বৃষ্টিভেজা প্রকৃতিতে হাজির হয়েছে ঋতুরানী শরৎ। এনেছে দিগন্তজোড়া কাশবন, মাতাল হাওয়া, নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর চারপাশে থইথই করা জলে শাপলা-কমলের জলকেলি। এ যেন দারুণ এক উৎসব। তার ওপর দুর্গাপূজার আয়োজন প্রভাব ফেলে গোটা বাঙালির ওপর। শরৎ ঋতুর এমন দিনে দুর্গা মায়ের আগমনে পূজার আনন্দে নেচে ওঠে মন...
পূজা নিয়ে নিজেকে সাজানো এবং সুন্দর দেখানোর জন্য নিশ্চয়ই অনেক ধরনের তোড়জোড় শুরু হয়। নিজেকে যেন আরেকটু সুন্দর লাগে- তা নিয়ে নানা ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ, থাকে নানা ধরনের পরিকল্পনাও। তবে সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা একেকজনের কাছে একেক রকম। কেউ আছে শ্যাম বর্ণের কিংবা গায়ের রঙ বেশ কিছুটা চাপা ধরনের; তাদের অনেকের কাছে সৌন্দর্য মানে নিজেকে ফর্সা দেখানো। কিন্তু এটা আসলে কতটা ভালো, কতটা আশীর্বাদস্বরূপ, তা মোটেও ভাবনায় থাকে না। সৌন্দর্য মানে নিজের মধ্যে যা আছে তা আরও সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা। এমনটা নয় যে আমাকে ফর্সা হতে হবে, আমার চোখ বড় হতে হবে, চুল সোজা হতে হবে, ত্বকে কোনো ব্রণ থাকতে পারবে না, থাকবে না কোনো কালশিটে। মূলত সৌন্দর্য হলো- নিজেকে পরিপাটি করে রাখা। নিজেকে গুছিয়ে রাখা। নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। নিজের মধ্যে যা আছে তা আরো ভিতর থেকে সুন্দর করে তোলা। তার নামই সৌন্দর্য। তাই নিজের রূপকে বদলে নয়, নিজের রূপের মাঝেই সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে হবে। শ্যামা মাও মা দুর্গার আরেক প্রতীক। মা দুর্গার প্রতীক তাই কালো রঙকে অবহেলা নয়, ঘৃণা নয়, লজ্জা নয়। বরং নিজের রঙের মাঝেই সৌন্দর্য খুঁজুন। সেই রঙকে ফুটিয়ে তুলুন। ফুটিয়ে তুলুন নিজের মধ্যেই।
বাঙালিদের পুজো। অন্তত তিন দিনের জন্য হলেও সকাল-বিকাল নানা ঢঙে সাজা। পুজো প্যান্ডেলেই সবাই মিলে ল্যাকপেকে কাঠের চেয়ারে বসে বসে আরতির ঢং ঢং শোনে, ঢাকের বাদ্যি শোনে, সন্ধ্যে কাটিয়ে অন্যরকম চোরা চাহনি। সবই লুকানো প্রেম। আসলে বাঙালির পুজো মানে প্যান্ডেলে সেজে ওঠা মা, মায়ের চারটি ছা, এমনকি সবুজ রঙের মহিষাসুর- সবার আবার একটি করে বাহন। প্রত্যেককে আলাদা করে লক্ষ্য করতে হয়, দেখতে হয়, মন দিয়ে। বাড়ি ফিরে আলোচনা করতে হয়। এত বড় দলবল বেঁধে মা আসেন, প্রায় এক মিছিল। মনে আনন্দের জোয়ার।
মূলত শরতের শুরু থেকেই চারদিকে পূজার আমেজ পাওয়া যায়। নীল আকাশ, ভোরে ঝরে পড়া শিউলি ফুল আর নদীর ধারের কাশফুল- এই সবকিছুর সঙ্গে যোগ হয় পূজার আনন্দ। আর কিছুদিন পরই শুরু হবে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মূলত মহালয়া থেকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর ষষ্ঠী থেকে শুরু হয়ে দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয় পূজার আনুষ্ঠনিকতা। মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা দেখা, ঘোরাঘুরি, ঢাকের বোল, লুচি-পায়েস, নাড়ু খাওয়া এসবের মধ্য দিয়ে ভীষণ আনন্দে কেটে যায় এই পাঁচ দিন। এই আনন্দমুখর দিনগুলোতে সবাই চান বিশেষভাবে নিজেকে সাজাতে।
পোশাকে উৎসবের আমেজ
শরতের এই সময়টাতে দুর্গাপূজার বিষয়টি প্রভাব ফেলে ধর্মবর্ণনির্বিশেষে গোটা বাঙালির ওপরে। তাই শরৎ শুভ্রতায় যখন নিজেকে শুদ্ধি করবেন তখন কিন্তু এ উৎসবও বাদ যাবে না। ষষ্ঠী দিয়ে শুরু হয় পূজা। পূজা পুরোপুরি জমে ওঠে সপ্তমী থেকে। তবে শরতের প্রকৃতিতে কখনো বৃষ্টি, কখনো রোদ, সেই সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। পুজোতেও যদি থাকে এমনই আবহাওয়া? কিন্তু, পুজো মানেই মেয়েদের ক্ষেত্রে কম বেশি সবারই ইচ্ছা থাকে শাড়ি পরার। কিন্তু এই গরমে শাড়ি পরা তো ঝক্কি। রইল এমন কিছু শাড়ির হদিস।
♦ গরমের মধ্যে সিল্কের শাড়ি গরম বাড়ায়; এ ধারণা কিন্তু সম্পূর্ণ সঠিক নয়। সিল্কের কাপড় আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ ভালো মানিয়ে যায়। তবে ভারী শাড়ি পরলে গরম লাগাই স্বাভাবিক। তাই পুজোয় দিনের বেলার জন্য হালকা সিল্কের শাড়ি বেছে নিতে পারেন।
♦ জামদানি শাড়ি এমনিতেই সবার প্রিয়। তবে, ঐতিহ্যবাহী সাজের মধ্যে যদি আধুনিকতার ছোঁয়া রাখতে চান, তাহলে বেছে নিতে পারেন লিনেন জামদানি। লিনেন শাড়ির ওপর জামদানির কারুকাজ মুগ্ধ হওয়ার মতোই। সম্প্রতি বেশ কিছু তারকাও এমন শাড়িতে ধরা দিয়েছেন ক্যামেরায়।
♦ রোদের মধ্যে প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখার জন্য অনেকের কাছেই সুতির শাড়িই শেষ কথা। হ্যান্ডলুমের শাড়ির সঙ্গে পছন্দের সিলভার গয়না দিয়ে কিন্তু পুজোর জন্য তৈরি হয়ে যেতে পারেন অনায়াসেই। এতে দেখতেও বেশ আকর্ষণীয় লাগে। ইচ্ছে হলে এই শাড়ির সঙ্গে স্লিভলেস ব্লাউজও পরতে পারেন।
♦ শিফন শাড়ি বরাবরই জনপ্রিয়। পুজোয় সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করার প্ল্যান থাকলে শিফন শাড়ি হতে পারে প্রথম পছন্দ। এতে দেখতেও ভালো লাগে, সঙ্গে বেশ আরামদায়ক। ফ্লোরাল প্রিন্টের ব্লাউজ দিয়ে এই শাড়ি পরলে বেশ সুন্দর লাগে। চাইলে সাদা শাড়িও বেছে নিতে পারেন। পুজোর দিনে সাদা শিফন হতে পারে অন্যরকম পছন্দ।
পূজায় বাঙালি নারীর প্রিয় পোশাক শাড়ির পাশাপাশি এবার কুর্তা, সালোয়ার কামিজের কদর রয়েছে। পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাক অথবা দেশি পোশাকের সঙ্গে পাশ্চাত্য ঘরানার মিশেলে ফিউশন বেছে নিতে পারেন। পূজার সময় একেকদিন একেক ধরনের পোশাক বেছে নিতে দেখা যায়। দাওয়াতে জমকালো কোনো শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ পরলেও অতিথি আপ্যায়ন বা মন্ডপে ঘোরার জন্য বেছে নিতে পারেন আরামদায়ক কুর্তা বা টপস। শরতের শুভ্রতার সঙ্গে মিল রেখে সাদার ওপর নকশা করা পোশাক বেছে নিতে পারেন যে কোনো দিন। লাল, কমলা, সবুজ এ রকম রঙিন পোশাকও পরতে পারেন নিজের পছন্দমতো। তবে দশমীতে লাল পাড়ের সাদা শাড়ির অন্যরকম আবেদন রয়েছে সবসময়। বিভিন্ন কাটছাঁটের বাহারি ব্লাউজ দেখা যাবে এবার পূজায়। শাড়ির সঙ্গে নিজের ব্যক্তিত্ব ও পছন্দের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের ব্লাউজের ডিজাইন করতে পারেন। অনলাইন বা দোকানে অনেক ডিজাইনের ব্লাউজও পাওয়া যায়। সাধারণ শাড়ির সঙ্গে স্টাইলিশ ব্লাউজ আজকাল বেশ ট্রেন্ডি। বিশেষত টিনএজাররা এই ব্লাউজ পছন্দ করছেন।