মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সড়কবাতিতে ঝলমলে উত্তর সিটি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সড়কবাতিতে ঝলমলে উত্তর সিটি

রাতের ঢাকা নান্দনিক হয়ে উঠেছে এলইডি সড়কবাতিতে। নতুনবাজার ও মহাখালী থেকে তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

সন্ধ্যা নামলেই রাস্তায় জ্বলে উঠছে ঝকঝকে সড়কবাতি। অন্ধকারাচ্ছন্ন হলদে আলোর বদলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো আলোকিত হচ্ছে এলইডি বাতিতে। পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাজধানীর বারিধারা, গুলশান, বনানী, কুড়িল থেকে মালিবাগ রেলক্রসিং, মহাখালীসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু সড়কে লাগানো হয়েছে এসব এলইডি বাতি।

প্রকল্প পরিচালক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডিএনসিসির নিজস্ব অর্থায়নে ২৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে আলোকায়নের একটি পাইলট প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পে মোট ৩ হাজার ৩৪৩টি বাতি লাগানো হবে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার ১০০টি সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। মেয়র আনিসুল হক ঢাকাকে আলোকিত করার প্রত্যয় নিয়ে এ প্রকল্পের পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন। জননিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি চিন্তা করে আমরা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। ৫৪টি দেশি-বিদেশি কোম্পানির উপস্থাপনা দেখার পর যাবতীয় বিষয় আলোচনা করে একটি কোম্পানিকে নির্ধারণ করা হয়েছে। আলোতে পথচারী এবং চালকদের চোখের যেন ক্ষতি না হয় সে বিষয়টিতে খেয়াল রেখে এই সড়কবাতি নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টির উপস্থাপনায় আনিসুল হক নিজে উপস্থিত ছিলেন। যাবতীয় বিষয় পর্যালোচনা করে জার্মানির ভালকান কোম্পানির বাতি লাগানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ১০ বছরের ওয়ারেন্টি এবং রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এই কোম্পানির সঙ্গে। অন্য সিটি করপোরেশনের চেয়ে অনেক কম খরচে টেকসই এবং যুগোপযোগী বাতি লাগানো হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় গুলশান, বনানী, বারিধারার পুরো এলাকা, বনানী থেকে সার্ক ফোয়ারা, কাকলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিজয় সরণি হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউর দুই পাশ, আসাদ গেট থেকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের উত্তর সিটি করপোরেশনের শেষ সীমানা পর্যন্ত এ সড়কবাতি লাগানো হচ্ছে।

এ ছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মালিবাগ রেলক্রসিং, নতুনবাজার থেকে কাকলী, বাড্ডা লিংক রোড হয়ে গুলশান-১ দিয়ে মহাখালী আমতলী পর্যন্ত এই এলইডি বাতি লাগানো হচ্ছে। সেন্ট্রাল মনিটরিং সিস্টেমের আওতায় এই সড়কবাতি জ্বালানো, আলোর পরিমাপ কমানো এবং নেভানোর কাজ করা হবে। কোনো বাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা পৌঁছে যাবে।

নতুনবাজার থেকে নিয়মিত শাহজাদপুরে যাতায়াত করেন সোহেলী মাহবুব। তিনি বলেন, আমি প্রতিদিন অফিস শেষে এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরি। আগে লাল আলোতে পুরো রাস্তা আবছা হয়ে থাকত। মানুষের মুখ পরিষ্কার দেখা না যাওয়ায় বেশ কয়েকবার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে এখানে। কিন্তু এখন সড়কবাতির ঝকঝকে আলোতে রাস্তায় একটা আলপিন পড়ে থাকলেও দেখা যাবে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ডিএনসিসির আওতাভুক্ত এলাকা আলোকিত করতে সরকার এবং ডিএনসিসির অর্থায়নে নতুন আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। এর আওতায় মোট ৪২ হাজার ৪৫০টি বাতি স্থাপন করা হবে।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মোট ৪৪২ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি একনেকে পাস করা হলেও প্রকল্পে রাস্তায় ৫ হাজার ক্যামেরা সংযোজন করার কথা থাকায় নতুন করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সার্ভার রুমসহ আনুষঙ্গিক মোট ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয় করবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তাই নতুন করে পাঠানো প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখায় রয়েছে।

প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই শেষে একনেকে পাঠানোর পর পাস হলেই এসব আধুনিক সড়কবাতি লাগানোর কাজ শুরু হবে। এর আগে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে অন্য সিটি করপোরেশনগুলোর পাশাপাশি ডিএনসিসিতেও একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা এলাকায় প্রায় ২ হাজার সড়কবাতি লাগানো হয়েছে।

সড়কবাতি সংযোজনের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. জামাল মোস্তফা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অত্যাধুনিক এবং স্বাস্থ্যসম্মত সড়কবাতি হিসেবে এগুলো সংযোজন করা হচ্ছে। এই বাতিগুলো ৭০ শতাংশ দুর্বল হয়ে গেলেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে বার্তা পৌঁছে যাবে। ফলে কখনই আলোকস্বল্পতায় ভুগতে হবে না নগরবাসীকে। নগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তায় গ্রহণ করা এই প্রকল্পে আমরা বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি।

সর্বশেষ খবর