবিশ্লেষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা এসব বিলবোর্ড অপসারণে মেয়র আনিসুল হক ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিমানবন্দর সড়কে উঁচু দেয়াল ভেঙে সবুজ দেখার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এখন এসব উদ্যোগ থমকে গেছে। ব্যানার, পোস্টারে ঢেকে গেছে ঢাকা। খোলা সবুজ পরিবেশ দেখার বদলে দৃশ্যদূষণে ভুগছে রাজধানীবাসী।

 

সর্বশেষ খবর