মঙ্গলবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

নিষ্ফল উচ্ছেদ অভিযান

জয়শ্রী ভাদুড়ী

নিষ্ফল উচ্ছেদ অভিযান

কয়েকদিন আগেই অবৈধ দখলমুক্ত করেছিল সিটি করপোরেশন। আবার সেই পুরনো চিত্র। রাজধানীর গুলিস্তান মোড় ও মিরপুর মাজার রোড থেকে গতকাল তোলা ছবি জয়ীতা রায়

উচ্ছেদের এক মাস পার না হতেই আবারও রাস্তায় ফলমূূল, সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। মিরপুর মাজার রোডে রাস্তার অধিকাংশ এখন দোকানিদের দখলে। মাসখানেক আগেই এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযান চালায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কিন্তু পরবর্তীতে দখল ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আবারও দখল হয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকৃত ফুটপাথ ও রাস্তা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২৭৯ দশমিক ৩২৩ শতাংশ সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করেছি। মৌজা রেট অনুযায়ী এই জমির মূল্য ২৮০ কোটি ৪৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৬ টাকা। রাজধানীর সেনপাড়া পর্বতা এলাকা, বনানী আবাসিক এলাকা ও ভাটারা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর আবাসিক এলাকা, রামচন্দ্রপুর, কারওয়ান বাজার, সরাইজাফরাবাদ, শেরেবাংলা নগর এলাকায় এসব উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ডিএনসিসি’র প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের নেতৃত্বে আমরা অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি। এর মধ্যে বেশকিছুতে আমাদের জীবনের ঝুঁকিও ছিল। উচ্ছেদ অভিযানের সফলতা হিসেবে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সড়ক এখন মানুষ ব্যবহার করতে পারছে। প্রয়াত মেয়রের স্মৃতি স্মরণে এই সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে মেয়র আনিসুল হক সড়ক। এ ছাড়া গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা পার্কিংমুক্ত, দূতাবাস এলাকার ফুটপাত অবমুক্ত করা, মোনায়েম খানের পরিবারের সদস্যদের দখলে থাকা জায়গাসহ অসংখ্য রাস্তা। প্রতি মাসেই উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চলগুলোতে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।’

সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও থেমে নেই দখল। রাস্তা এবং ফুটপাথ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হওয়ার সপ্তাহ পার না হতেই আবার আগের অবস্থায় রূপ নেয়। সরেজমিন রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় দেখা যায়, জামা, জুতা, গেঞ্জি, মোবাইলের চার্জার, হেডফোন, বই থেকে শুরু করে আয়না-চিরুনিরও দোকান রয়েছে ফুটপাথের ওপরে। এসব দোকানের কারণে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে যাত্রীদের। এই এলাকায় প্রায় প্রতি মাসেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু অভিযান শেষ হতেই আবার বসে পড়ের হকাররা। হকারদের দৌরাত্ম্য কমাতে ফুটপাথে সীমানা প্রাচীর দিয়েও লাভ হয়নি। মিরপুর কমার্স কলেজের পাশের হাজী রোডের ফুটপাথ অবমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছিল সিটি করপোরেশন। ওই রাস্তা প্রসারিত করার পাশাপাশি ফুটপাথ আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন করে সিটি করপোরেশন। কাজ শেষ করার দুই মাস পার হতেই ফুটপাথের টাইলস সরিয়ে গর্ত করে বসানো হয়েছে চায়ের দোকান।

ফুটপাথের ওপরে দোকান দিয়ে পাশে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে চেয়ার-টেবিল। দোকানের কারণে পথচারীদের ফুটপাথ থেকে নেমে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আশপাশের বেশ কয়েকটি স্কুলের শিশুরা এই ফুটপাথ ব্যবহার করে যাতায়াত করে। ফুটপাথ দখল করে দোকান দেওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে শিশুরা। 

গতকাল সন্ধ্যায় ফার্মগেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাথে দোকানিদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। বরইয়ের আচার, রুমাল, বেল্ট থেকে শুরু করে কী নেই সেখানে। ফুটপাথের অবস্থা পরিণত হয়েছে মাছের বাজারে। এই ভিড়ের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে পকেটমাররা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ পকেটমার পকেটমার চিৎকার ভেসে আসে আনন্দ সিনেমা হলের উল্টোদিকে মার্কেটের সামনে থেকে। কাছে গিয়ে দেখা যায়, ভিড়ের মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ থেকে নামতেই পেছন থেকে ধাক্কা অনুভব করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ফয়সাল হায়দার। তাকে ধাক্কা মেরে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায় এক যুবক। 

একটু ধাতস্থ হয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখেন মানিব্যাগ উধাও। কিছু দূরে ওই ছেলেটাকে যেতে দেখলেও ফুটপাথে থাকা হকার আর মানুষের ভিড়ে ধরতে পারেননি তিনি। এই রাস্তায় প্রতিদিন যাতায়াত করেন শামসুন্নাহার। তিনি বলেন, এখানে এই ভিড়ের সুবিধা নিয়ে প্রায়ই ঘটে এরকম ঘটনা। প্রতি মাসেই হকারদের উঠিয়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু পরের দিনই আবার বসে তারা। এটার একটা স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. জামাল মোস্তফা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা অবৈধ দখলদারে বিরুদ্ধে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করি। তবে হকারদের কারণে ফুটপাথ ও রাস্তা দখলমুক্ত রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। ফুটপাথ ও রাস্তা দখলমুক্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর